লোহার জালির ওপরে সোনার ইট নিরেট দেওয়ালের মতো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আঙুল গলিয়ে সেসব ইট স্পর্শ করা যায়। হঠাৎ করে দেখলে আরব্য উপন্যাসের সেই রত্ন গুহার কথাই আপনার স্মৃতিপটে ভেসে উঠবে। প্রিয় পাঠক! আমি আপনাদের রূপকথার কোনো গল্প শোনাচ্ছি না। এটা নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংকের গোল্ড ভল্টের অভ্যন্তরের একটি চিত্র। এখানেই পৃথিবীর ৬০টি দেশের সরকার অথবা কেন্দ্রীয় স্বর্ণ গচ্ছিত রয়েছে। আর নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের স্বর্ণ ভান্ডার বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ গুদাম হিসেবে পরিচিত।
নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংক ভবনটির অবস্থান ডাউনটাউন ম্যানহাটনে। ফোর অথবা ফাইভ ট্রেন ধরে বাউলিং গ্রিন স্টেশনে নেমে অল্প একটু হাঁটলেই প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পাশেই এই ভবনটির দেখা পাবেন। এটি একেবারেই সাদামাটা একটি ভবন। জানা যায়, ইচ্ছে করেই এটিকে জৌলুসহীনভাবে তৈরি করা হয়েছিল।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধসংঘাত- এমন সব সংকটে নিরাপদ বিনিয়োগ ধরা হয় সোনাকে। বিশ্ববাজারে বাড়ে সোনার চাহিদা ও দাম। একটি দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে, নাকি অচিরেই বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে, তা নির্ধারণেও সোনার মজুত বিশেষ ভূমিকা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার ওপর আস্থা রাখে।
নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ভল্টে ঢোকার ইস্পাতের তৈরি দরজাটির উজন ১৪০ টন। দরজাটা ৯ ফুট লম্বা, ৯০ টন উজানের খাড়া একটি সিলিন্ডার। এটাকে ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিলে এ সিলিন্ডার তার ফ্রেমের খাঁজের মধ্যে এক ইঞ্চির আট ভাগের তিনভাগ ভেতরে ঢুকে যায়। ভল্টটা তখন হয়ে ওঠে এয়ার অ্যান্ড ওয়াটার টাইট বন্ধ একটা ঘর।
রিজার্ভ ব্যাংকের স্বর্ণ গুদামের ভল্টে মোট কম্পার্টমেন্ট ১২২টি। সোনার ইটগুলো পরিমাপ করা হয় যে, দাঁড়িপাল্লায় সেটা রড সিমেন্টের দোকানে ওজোন মাপার যন্ত্রের মতো। এটি ওল্ড মডেলের মনে হলেও মাপের ব্যাপারে এটি অত্যন্ত সর্বাধুনিক একটি যন্ত্র। এক হাজার ভাগের এক ভাগের হিসাবও এটি নির্ভুলভাবে প্রদান করে।
যেসব কর্মচারী এই সোনার ইটগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে, তারা এক ধরনের বিশেষ জুতা ব্যবহার করে, যাতে ২৭ পাউন্ড এজনের একটি স্বর্ণের ইট যদি পায়ের ওপর পড়ে, তাহলেও যেন পাটি অক্ষত থাকে। পৃথিবীর কোনো দেশ যদি সোনা গচ্ছিত রাখার জন্য এই ব্যাংকে নিয়ে আসে, তখন এগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করে ওজোন করা হয়। তারপর এগুলো সেলফে রাখা বইয়ের মতো খাড়া করে সাজিয়ে রাখা হয়। জমাকারী দেশ নিজেরা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী, স্বর্ণের ইট তৈরি করে দিতে পারে। অথবা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বললে তারা নিজেরাও ইট তৈরি করে দেন। তবে এই ইটগুলো ১০০ ভাগ স্বর্ণ হয় না। কারণ এগুলো যেন শক্ত থাকে এ জন্য স্বর্ণের সঙ্গে ০.