তিস্তা নদীর হাঁটুপানিতে নেমে প্রদর্শন করা হলো প্ল্যাকার্ড। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হলো কঠোর প্রতিবাদ। বাংলাদেশ বঞ্চিত ন্যায্য হিস্যা থেকে। পানির অভাবে বাংলাদেশের নদী নালা ধু ধু বালুচরে রূপান্তরিত। পানির অভাবে ফসল পাচ্ছে না কৃষক। ভারতের এমন এক তরফা নীতি ও আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার উত্তরের পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে একযোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘ভারত যদি আমাদের পানির ন্যায্য অধিকার না দেয়, তাহলে দেশের সবাইকে সাথে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করব এবং জাতিসংঘের কাছে যাব।’
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার ও ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ডাকে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব (দুলু)। মূলত বিএনপির উদ্যোগে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হলো লালমনিরহাট সদর, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জের দুটি স্থানে এবং আদিতমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর, নীলফামারীর ডিমলা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নদীপারের হাজারো বাসিন্দা কর্মসূচিতে অংশ নেন। কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সমমনা সংগঠনগুলোও।
আগের দিন অর্থাৎ গত সোমবার দুপুরে উত্তরের ১১টি পয়েন্টে একযোগে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর শুরু হয় জনসমাবেশ।
প্রতিটি পয়েন্টে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তিস্তাপারের মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভাওয়াইয়া ও পালাগানের আসর। মঞ্চস্থ করা হয় ‘তিস্তাপারের সুখ-দুঃখে’ নাটিকা। অনুষ্ঠান শেষে নারীরা বাড়ি ফিরলেও পুরুষেরা তাঁবুতেই রাত যাপন করেন।
দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বেলা ১১টায় একযোগে ১১টি পয়েন্টে পৃথকভাবে পদযাত্রা করে তিস্তাপারের লাখো মানুষ। পদযাত্রা শেষে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে তিস্তা নদীর হাঁটুপানিতে নেমে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’, ‘তিস্তার পানির ন্যায্যা হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই’, ‘নদী আমার মা, নদী মরতে দিব না’। সোমবারের মতো মঙ্গলবারও ছিল নদীপারে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আয়োজন। এরপর সন্ধ্যায় তিস্তার দুই পাড়ে মশাল প্রজ্বলন করা হয়। সন্ধ্যার পরে প্রতিটি পয়েন্টে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
জনসভায় তারেক রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন মতে তিস্তার পানি আমাদের অধিকার। প্রতিবেশী দেশের অপ্রতিবেশী আচরণের কারণে আজ আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আজ ৫০ বছর হলো ফারাক্কায় পানির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে তিস্তাসহ অনেক নদী এখন ধু ধু বালুচর।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৬ বছরে নদী কমিশনকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে প্রতিবেশী ভারতের স্বার্থে। আমরাও প্রতিবেশী দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই, তবে সেই সম্পর্ক হবে দেশের স্বার্থে। ভারত যদি আমাদের পানির ন্যায্য অধিকার না দেয়, তাহলে দেশের সবাইকে সাথে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করব এবং জাতিসংঘের কাছে যাব।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট যে স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে গেছে, সেই খুনি প্রায়ই বলত, ভারতকে যা দিয়েছি, ভারত তা কোনো দিন ভুলতে পারবে না। আজ ভারত শেখ হাসিনাকে ঠিকই ভুলে যায়নি। ভারতের সম্পর্ক ছিল শেখ হাসিনার সাথে, বাংলাদেশের সাথে নয়।’
সভায় তারেক রহমান বলেন, ‘দু-একজন উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। সে কারণে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন ফ্যাসিবাদ আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হয়। পাশাপাশি সরকার কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত যেন নিতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
তারেক রহমান আরও বলেন, গণতান্ত্রিক দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনের কথা শুনলে অন্তর্বর্তী সরকার বিচলিত হয়ে ওঠে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একেক রকম বক্তব্য খুনি মাফিয়া চক্রের সামনে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ করে দেয়। এ জন্য বিএনপি বারবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তাদের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে।