৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৫৬:৩৭ অপরাহ্ন


এ বছরেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০২-২০২৫
এ বছরেই ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচন কমিশন ভবন


এ বছরেই হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। এবং সেটা এ বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানাচ্ছে সংশিলিষ্ট সূত্র। বিএনপি অব্যাহত ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ চেয়ে আসছে, রোডম্যাপ চেয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকারের সূচনালগ্ন থেকে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারও তাদের সংস্কার সম্পন্ন করার পর নির্বাচনের দিনক্ষণ জানাবেন বলে বলে আসছিলেন। সংস্কার হওয়ার দুই ধরনের সময় প্রয়োজন। একটা হলো স্বল্প সময়ের জন্য, অন্যটি দীর্ঘমেয়াদে। অবশেষে ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভব্য সংস্কার সম্পন্ন করার পরই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। চলছে ভোটার হাল নাগাদ কার্যক্রমের কাজ। 

গত বছরের জানুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। শেখ হাসিনা ওই নির্বাচনে সকল দলের দাবি ও বন্ধুভাবাবন্ন ও সাহায্যকারী দেশসমূহের চাহিদা উপেক্ষা করে এক তরফা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখে। এতে বিরোধী দলসমূহ অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগের মূল ও আওয়ামী লীগেরই আরেক গ্রুপ সেটাও ঠিক করে দেয় শেখ হাসিনা। যারা ডামি প্রার্থী নামে অভিহিত হয়। এ দুইগ্রুপের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল কিছু আসনে। বেশিরভাগ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যাতে হাসিনার পছন্দের প্রার্থী পাস করতে কোনো সমস্যা হয়নি।

গণতন্ত্র নির্বাসনে পাঠিয়ে শেখ হাসিনার ইচ্ছামাফিক ওই এক তরফা মার্কা নির্বাচন মূলত শুরু ২০১৪ সন থেকেই। চলে আসে টানা ২০২৪ এও। এভাবেই ২০২৪ সনের নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুল আসনে জয় করে ক্ষমতা নিশ্চিত করে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। 

ক্ষমতার দাপটে বিরোধী দলের উপর দমনপীড়ন অব্যাহতও রাখেন তিনি এরই মধ্যে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য হাল ছেড়ে দেয়। অনেকটাই নিষ্ফল আন্দোলন নিয়ে চুপসে যেতে বসেছিল, ঠিক সে মুহূর্তে কোঠা বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্ররা সোচ্চার হন। সেটাই শেষ পর্যন্ত ৯ দফা থেকে এক দফায় পরিণত করে ব্যাপক হত্যাকান্ড পরিচালিত করেও ক্ষমতা টিকিয়ে না রাখতে পেরে ইতিহাসে একটা নজির স্থাপন করে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা ভারতে। ৫ আগষ্টের ওই পালায়ন শুধু শেখ হাসিনার একারই নয়। তার পরিবার, পরিজন, নিকটাত্মীয় থেকে শুরু শুভাকাঙ্খিরাও। কিন্তু দেশে থেকে যায় অগনিত তথা কোটি কোটি আওয়ামী সমর্থক ও নেতাকর্মী। যাদের অনেকেই দীর্ঘ ১৬ বছরে আওয়ামী দাপটে অন্ধ হয়ে যে নির্যাতন, জুলুম অত্যাচার করে, এখন অনেকেই তার খেসারত গুণছে।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি ওঠে। কিন্তু এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ দিতে পারেননি। অবশেষে ১০ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমনটা প্রতিশ্রতি দেন বলে জানান মির্জা ফখরুল। এ ছাড়াও বিভিন্ন সূত্র থেকেও জানা গেছে সরকার মূলত ডিসেম্বর সামনে রেখেই এগুচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে। 

এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভয়ও কাজ করছিল রাজনৈতিক দলসমূহের। সেটা হলো ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করা আর্মিব্যাক ফখরুদ্দিনের সরকার দীর্ঘদিন কাটিয়ে দেন। এরপর সমস্ত রাজনৈতিক দল একত্রে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন আদায় করতে হয়েছিল। ফলে ইউনূস সরকারও সে পথে যায় কিনা সে নিয়ে ছিল টেনশন। তবে সেটার আপাতত অবসান ঘটেছে। যদিও এ ব্যাপারে প্রফেসর ইউনূস নিজেই স্পষ্ট করবেন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মাধ্যমে। 

অন্তর্বর্তী সরকার এককভাবে নির্বাচন দেরিতে দেয়ার জন্য মনস্থির করেছিল এমনটা নয়। সংস্কার কার্যাদি সম্পন্ন করার যে দায়ভার দিয়েছিল ছাত্র জনতা সেটার জন্য কমিশন গঠন, তাদের রিপোর্ট পেশ নানা কাজে সময় লেগে যায়। এরপরও রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ দেরিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উৎসাহী করে অন্তর্বর্তী সরকারকে। এরমধ্যে জামায়াত ইসলামী ছিল অন্যতম। দেরিতে নির্বাচন হলে এরমধ্যে দলটির কোনো ফায়দা লুকায়িত ছিল কি না কে জানে! তবে শেষ পর্যন্ত দলটিও নির্বাচনের কথা মুখে আনে। এবং সবার আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ করে সাংগঠনিকভাবে ঘোষণাও করেছে। যদিও দলটির আমীর জানিয়েছেন, তারা চূড়ান্ত ঘোষণা এখনও দেননি।

বিএনপিসহ অন্যান্য দলও এ প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছেন। বিচ্ছিন্নভাবে বিএনপিও বেশ কয়েকজনকে সিগন্যাল দিচ্ছেন প্রার্থী চূড়ান্তকরণের। কিন্তু সে সংখ্যা খুবই কম। জানা গেছে সহসাই তারা এ কার্যক্রম ব্যাপকভাবেই শুরু করবে।

শেয়ার করুন