১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ০৫:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে মুসলিম প্রার্থনা কক্ষ ভাঙচুর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৫
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে মুসলিম প্রার্থনা কক্ষ ভাঙচুর নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি


নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির (এনওয়াইইউ) ববস্ট লাইব্রেরির একটি মুসলিম প্রার্থনার কক্ষ গত ৩ এপ্রিল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর ক্যাম্পাসে মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ঈদুল ফিতরের কিছুদিন পর যখন ক্যাম্পাসের মুসলিম ছাত্ররা তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছিলেন, তখন ঘটনাটি ঘটে। গত ৩ এপ্রিল দুপুরে একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এলমার হোমস ববস্ট লাইব্রেরির ওই স্থানটি পরিদর্শন করার সময় দেয়োলগুলোতে মূত্র এবং অশ্লীল, অশোভন চিত্র দেখতে পান, যা প্রকাশ্যে উত্ত্যক্ত করার প্রমাণ। প্রার্থনার ম্যাটগুলোতে প্রস্রাবের দাগ এবং দেওয়ালে ইসলামোফোবিক গ্রাফিতি আঁকা দেখতে পান, যার মধ্যে পুরুষাঙ্গের চিত্র এবং ‘অঊচও’ শব্দটি ছিল। অঊচও হলো আলফা ইপসিলন পাই, একটি ইহুদি ছাত্র ফ্র্যাটারনিটি। ২০১৫ সালে সংগঠনটির বিরুদ্ধে হেজিংয়ের বা অত্যাচারমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছিল, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কিছু সময়ের জন্য ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেছিল। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলার জন্য নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনাকে ঘৃণা অপরাধ এবং ইসলামোফোবিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ছাত্রসংগঠনগুলো যেমন মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এমএসএ), ব্ল্যাক মুসলিম ইনিশিয়েটিভ এবং মুসলিম গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট গ্রুপের সদস্যরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। তারা ক্যাম্পাসে আরো নিরাপত্তা ক্যামেরা স্থাপনেরও দাবি করেছে। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হেট ক্রাইম টাস্কফোর্স নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইসলামিক প্রার্থনাস্থলে ঘটে যাওয়া একটি অবমাননার ঘটনা তদন্ত করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভাঙচুরের ঘটনা ছাত্রদের জন্য এক ধরনের মানসিক আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর চেয়ারপারসন খাদিজা গয়ে জানান, ক্যাম্পাসের মুসলিম ছাত্ররা এখন আরো নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছেন এবং এই ঘটনায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, এটি স্পষ্টভাবে একটি ইসলামোফোবিক আক্রমণ এবং এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। এদিকে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সেফটি অফিসের প্রধান ফাউন্টেন ওয়াকার এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, একে ঘৃণাত্মক এবং ঘৃণ্য হিসেবে উল্লেখ করে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট লিন্ডা মিলসকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, কেন তিনি এখনো এই ঘটনা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্তাইন নামের ছাত্রসংগঠনটি জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নীরবতা মুসলিম ছাত্রদের নিরাপত্তার প্রতি অবহেলা এবং ইসলামোফোবিয়াকে উৎসাহিত করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল স্পিরিচুয়াল লাইফের সহকারী চ্যাপলেইন ফাইয়াজ জাফার এক বিবৃতিতে জানান, এটি কেবল ভাঙচুরের ঘটনা ছিল না, বরং একটি ‘শত্রুতা এবং মুসলিম বিদ্বেষের দ্বারা চালিত ক্ষতিকর ও অগর্ভ আক্রমণ’ ছিল। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে এই ধরনের ইসলামোফোবিক হামলা নতুন নয়। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রদের লক্ষ্য করে ঘৃণাত্মক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্র জানান, জানান যে ঈদ উৎসবের সময় এই হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যা মুসলিম ছাত্রদের জন্য একটি শোকাবহ মুহূর্ত। তিনি আরো জানান, এটা আমাদের কাছে একটি বার্তা, যে আমরা কখনই নিরাপদ নই, এবং আমাদের উৎসব উপভোগ করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কেয়ার-নিউইয়র্ক শাখা এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এনওয়াইইউ সহ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত তদন্ত শেষ করার দাবি জানিয়েছে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পরিচালক আফফা নাশের এই ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি একটি ঘৃণাত্মক আক্রমণ এবং আমরা এর কঠোরতম প্রতিকার দাবি করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং মুসলিম ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৎপর রয়েছে। এনওয়াইইউয়ের মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে এই ঘটনাটি তাদের জন্য একটি বড় ধরনের মানসিক আঘাত হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে তারা এখন আরো দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প করেছে। এনওয়াই ইউর মুখপাত্র জন বেকম্যান ৩ এপ্রিল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আজ বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয় যে, এনওয়াইইউর মুসলিম সম্প্রদায়ের ব্যবহৃত একটি প্রার্থনার কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। ধর্মীয় স্থানটির এ ধরনের অপবিত্রতা নিন্দনীয়, অগ্রহণযোগ্য এবং পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। এটি আমাদের সম্প্রদায়ের প্রতিটি মূলনীতিবিরোধী এবং আমরা ইসলামোফোবিয়া এবং মুসলিম বিদ্বেষের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি আরো বলেন , বিশ্ববিদ্যালয় এই ঘৃণাত্মক ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এই ভাঙচুরের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তি প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনওয়াইইউ কর্তৃপক্ষ মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের সহায়তা এবং সমর্থন প্রদানের জন্য যোগাযোগ করেছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে মুসলিম ছাত্রদের প্রতি ঘৃণা এবং ইসলামোফোবিয়ার ভয়াবহতা আবারও প্রকাশ পায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং মুসলিম ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার এবং সুরক্ষার জন্য সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে, যাতে এমন ঘৃণাত্মক ঘটনা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এই ধরনের ঘৃণা-অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা এবং ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ পরিবেশ নিশ্চিত করা।

শেয়ার করুন