নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। দীর্ঘ সময় ধরে গানের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। তার গানগুলো সব সময় শ্রোতাদের মধ্যে বিশেষ এক অনুভূতি জাগায়। সম্প্রতি অডিও এবং প্লেব্যাকের পাশাপাশি, ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও পা রেখেছেন তিনি। ঈদে তার কিছু নতুন গান মুক্তি পাচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত ‘হাউ সুইট’ ওয়েব ফিল্মের গান, যেখানে ১৫ বছর পর বালামের সঙ্গে তার একসঙ্গে গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: আপনি দীর্ঘদিন ধরে সংগীতের সঙ্গে জড়িত। এই সময়ের মধ্যে এবারই প্রথম ঈদে আপনার গান এলো। অনুভূতি কেমন?
ন্যান্সি: আমি গান করি ভালোবাসা থেকে। তাই সব সময় গান আমার কাছে অনেক বড় কিছু। এ পর্যন্ত যে গানগুলো আমি গেয়েছি সবগুলোতেই সর্বোচ্চ পরিশ্রম ছিল। তাই যে কোনো সময় গান প্রকাশ করাটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। ঈদের গানের ক্ষেত্রে তাই আলাদা কোনো অনুভূতি নেই। চাওয়া থাকবে শ্রোতারা যেন গান শোনে আনন্দ পায়।
প্রশ্ন: এই ঈদে আপনার কোন কোন গান শ্রোতারা শুনতে পাবেন?
ন্যান্সি: সিনেমা এবং ওয়েব ফিল্ম মিলিয়ে তিনটি গান আসছে। এর মধ্যে কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত ‘হাউ সুইট’ ওয়েব ফিল্মে একটি গান ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। আমি আর বালম এই গানে গেয়েছি এবং দর্শকরা ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। এছাড়া শরাফ আহমেদ জীবন পরিচালিত ‘চক্কর’ সিনেমায় একটি গান করেছি। আর এক সঙ্গে সংগীতশিল্পী মিলনের সঙ্গে ‘ঈদ এলো রে’ গানটি গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে।
প্রশ্ন: বালামের সঙ্গে দীর্ঘ বিরতির পর আবার গান গাইলেন। এই দীর্ঘ সময় পর কেন মনে হলো একসঙ্গে গান গাওয়া উচিত?
ন্যান্সি: অনেক বছর হয়ে গেছে। তবে ১৫ বছর তো হবেই। এর মধ্যে আমরা হেপাটাইটিস ‘এ’ নিয়ে একটি সচেতনতামূলক কাজ করেছি, কিন্তু সেটা গান ছিল না। তবে বহু বছর পর বালামের সঙ্গে দারুণ একটা গান হলো। দর্শকও গানটি বেশ ভালোভাবে গ্রহণ করেছে, যা আমাদের জন্য আনন্দের ব্যাপার।
প্রশ্ন: এতদিন পর বালামের সঙ্গে গান করতে কী ভাবনা ছিল?
ন্যান্সি: এটা আসলে আমার এবং বালামের সিদ্ধান্ত ছিল না। নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির কাজের সুবাদে আমরা একসঙ্গে গান গেয়েছি। তিনি আমাদের এক করেছেন। তার ‘হাউ সুইট’ ওয়েব ফিল্মে এই গানটি রয়েছে, যা সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে।
প্রশ্ন: আপনি তো সাধারণত ছোটপর্দার জন্য গান করেন না, তবে কাজল আরেফিন অমির সঙ্গে কাজের জন্য কীভাবে রাজি হলেন?
ন্যান্সি: হ্যাঁ, সাধারণত ছোটপর্দার জন্য গান করি না। এর আগে ভিকি জায়েদের ‘নীল সুখ’ ওয়েব ফিল্মে গান করেছিলাম, কিন্তু পরে আর করতে চাইনি। তবে হঠাৎ করে কাজল আরেফিন অমির কথা শুনে রাজি হয়ে গেছি। কারণ অমি আমার পছন্দের পরিচালক এবং তার কাজগুলো পরিবারসহ সবাই মিলে উপভোগ করা যায়। তাই তার সঙ্গে কাজ করতে আমি দ্বিধা করিনি।
প্রশ্ন: গানের মডেল হিসেবে অপূর্ব ও ফারিণের সঙ্গে কাজ কেমন ছিল?
ন্যান্সি: এটা বলা যেতে পারে, খুবই আনন্দের ব্যাপার ছিল। যখন গানটি করা হচ্ছিল, তখন জানতাম না মডেল হিসেবে কারা থাকবেন। পরে যখন জানলাম অপূর্বের নাম, আমি আরো আনন্দিত হলাম। তিনি আমার অনেক প্রিয় একজন অভিনেতা, যদিও আমরা এক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি, কিন্তু কখনো দেখা হয়নি। আর ফারিণও বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। সব মিলিয়ে গানের পরিবেশ একদম পারফেক্ট হয়ে গেছে।
প্রশ্ন: নতুন শিল্পীদের সঙ্গে গান গাওয়া নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
ন্যান্সি: অনেকে বলেন, ‘তিনি তো টাকা পেলেই যে কারো সঙ্গে গান গেয়ে দেন।’ কিন্তু আমার কথা হল, আমি তো একসময় নতুন ছিলাম। আমার সঙ্গে হাবিব ওয়াহিদও কাজ করেছেন। আমি যদি এটা ভাবি যে, ‘এটা নয়, সেটা নয়,’ তাহলে কী হবে? যেহেতু তারা আমাকে সম্মান দিচ্ছে, তাই আমার সবার সঙ্গেই গান গাওয়া উচিত।
প্রশ্ন: এবার ঈদের পরিকল্পনা কী? কোথায় ঈদ করবেন?
ন্যান্সি: ঈদ এবার ঢাকাতেই করছি। আমার মা-বাবা বেঁচে নেই, তাই ঈদ বা অন্য যে কোনো উৎসব তাদের ছাড়া খুব কষ্টের। যাদের মা-বাবা নেই, তারাই এ ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। তবে এখন আমার সন্তান এবং পরিবারই আমার সব। সুতরাং, এবারের ঈদ তাদের সঙ্গেই কাটাতে হবে।