৭ ডিসেম্বর ভাঙচুরের ঘটনার পর ১০ ডিসেম্বর স্বেচ্ছাসেবীরা একত্রে কাজ করে নরফোকের মাসজিদ আশ শুরাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে দেন
ভার্জিনিয়ার নরফোক শহরে অবস্থিত মাসজিদ আশ শুরাতে ভাঙচুরের ঘটনার পর স্থানীয় প্রতিবেশী, স্বেচ্ছাসেবক ও মসজিদের সদস্যরা একত্রিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেওয়াল পরিষ্কার ও নতুন করে রং করার কাজে অংশ নিয়েছেন। গত ১০ ডিসেম্বর সকালে হাতে তুলি ও রোলার নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা মসজিদের দেয়ালে আঁকা কালো রঙের খ্রিস্টান ক্রসের চিহ্ন ঢেকে দেন, যা কয়েকদিন আগে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে এঁকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ জানায়, নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে ৭ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯টা ২০ মিনিটে ৩০ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি মসজিদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত কালো রঙের একাধিক ক্রস আঁকেন। ঘটনার পর থেকে পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে জনসাধারণের সহায়তা চেয়েছে।
মসজিদের ইমাম হেশাম সাব্বাহ জানান, আশির দশক থেকে এই মসজিদটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে এবং দীর্ঘদিন ধরে কোনো হুমকির মুখে পড়তে হয়নি। তিনি বলেন, এটি হতাশাজনক, কারণ আমরা মনে করছিলাম সম্প্রদায়গত নিরাপত্তা ও শান্তির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।নরফোকের কমনওয়েলথ অ্যাটর্নি রামিন ফাতেহি বলেন, ঘটনাটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘৃণাজনিত অপরাধ (হেট ক্রাইম) হিসেবে চিহ্নিত হয়নি, তবে সেই সম্ভাবনাও নাকচ করা হয়নি। তিনি ব্যাখ্যা করেন, কোনো ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে জাতি, ধর্ম, বংশ, জাতীয়তা, যৌন পরিচয়, লিঙ্গ বা প্রতিবন্ধিতার ভিত্তিতে ভয়ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করা হলে সেটি হেট ক্রাইম হিসেবে গণ্য হতে পারে।
এফবিআইয়ের অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে নরফোকে ২০টি ঘৃণাজনিত অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে, যার বেশিরভাগই জাতিগত বিদ্বেষ থেকে সংঘটিত, এরপরেই রয়েছে ধর্মভিত্তিক বিদ্বেষ। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এই পরিসংখ্যান প্রকৃত ঘটনার সম্পূর্ণ চিত্র তুলে ধরে না। কারণ সব বৈষম্যমূলক অপরাধ হেট ক্রাইম হিসেবে নথিভুক্ত হয় না। স্থানীয় বাসিন্দা নোয়েল ইয়াং জানান, কমিউনিটি গ্রুপের মাধ্যমে ঘটনার খবর পেয়ে তিনি মসজিদে এসে রং করার কাজে অংশ নেন। তিনি বলেন, একজন মানুষ এমন অপরাধ করতে পারে, কিন্তু আমরা বাকিরা চুপ করে বসে থাকবো না। একজন ভালো প্রতিবেশী হিসেবে পাশে দাঁড়ানোই আমাদের দায়িত্ব।
ইমাম সাব্বাহ আরো বলেন, এ ঘটনা মসজিদের মনোবল ভাঙতে পারবে না। আমরা আগুনের জবাব আগুন দিয়ে দিই না। তিনি বলেন, আমরা আগুনের জবাব দিই পানি দিয়ে, এটাই প্রজ্ঞা। পুলিশ জানিয়েছে, আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাচ্ছে না, ফলে অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে তারা সাধারণ মানুষের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।