একধরনের ভাঁওতাবাজির মাধ্যমে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের বাসভবনে ‘বাংলাদেশি হেরিটেজ’ পালিত করা হয়েছে। গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় একশ্রেণির বিতর্কিত লোকজন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। কয়েক বছর আগে থেকেই এ অনুষ্ঠান চালু করা হয়। প্রায় প্রতিবারই একই চিত্র দেখা যায়। প্রথমবার নামের সঙ্গে কর্মের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও পরে গুটিকতেক মানুষকে খুশি করার অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয় বাংলাদেশ হেরিটেজ। কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানের কোথাও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয় না। আয়োজকদের ব্যবস্থা দেখে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, আসলে এরা কী হেরিটেজ শব্দের অর্থ বোঝে? আর যদি বুঝে থাকে, তাহলে বাংলাদেশকে নিয়ে রসিকতা করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? বাংলাদেশ ছোট করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? বাংলাদেশ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? বাংলাদেশের কী কোনো হেরিটেজ নেই? যদি থেকে থাকে, তাহলে কেন উপস্থাপন করা হচ্ছে না? এটা কী ব্যক্তিবিশেষকে টু পাইস নিয়ে খুশি করার অনুষ্ঠান? মেয়রের বাস ভবন কী কারো কারো বৈঠকখানায় পরিণত করার অনুষ্ঠান? নাকি স্যুট-টাই পরে কিছু মানুষকে মেয়রের বাসায় যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অনুষ্ঠান? মেয়রের বাসায় অন্য দেশেরও হেরিটেজ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে তো সুন্দরভাবে ওই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরার হয়। প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে, না হয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। কিন্তু বাংলাদেশের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমন কেন? অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, অনুষ্ঠানের থিম বা প্রজেটিভ বাংলাদেশ তাদের কাছে বড় কথা নয় তাদের কাছে বড় হচ্ছে বাণিজ্য এবং ব্যক্তিস্বার্থ। আর সঙ্গে জড়িত মেয়র অফিসে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তা এবং আয়োজকরা। দেওয়া-নেওয়ার মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে সাইটেশন, বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ, ফটোসেশন এবং অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ। কী বিচিত্র! বাংলাদেশের হেরিটেজের কথা বলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে ব্যক্তিবিশেষকে অর্থের বিনিময়ে খুশি করে নিজেদের পুষ্ট করার এ অনুষ্ঠান বন্ধের দাবি এখন সময়ের ব্যাপার।
প্রাসীদের উপস্থিতিতে এ সমাবেশে আবাসন ব্যবসায়ী নুরুল আজিমসহ চারজনকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
এ সময় প্রদত্ত বক্তব্যে মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ক্রমবর্ধমান কমিউনিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশিরা নিউইয়র্ক সিটিকে বসবাসের চমৎকার একটি জনপদে পরিণত করতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন। সিটি প্রশাসনের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকানরা। পুলিশ প্রশাসনেও বাংলাদেশিদের অবদান অনস্বীকার্য।
আফ্রিকান আমেরিকান মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, আমি বহুজাতিক এই সিটির মেয়র হয়েছি আপনাদের মতোই একটি কমিউনিটির সদস্য হিসেবে। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তাহলে ভোটের ময়দানে আপনারাও বিজয় অর্জনে সক্ষম হবেন। আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথে মার্কিন রাজনীতি ও প্রশাসনের সম্পৃক্ততার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আপনাদের প্রমাণ করতে হবে স্বপ্নের দেশে নয়, স্বপ্ন বাস্তায়নের দেশে। যদি ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিনি বলেন, আপনাদের মতো কমিউনিটির কারণেই আজকে আমি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র। আমি আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং আগামী দিনেও থাকবো।
নিউইয়র্ক সিটির প্রত্যাশার পরিপূরক জীবনযাত্রাকে মহিমান্বিত করতে বাংলাদেশি আমেরিকানদের অসাধারণ অবদানের প্রশংসা করে এ সময় আরো বক্তব্য দেন সিটি মেয়রের চিফ প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার, বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী।
এর আগে, দুটি সংগীত পরিবেশন করেন রানু নেওয়াজ এবং অনিক রাজ। সেতারে ছিলেন কালা মিয়া ও ঢুলি শফিক।
এ উৎসবে বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন কমিউনিটি লিডার ইমিগ্র্যান্ট এল্ডার হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ, গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট শাহ নেয়াজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, রাব্বি সৈয়দ, রোকন হাকিম, মহিউদ্দিন দেওয়ান, কামরুজ্জামান কামরুল, কাজী আজম, কামাল হোসেন মিঠু, আবু তাহের, আলিম খান আকাশ, আরিফ হোসেন, আকাশ রহমান, আবুল কাশেম, জাহাঙ্গির সোহরাওয়ার্দী, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, আহসান হাবিব, জাবেদ উদ্দিন, রিজু মোহাম্মদ, আশরাফ খান লিটন, আবুল কাশেম, খলিলুর রহমান, কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণাতিথি, সবিতা দাস, মামুন মিয়াজি, এবি সিদ্দিক পাটোয়ারি, শাহ জে চৌধুরী, মঈনুজ্জামান চৌধুরী, এ কে এম ফজলুল হক, ইউনূস সরকার, ডা. এনামুল হক, রেজাউল আলম অপু, নাঈম টুটুল, আহসান হাবিব, মফিজুল ইসলাম ভূইয়া রুমি, ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, কাজী তোফায়েল ইসলাম, ডা. মাসুদুর রহমান, সৈয়দ এনায়েত আলী, ওয়াহেদ কাজী এলিন, বক্সার সেলিম, মোহাম্মদ সোহেল হোসেন, আক্তার বাবুল, ডিউক খান, ফাহাদ সোলায়মান, আমিন মেহেদী, নওশাদ হোসেন, আব্দুর রশিদ বাবু, নূরে আলম জিকো, আবু তাহের অরিফুর রহমান, আবুল কাশেম চৌধুরী, মজিবর রহমান, রেজওয়ান হক, লিটন আহমেদ, মাবহবুবুর রহমান, শেখ শাহজাহান, ফখরুল ইসলাম মাছুম, জামিল আনসারি প্রমুখ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এরশাদুর রহমান, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম আলম, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ চৌধুরী, কমিউনিটি লিয়াজোঁ সর্দার মামুন ও মিডিয়া লিয়াজোঁ জামিল সরোয়ার প্রমুখ।