৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:২৩:০৫ অপরাহ্ন


ম্যানহাটনের হোটেলে অভিবাসীদের তথ্য চেয়ে ক্রিমিনাল সমন জারি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৫
ম্যানহাটনের হোটেলে অভিবাসীদের তথ্য চেয়ে ক্রিমিনাল সমন জারি ডিসেম্বর, ২০২৩। অভিবাসীরা রুজভেল্ট হোটেলের আগমন কেন্দ্রতে অপেক্ষা করছে


ট্রাম্প প্রশাসনের বিচার বিভাগ ম্যানহাটনের রুজভেল্ট হোটেলে ক্রিমিনাল সমন জারি করেছে। যা হোটেল কর্তৃপক্ষকে সেখানকার অভিবাসীদের পূর্ণ নামের তালিকা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তহবিলের তথ্য চাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছে। ম্যানহাটনের সাউথার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের দুই প্রসিকিউটর ১২ মার্চ এই সমন জারি করেন। যাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে হোটেলে বসবাসরত বিদেশিদের পূর্ণ নামের তালিকা এবং অভিবাসী আশ্রয় প্রোগ্রামের জন্য দায়ী সত্তা বা ব্যক্তিদের নাম প্রদান করতে হবে। প্রসিকিউটররা জানান, এটি সম্ভবত ফেডারেল অভিবাসন আইন লঙ্ঘন নিয়ে তদন্তের অংশ।

এখন পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটির কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে সমন প্রদান করা হয়নি, ফলে ধারণা করা হচ্ছে এই তদন্ত শুধু হোটেলের রেকর্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। ম্যানহাটন ইউএস অ্যাটর্নির অফিসের মুখপাত্র এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সদর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সদর দফতরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আমরা কোনো ফেডারেল তদন্তের বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।

এই সমন জারি এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ট্রাম্প প্রশাসন দেশে অভিবাসন সংক্রান্ত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ট্রাম্পের সাবেক সীমান্ত নিরাপত্তা প্রধান টম হোম্যান এক বিবৃতিতে নিউইয়র্ককে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যদি তারা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তবে তিনি সেখানে ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ করে দেবেন। হোম্যান বলেন, নিউইয়র্ক, আপনি আমাদের থামাতে পারবেন না। আপনাদের স্যানকচুয়ারি স্ট্যাটাস পরিবর্তন করতে হবে, না হলে আমাদের চলে যেতে হবে।

নিউইয়র্ক সিটি ২০২২ সালের বসন্তে ২ লাখের বেশি অভিবাসী আশ্রয় প্রার্থীদের আশ্রয় প্রদানে সাহায্য করতে শুরু করে, যখন বিভিন্ন হোটেলকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিটি হলের সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে শহরের আশ্রয় ব্যবস্থায় ৪৫ হাজারের কম লোক রয়েছেন। সিটি কর্তৃপক্ষ এসব অভিবাসীদের জন্য স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে কাজ করছে।

নিউইয়র্ক সিটি, অভিবাসী আশ্রয় প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে, অনেক হোটেলকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে ম্যানহাটনের রুজভেল্ট হোটেলও ছিল। এটি মূলত নতুন আগত অভিবাসীদের জন্য একটি প্রধান আস্তানা ছিল এবং সেখানে স্থানান্তরের জন্য অপেক্ষমাণ অভিবাসীদের জন্য আশ্রয় ব্যবস্থা করা হতো। তবে, গত ফেব্রুয়ারিতে, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস ঘোষণা করেছিলেন যে, রুজভেল্ট হোটেলটি আগামী মাসগুলোতে বন্ধ হয়ে যাবে।এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ তুলেছে যে, রুজভেল্ট হোটেলে ’অবৈধ অভিবাসী আশ্রয় খরচ মেটানো হচ্ছে এবং কিছু অপরাধী গোষ্ঠী, বিশেষত ভেনিজুয়েলা থেকে আগত একদল লোক, হোটেলটিকে তাদের কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে এখন পর্যন্ত এসব অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের মুরাদ আওয়াদেহ বলেছেন, এটি অদ্ভুত যে বিচার বিভাগ হোটেল রেকর্ডগুলো খুঁজছে। এই প্রশাসন প্রতিদিন আইন লঙ্ঘন করছে, আর যদি তারা একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজছে, তারা স্রেফ ওই ব্যক্তির তথ্য চাওয়া উচিত, পুরো জনগণের তথ্য নয়। আওয়াদেহ আরো বলেন, এটি স্পষ্ট যে, নিউইয়র্ক সিটির প্রশাসনকে অভিবাসীদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে, যাতে তা আইসির হাতে চলে না যায়।

এছাড়া, কিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে যে এ ধরনের পদক্ষেপ জনগণের গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এসব সংগঠন মনে করে, এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অভিবাসীদের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া বা দমন করা হতে পারে।

এখন দেখতে হবে, এই তদন্তের ফলস্বরূপ কী ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা কতটা কার্যকরি হতে পারে। একদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন তার অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করতে চাইছে, অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটির প্রশাসন তাদের অভিবাসী সহায়ক ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য লড়াই করছে। পরিস্থিতি যা-ই হোক, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি করবে, যা সামনের দিনগুলোতে আরো বড় আকার নিতে পারে।

শেয়ার করুন