১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৪৩:০৩ পূর্বাহ্ন


আমেরিকায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া নজরদারি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
আমেরিকায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া নজরদারি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট


যুক্তরাষ্ট্রের ১.৫ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উন্নত ডাটা বিশ্লেষণ সরঞ্জাম ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ খুঁজে বের করে, তাদের ভিসা বাতিল করছে। নতুন নীতি অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অ্যান্টি-সেমিটিক’ কার্যক্রম বা ইহুদিদের প্রতি শারীরিক হয়রানি নিয়ে কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়া গেলে, অভিবাসন সুবিধা বাতিল করা হবে। এ পদক্ষেপটি বিশেষভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এর তীব্র সমালোচনা করে সংগঠনগুলো একে ম্যাককারথিজমের পুনরাবৃত্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ম্যাককারথিজম ছিল একটি ইতিহাসগত প্রসঙ্গ, যেখানে ১৯৫০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে কমিউনিস্ট সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার লঙ্ঘন করা হতো। তখন কাউকে রাজনৈতিক মতামত বা বিশ্বাসের জন্য লক্ষ্য করে বিচারের মুখোমুখি করা হতো, যা জনগণের স্বাধীনতাকে সীমিত করে দেয়। বর্তমান পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে, বহু মানুষ উদ্বিগ্ন, সরকারের রাজনৈতিক মতামত ও সামাজিক বিশ্বাসের কারণে আজও ব্যক্তির অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে, ঠিক যেমন ম্যাককারথিজমের সময় হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠন করেছে, যা সোশ্যাল মিডিয়া ইতিহাস বিশ্লেষণ করার জন্য উন্নত ডাটা বিশ্লেষণ সরঞ্জাম ব্যবহার করছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের ১.৫ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন তথ্য অনুসন্ধান করা হচ্ছে, যা তাদের ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা অপরাধের রেকর্ডও খুঁজে দেখা হচ্ছে, তিনটি সূত্র যারা এই কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত তারা জানিয়েছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তারা ২ এপ্রিল ঘোষণা করেছেন, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যান্টি-সেমিটিক কার্যক্রম এবং ইহুদিদের প্রতি শারীরিক হয়রানিকে অভিবাসন সুবিধা বাতিল বা অস্বীকারের কারণ হিসেবে বিবেচনা করবে। ডিএইচএস-এর ঘোষণায় বলা হয়, এটি তাৎক্ষণিকভাবে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদনকারী, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং এমন সব বিদেশির ওপর প্রভাব ফেলবে, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, যাদের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-সেমিটিক কার্যক্রম রয়েছে।

মুসলিম নাগরিক অধিকার ও সেবামূলক সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস নতুন এই নীতির সমালোচনা করেছে এবং একে ম্যাককারথিজমের পুনরাবৃত্তি বলে উল্লেখ করেছে, যা ঠান্ডা যুদ্ধের সময় কমিউনিজমের সন্দেহে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার লঙ্ঘন করার একটি কৌশল ছিল। কেয়ারের জাতীয় সহকারী পরিচালক এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, জোসেফ ম্যাককারথির আত্মা এখনো ট্রাম্প প্রশাসনে জীবিত রয়েছে, যা গাজায় ইসরায়েলি সরকারের যুদ্ধাপরাধের বৈধ সমালোচনা নিয়ে অসতর্কভাবে অ্যান্টি-সেমিটিক হিসেবে চিহ্নিত করছে এবং আমেরিকান কলেজগুলোর মধ্যে উইচ হান্ট চালাচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত হলে সেই তথ্য সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের সঙ্গে শেয়ার করা হয়, যা তারপর স্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানায়, যদি তাদের ভিসা বাতিল করার প্রয়োজন হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে, টাস্কফোর্সের সদস্যরা স্থানীয় আইস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস অ্যাটর্নি অফিসকে জানিয়ে শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও দেশ থেকে বিতাড়িত করার নির্দেশ দেন। এখন পর্যন্ত এক মাসে প্রায় ৬০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, জানিয়েছে মিডিয়া রিপোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাধিক সূত্র।

ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর সমালোচনা করে ইমিগ্রেশন রাইটস কর্মীরা জানান, একে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরনের অতিরিক্ত নজরদারি এবং স্বাধীনতা হরণের পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। আইসের চিফ অব স্টাফ জন ফিড়ে, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনে যোগদানের আগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন, দাবি করেছেন যে, ছাত্রদের ভিসা প্রোগ্রামে ব্যাপক জালিয়াতি রয়েছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ত্রিসিয়া ম্যাকলফলিন এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সন্ত্রাসী সমর্থক থাকার জায়গা নেই, এবং আমরা তাদের এখানে থাকতে দিতে বাধ্য নই। এ নতুন পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রে এবং আন্তর্জাতিকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একযোগে দাবি করছে, এই ধরনের পদক্ষেপ ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।

শেয়ার করুন