৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেছে। এ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই ঘটেছে নজীবিহীন এক ঘটনা। বাংলাদেশ সচিবালয়ে ডিসি হওয়ার লড়াইয়ে তুমুল আন্দোলন, হট্টগোল। যেহেতু দলীয় সরকার নেই। তাই একটা জেলার প্রায় সবকিছুর দায়িত্ব এখন ডিসি’র। তাকে এড়িয়ে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে কোথাও কিছু করা মুশকিল। যা দলীয় সরকারের আমলে সম্ভব নয়। কারণ বিভিন্ন পর্যায়ে থাকেন জনপ্রতিনিধি যাদের অনেকেই সরাসরি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে থাকেন যুক্ত। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সব ক্ষেত্রে জনপ্রতিধিত্ব বাতিল করাতে ডিসি এখন সুপার পাওয়ার। আর এমন সময় ডিসি পাওয়া বেশ লোভনীয় বিষয়ও। এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার যখন বিভিন্ন জেলায় আগের সরকারের আস্থাভাজনদের সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ নতুন কাউকে ডিসি করার প্ল্যান কষছিল, ঠিক তখনই ওই হট্টগোল। যা রীতিমত লজ্জায় ফেলেছে সচিবদেরও।
এদিকে ডিসি হওয়ার জন্য আন্দোলনে অংশ নেওয়া ১৭ উপসচিবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকালে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ বিষয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোখলেস উর রহমান বলেন, “কিছুদিন আগে আমাদের মন্ত্রণালয়ে কাজের একটা স্থবিরতা আসছিল। সেটার জন্য এক সদস্যের একটা কমিটি করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, উনার রিপোর্ট পাওয়া গেছে।” তিনি বলেন, “সংক্ষেপ যদি বলি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সাক্ষী প্রমাণ পাওয়া গেছে। ১৭ জনকে তিনি ইন্টারোগেট করেছেন। তিনটা পর্যায়ে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”
কমিটির সুপারিশ জানিয়ে তিনি বলেন, “আটজনের বিষয়ে বলা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে প্রসিডিউর অনুযায়ী গুরুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। চারজনেকে বলা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে এবং আমাদের কিছু বিধি বিধান অনুযাযী লঘু দণ্ড দেওয়া যেতে পারে। আর পাঁচজনের ব্যপারে বলা হয়েছে তিরস্কার বা সাবধান করা যেতে পারে। এটা হচ্ছে আমাদের ফাইন্ডিংস।”
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, “আপনারা জানেন একজন সরকারি কর্মকর্তা এই সমস্ত বিষয়গুলো যখন ফেইস করে, কতগুলো বিষয় আছে, অনেকগুলো স্টেজ আছে, এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। একটা পর্যায়ে দেখা যায়, অনেকের ইনভলবমেন্ট ছিল অথবা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, এ বিষয়গুলো আমরা দেখি।”
উল্লেখ্য, ক্ষমতার পটপরিবর্তানের পর মাঠ প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল আনে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ৫৯ জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে দিনভর হট্টগোল করেন আগের সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’ উপসচিবরা; শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজনকে পরদিনই প্রত্যাহার করে নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চার জনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। আর একজন উপসচিবকে করা হয় ওএসডি। হট্টগোলের ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় কমিটি।
এ ধরনের ঘটনা ‘কঠোর হস্তে’ দমন করা হবে জানিয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, “জাতি এবং মানুষ জানতে চায়, আমি ডিসি হতে পারিনি, মন্ত্রণালয়ে এরকম একটা আন্দোলন এটা কেউ কিন্তু ভালোভাবে নেয়নি। আমাদের সিনিয়র কলিগরা নেয়নি, আমাদের কলিগরা নেয়নি, আমাদের জুনিয়র কলিগরা নেয়নি। সত্যি কথা বলতে গেলে জনগণ ভালোভাবে নেয়নি।”
তিনি আরো বলেন. “অনেকে আমাদের বলেছে, এই বিষয় যদি কঠোর হস্তে দমন না করেন, আইনানুগ ব্যবস্থা না নেন, আমাদের প্রশাসন ভেঙে পড়বে। আমাদের শৃঙ্খলা থাকবে না। প্রশাসনের একটা বড় বিষয় হল শৃঙ্খলা। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার, তা করা হবে। আমিও আইনের ঊর্ধ্বে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, “আমাদের একজন যুগ্ম সচিব ছিলেন, তাকে সাথে সাথে সিলেটে বদলি করা হয়েছে, উনি কিছু ওভার রিয়েক্ট করেছিলেন, উনাকে বদলি করা হয়েছে। আমরাতো অ্যাক্ট করব, রিয়েক্ট করব, কিন্তু ওভার রিয়েক্ট করতে পারি না। এই জন্য নিয়মের বাইরে কেউ যদি কিছু করে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তবে যে ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাদের নাম প্রকাশ করেননি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ওই সচিব।