যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্ট ৫ মার্চ ইউএসএআইডি ঠিকাদারদের জন্য ওয়াশিংটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের আদেশে নির্ধারিত ২ বিলিয়ন ডলারের অর্থ পরিশোধ এড়াতে ট্রাম্প প্রশাসনের জরুরি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আদালতের এই বিভক্ত সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য বড় একটি ধাক্কা হিসেবে এসেছে। যেখানে সুপ্রিম কোর্ট পূর্বে সম্পাদিত কাজের জন্য বিদেশি সহায়তা সংস্থাগুলোর অর্থ প্রদানের নির্দেশ বহাল রাখে।
৫-৪ ভোটে গৃহীত এই সিদ্ধান্তে ওয়াশিংটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক আমির আলীর আদেশ সমর্থিত হয়েছে, যেখানে মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা এবং পররাষ্ট্র দফতরের গ্র্যান্ট ও কন্ট্রাক্টের আওতায় কাজ সম্পন্ন করা সংস্থাগুলোর দ্রুত অর্থ ছাড় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের সেই উদ্যোগে বাধা সৃষ্টি করেছে, যেখানে বিশ্বব্যাপী মার্কিন মানবিক প্রকল্পগুলো বন্ধের পরিকল্পনা চলছিল। রায় ঘোষণার পর, কনজারভেটিভ বিচারপতি স্যামুয়েল আলিটো বলেন, তিনি আদালতের সিদ্ধান্তে ‘স্তম্ভিত’ হয়েছেন। অন্যদিকে সহায়তা সংস্থাগুলো এই রায়কে তাদের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের বিজয় হিসেবে দেখছে এবং বলছে, এটি বিশ্বব্যাপী চলমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
চারজন রক্ষণশীল বিচারপতি-স্যামুয়েল আলিটো, ক্ল্যারেন্স থমাস, নেইল গরসাচ এবং ব্রেট কাভানফ ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে দাঁড়িয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। বিচারপতি আলিটো মন্তব্য করেন, একটি ফেডারেল আদালতের এমন ক্ষমতা নেই যে তারা নির্বাহী শাখাকে ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধে বাধ্য করবে। এটি সংবিধানের ক্ষমতার ভারসাম্য নীতির ওপর সরাসরি আঘাত হানে। অন্যদিকে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস বলেন, মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি অবহেলা করা যায় না। যদি সরকার চুক্তি অনুযায়ী অর্থ প্রদান না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিচারপতি এলেনা কেগান আরও বলেন, সরকার চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর অর্থ না দিলে, তা আন্তর্জাতিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ণ করবে।
আটকে থাকা অর্থায়নের কারণে ইউক্রেনে সেচ প্রকল্প, নাইজেরিয়ায় জল সরবরাহ ব্যবস্থা, ভিয়েতনাম ও নেপালে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং কেনিয়া, উগান্ডা, ঘানা ও ইথিওপিয়ায় ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো জরুরি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থ না পাওয়ায় অনেক সংস্থা কর্মী ছাঁটাই করেছে; কেউ কেউ কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে ক্ষতিপূরণের মামলার মুখে পড়েছে।
কার্যভার গ্রহণের পর, ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্ক ফেডারেল সরকারের আকার ছোট করার উদ্যোগ নেন, যেখানে ইউএসএআইডি বড় আঘাতের শিকার হয়। অনেক কর্মী চাকরি হারিয়ে ওয়াশিংটন ডিসি অফিস খালি করেছেন। তবে ওয়াশিংটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক আমির আলী বলেন, প্রশাসন আইন লঙ্ঘন করেছে। সংস্থাগুলো বলেছে, কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও অর্থ না দেওয়া আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আলী প্রথমে ১৩ ফেব্রুয়ারি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি নতুন আদেশ দিয়ে অবিলম্বে অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দেন।
ওয়াশিংটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক আমির আলীর আদেশের ফলে ইউএসএআইডি এবং পররাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত কাজগুলো অবিলম্বে অর্থ প্রাপ্তির অধিকারী হয়। বিচারক আলী ১৩ ফেব্রুয়ারি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি নতুন একটি আদেশ দেন, যার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনকে দ্রুত ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই আদেশের মাধ্যমে, যেসব সংস্থা মার্কিন মানবিক সহায়তার আওতায় কাজ করছে, তাদের জন্য তাৎক্ষণিক অর্থ প্রদান বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে। এটি প্রশাসনের জন্য একটি বড় বাধা হিসেবে দাঁড়ায়, কারণ তারা চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরও অর্থ প্রদান বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল।
ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করলেও, সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়, যা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। আদালত রায় দেয় যে, কার্যকরি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি রক্ষার জন্য এ ধরনের অর্থ পরিশোধ অব্যাহত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের এই রায়, যা আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও মানবিক সংকটের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা তুলে ধরে, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সহায়তা কার্যক্রমের প্রতি একটি শক্তিশালী মেসেজ পাঠায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলার ফলাফল শুধু আর্থিক নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিদেশে মার্কিন সহায়তা শুধু মানবিক সহায়তাই নয়, বরং কূটনৈতিক কৌশলেরও অংশ। আদালতের এই রায় বিশ্বব্যাপী মার্কিন উপস্থিতি ও মর্যাদাকে সংহত করতে পারে। আপাতত, ঠিকাদাররা অর্থের অপেক্ষায় থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে তারা আশার আলো দেখছেন। আগামী শুনানিগুলোর মাধ্যমে চূড়ান্ত সমাধান আসতে পারে, যা নির্ধারণ করবে ফেডারেল প্রশাসনের ক্ষমতার সীমা এবং বৈদেশিক সহায়তার ভবিষ্যৎ।