২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ০১:২১:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু


দেশকে ফাহমিদা নবী
দুই দিনের দুনিয়া, বিনয়ী না হয়ে উপায় কী
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০২-২০২৫
দুই দিনের দুনিয়া, বিনয়ী না হয়ে উপায় কী শিল্পী ফাহমিদা নবী


নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী, যিনি তার মিষ্টি কণ্ঠের মাধ্যমে সঙ্গীতপ্রেমীদের মন জয় করেছেন, এবার নতুন এক পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ চার দশকের ক্যারিয়ারে অজস্র জনপ্রিয় গান উপহার দেওয়া এই শিল্পী এবার বইমেলায় প্রকাশ করেছেন তার প্রথম বই, দফাহমিদা নবীর ডায়েরি। শুধু তাই নয়, ভালোবাসা দিবসে তিনি তার কাল্পনিক ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’-এর সিক্যুয়ালও উপহার দিয়েছেন। দেশ-বিদেশের বড় বড় মঞ্চে নিজের মেধার ছাপ রেখে চলা এই শিল্পী এবার তার নানা অভিজ্ঞতা, সঙ্গীত ক্যারিয়ার এবং বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: সঙ্গীতের পাশাপাশি এবার লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। আপনার প্রথম বই ‘ফাহমিদা নবীর ডায়েরি’ প্রকাশিত হয়েছে। লেখালেখিতে আপনার অনুপ্রেরণা কী ছিল এবং বইটি লেখার সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলেন?

ফাহমিদা নবী: লেখালেখি শুরু করার একটা বিশেষ কারণ ছিল, তা হলো কভিড-১৯ এর সময়টা। সেই সময়ে ঘরবন্দি অবস্থায় আমি নিয়মিত ডায়েরি লিখতাম। শুরুটা ছিল অনেকটা ব্যক্তিগত অনুভূতি ও ভাবনা প্রকাশের জন্য। সেই লেখাগুলো যখন ফেসবুকে শেয়ার করতাম, অনেক পাঠক প্রতিক্রিয়া জানাতেন। তারা বলতেন, এসব লেখার মধ্যে এক ধরনের শান্তি এবং সহানুভূতির ভাব রয়েছে। এই প্রতিক্রিয়া থেকেই লেখার প্রতি আরও আগ্রহ তৈরি হয়। 

এছাড়াও, গীতিকার জুলফিকার রাসেল আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, কিছু কলাম লেখার জন্য। সেই কলামগুলোরও ভালো সাড়া মিললো। এরপরই প্রকাশকদের কাছ থেকে বই প্রকাশের প্রস্তাব আসতে শুরু করলো। প্রথমে আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু পরবর্তী সময়ে একজন সাংবাদিক এসে আমাকে পুরো পাণ্ডুলিপি দিয়ে বই আকারে প্রকাশের জন্য অনুপ্রাণিত করেন। আসলে আমার কাছে লেখালেখি একটা সৃজনশীল অভিব্যক্তি এবং এটি আমার আরেকটি দিক প্রকাশের সুযোগ এনে দিয়েছে।

প্রশ্ন: বইমেলায় নিয়মিত যাচ্ছেন? সেখানকার পাঠকদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিজ্ঞতা কেমন?

ফাহমিদা নবী: প্রায়ই তো যাচ্ছি। আসলে পাঠকদের সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানতে ভালো লাগে। অটোগ্রাফ দেওয়ার পর অনেকে বলেন, আমি খুব বিনয়ী। তাঁদের বলি, দুই দিনের দুনিয়া। বিনয়ী না হয়ে উপায় কী!

প্রশ্ন: ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ গানের সিক্যুয়াল আসার পর, অনেকেই জানতে চান কীভাবে আবার সেই বিশেষ গানটি ফিরে এল? ১৮ বছর পর সিক্যুয়াল তৈরি করতে গিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী ছিল?

ফাহমিদা নবী: ১৮ বছর পর ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ গানটির সিক্যুয়াল তৈরি করা ছিল একটা চ্যালেঞ্জ এবং একসাথে এক ধরনের আবেগের বিষয়। প্রথম গানটি তৈরি হওয়ার পর থেকে অনেকেই চাইছিলেন যে, এর সিক্যুয়াল হোক। তবে সঠিক সময়, সঠিক অনুভূতি পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা ‘লুকোচুরি অলিগলি’ খুঁজছিলাম, কিন্তু সেটা খুঁজতে খুঁজতে এত বছর পার হয়ে গেল যে, সময়টা আসলেই দ্রুত চলে গেছে। অনুভূতির দিক থেকেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম গানটির মতো একই রকম অনুভূতি ছিল না, তবে এই নতুন সিক্যুয়ালটিও নিজের জায়গায় একদম আলাদা। গানটির সুর, কথা, সব কিছুই নির্ঝর এবং দেবজ্যোতির হাতে নতুনভাবে রচিত হয়েছে। এর মাঝে নানা পরিবর্তন এবং চেষ্টা ছিল, এবং সবার ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণায় গানটি তৈরি হতে পেরেছে। এখন পর্যন্ত যাঁরা শুনেছেন, তারা সবাই পছন্দ করেছেন। এটি এক ধরনের প্রশান্তি এবং তৃপ্তি এনে দিয়েছে, যা অনেকেই আমাকে বলেছেন।

