কানেকটিকাটের ওয়াটারবেরির মাইকেল ওয়ালেস মিডল স্কুলে গত ৩ মার্চ ১৪ বছর বয়সী দুই যমজ বোন, যারা হিজাব পরিধান করেন, সহপাঠীদের দ্বারা মারাত্মকভাবে শারীরিক হামলার শিকার হন। অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের আরব জাতিসত্তা এবং ইসলামি বিশ্বাসের কারণে তারা সহপাঠীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ অনুসারে, এই হামলাটি এতটাই সহিংস ছিল যে, আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ভুক্তভোগীদের পরিবার অভিযোগ করেছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও কোনো স্পষ্ট বার্তা দেয়নি। একই সঙ্গে, তারা নিজেদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও স্কুল থেকে কার্যকরি প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
ওয়াটারবেরি পুলিশ বিভাগের লেফটেন্যান্ট রায়ান বেসেট জানান যে, ৩ মার্চ স্কুলের ভেতর চারজন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তিনি জানান, এই ঘটনায় দুইজন সামান্য আহত হন, তবে তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়নি। তবে ওয়াটারবেরি পাবলিক স্কুল সুপারিনটেনডেন্ট ড্যারেন শোয়ার্জ এবং মাইকেল ওয়ালেস মিডল স্কুলের অধ্যক্ষ ভিনসেন্ট বলসামো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঘটনার পর, মুসলিম সিভিল রাইটস সংস্থা কাউনসিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) স্কুল সুপারিনটেনডেন্ট ড্যারেন শোয়ার্জের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে এবং দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি কানেকটিকাটের অ্যান্টি-বুলিং আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্কুল প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানিয়েছে।
কেয়ার কানেকটিাটের চেয়ারম্যান ফারহান মেমন বলেন, স্কুলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। জাতিসত্তা বা ধর্মের কারণে কারো ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তিনি আরো বলেন, আমরা ওয়াটারবেরি পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন রাজ্য আইনের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করে এবং তাদের নিজস্ব অ্যান্টি-বুলিং নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে হামলার ঘটনাগুলোর যথাযথ রিপোর্টিং, পর্যাপ্ত নজরদারি ব্যবস্থা এবং আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক ও শিক্ষাগত সহায়তা প্রদান।
কেয়ার-কানেকটিকাট স্কুল প্রশাসনের কাছে নিম্নোল্লিখিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে: একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত পরিচালনা করা ও লিখিত রিপোর্ট প্রকাশ করা, ভুক্তভোগীদের জন্য ‘স্টুডেন্ট সেফটি সাপোর্ট প্ল্যান’ তৈরি করা, যাতে অতিরিক্ত নজরদারি, শ্রেণিকক্ষ পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকে। অভিযুক্তদের বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা নীতিমালা অনুসারে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং এই হামলার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা। এছাড়া স্কুলের অ্যান্টি-বুলিং নীতি উন্নত করা ও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্যের শিকার হওয়া শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
এই ঘটনার তদন্ত এখন ওয়াটারবেরি পুলিশের জুভেনাইল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ পরিচালনা করছে, তবে পুলিশ এখনই কোনো অতিরিক্ত মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।