প্রশ্ন: প্রথম গানটির পেছনের গল্পটা জানালে কেমন হয়? বিশেষ করে যে মুহূর্তে আপনি অনুভব করেছিলেন, এটি বিশেষ কিছু হতে যাচ্ছে।

ফাহমিদা নবী: ২০০৫ সালের কথা। এনামুল করিম নির্ঝর আমাকে ফোন করলেন। ‘লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প’ গানটি পাঠালেন। বললেন, আমাকে গানটি গাইতে হবে। শুনলাম, প্রথমবারেই একটু অবাক লাগল। নির্ঝর বললেন, সিনেমার গান। সাধারণত সিনেমার গান বলতে যেমন বোঝায়, এই গানটির কথা ও সুর তেমন নয়। একটু অন্য রকমের। আমার খুব ভালো লাগল। কণ্ঠে তুললাম। এরপর এক বছর কেটে গেল। নির্ঝরের আর খোঁজ নেই। ভাবলাম, গানটা হবে না। হঠাৎ ২০০৬ সালের দিকে ফোন, নির্ঝর জানালেন সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র ঢাকায় এসেছেন। ফোয়াদ নাসের বাবু ভাইয়ের স্টুডিওতে গানটির রেকর্ডিং। সেগুনবাগিচার সেই স্টুডিওতে গেলাম। বাবু ভাই রেকর্ডিংয়ের সময় মিটিমিটি হাসছিলেন। বুঝলাম, ভালো গেয়েছি। এইভাবে গানটি জন্ম নিল এবং সেই বছরেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করল।

প্রশ্ন: গানটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, এই গানের শিরোনামে দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটকও নির্মিত হয়েছিল। সিক্যুয়ালটি কি সেই সীমা ছুঁতে পারবে?

ফাহমিদা নবী: এটা বলা কঠিন। আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। গানটি করতে আমাদের ১৮ বছর লেগে গেল। তার মানে একবার ভাবুন, সিক্যুয়ালটি করতে কতবার চেষ্টা করেছি! নির্ঝর লিখেছেন, ছিঁড়ে ফেলেছেন, দেবজ্যোতি দাদা সুর করেছেন, পরিবর্তন করেছেন। প্রচারেই প্রসার। এখন সিক্যুয়ালটি প্রচার করতে হবে। তাহলে দর্শকের কাছে পৌঁছাবে।

প্রশ্ন: আপনার চার যুগের গানের ক্যারিয়ারে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কিছু বলতে চাইলে?

ফাহমিদা নবী: প্রত্যেকের মধ্যেই অতৃপ্তি থাকে। সবাইকে অতৃপ্তি নিয়েই যেতে হবে। যখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সিনেমার গানে নিয়মিত ডাক পাব। কিন্তু হলো উল্টোটা। একদমই ডাক পেতাম না। তাই বলে কি থেমে যাব? আমি থেমে যাওয়ার মানুষ নই। অডিওতে নিয়মিত কাজ করে গেলাম। পাওয়ার চেয়ে প্রত্যেকটা মানুষের না পাওয়ার পাল্লাটাই ভারী হয়। তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। এমন কিছু রেখে যেতে হবে যেটা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সম্পদ হয়ে থাকবে।

প্রশ্ন: যুগে যুগে গানের ধরন, প্রকাশের প্ল্যাটফর্মসহ নানা পরিবর্তন এসেছে। নিজেকে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন কিভাবে?

ফাহমিদা নবী: আমি ভীষণ পজিটিভ মানুষ। ২০০৬ সালের কথা, রবীন্দ্রসরোবরে ‘এক মুঠো গান’ গান গাওয়ার সময় শ্রোতারা প্লাস্টিকের বোতল ছুঁড়ে মেরেছিল। তবে আমি একরোখা, গানটি গেয়েই তারপর স্টেজ ছেড়েছিলাম। দেখেন, মাত্র সাত-আট মাসের ব্যবধানে ‘এক মুঠো গান’-এর পুরো অ্যালবামটাই শ্রোতারা লুফে নিয়েছিল। এখন তো টিকটকের যুগ। আমি টিকটক করলে কি শ্রোতারা মেনে নেবে? অবশ্যই না। তারা আমাকে শাড়ি পরে গান পরিবেশন না করলে শুনবেই না। এমনও হয়েছে, কোনো শুটিংয়ে গিয়েছি, ফুল নিতে ভুলে গিয়েছি। শুটিং স্পট থেকেই ওরা জোগাড় করেছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, আমাকে নাকি ফুল ছাড়া মানায় না। তার মানে আমি নিজের একটা স্বতন্ত্র সত্তা তৈরি করতে পেরেছি। যতই গানের ধরন বদলাক, প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম বদলাক, নিজের স্বকীয়তা থাকলে টিকে থাকা যাবে।

শেয়ার করুন