৫ ভাগ তামা, রুপা বা অন্যান্য ধাতু দিয়ে খাদ দেওয়া হয়। সোনা গচ্ছিত রাখার জন্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বিদেশি সরকার বা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কোনো ভাড়া নেয় না। তবে সোনা ভল্টের ভেতর ঢোকানো, ভেতরে এদিক-সেদিক নেওয়া ইত্যাদি কাজের জন্য একটা হ্যান্ডলিং চার্য আদায় করে। তবে সোনার ইটগুলোতে গচ্ছিত দেশগুলোর কোনো নাম থাকে না। শনাক্ত করার জন্য থাকে শুধু একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর। ব্যাংকের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়া অ্যাকাউন্ট নম্বরের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট দেশের নাম অন্য কেউ বলতে পারে না। গোপনীয়তা রক্ষার প্রয়োজনেই এই ব্যবস্থা বলে জানা গেছে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণ গুদামটি পাবলিকের জন্য উন্মুক্ত না থাকলেও বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢোকা যায়।
বিশ্বের দীর্ঘতম সড়কপথ-প্যান আমেরিকান হাইওয়ে
বিশ্বের এমন একটি হাইওয়ে রয়েছে, যা কেবল শহর বা রাজ্য নয় পরপর ১৪টি দেশকে সংযুক্ত করেছে। হাইওয়েটি শুরু হয়েছে উত্তর আমেরিকা থেকে। এটি আলাস্কা থেকে শুরু হয়ে ১৪টি দেশ পেরিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনায় শেষ হয়ে যায় এই পথ। দৈর্ঘ্যরে কারণে এর নাম গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও তালিকাভুক্ত হয়েছে। এ সড়কের ৩০ হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কোনো বাঁক নেই। রাস্তাটির নাম প্যান আমেরিকান হাইওয়ে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং দীর্ঘতম রাস্তা।
উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকা এই দুই মহাদেশকে যুক্ত করতে এই রাস্তাটি তৈরি করা হয়। ১৪টি দেশ পেরিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনায় গিয়ে শেষ হয় এই পথ। দৈর্ঘ্যরে কারণে এর নাম গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও রেকর্ড করা হয়েছে।
এ রাস্তা দিয়ে গেলে পেরিয়ে যেতে পারবেন কোস্টারিকা, পেরু, পানামা, নিকারাগুয়া, মেক্সিকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, বলিভিয়া, এল সালভাদর, কলম্বিয়া, চিলি, কানাডা ও আর্জেন্টিনা।
এ হাইওয়ে তৈরির ধারণাটি প্রথম আসে ১৯২৩ সালে। বিখ্যাত এই রাস্তাটির কথা শুনতে যতটা ভালো লাগছে ব্যাপারটা, কিন্তু ততটা সহজ নয়। এর প্রধান কারণ রাস্তাটির দৈর্ঘ্য। এই মহাসড়কের দুই পাশে ঘন বন, তুষারময় পার্বত্য এলাকা এবং শুষ্ক মরুভূমি দেখতে পাওয়া যায়। এ পথের যাত্রা পুরোপুরি শেষ করতে কয়েক মাস সময় লাগে।
যারা দেশ বেড়াতে পছন্দ করেন, তাদের একবার অন্তত এই মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করা উচিত। এই মহাসড়ক দিয়ে ভ্রমণ দারুণ রোমাঞ্চকর। রোমাঞ্চকর এই কারণে বলছি চালককে নানা দুরূহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিজ্ঞ চালক ছাড়া এই পথ দিয়ে গাড়ি চালানো শুধু বিপজ্জনকই নয়, অত্যন্ত রিস্ক ফ্যাক্টর।
কেউ যদি প্রতিদিন ৫০০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেন, তাহলে তিনি এই পথটি প্রায় ৬০ দিনে সম্পূর্ণ করতে পারবে। কার্লোস সান্তামারিয়া নামে একজন সাইক্লিস্ট এই পথটি ১১৭ দিনে সম্পূর্ণ করেছিলেন। এজন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তারও নাম লেখা হয়েছে। এই বিশাল মহাসড়কের সব রুট একত্রিত করলে তবে তার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৪৮ হাজার কিলোমিটার।
এই প্যান আমেরিকান হাইওয়েতে যেতে চাইলে আগে থেকে খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ মহাসড়ক দিয়ে যেতে গিয়ে যদি কোনো গাড়ি বা বাইক নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বিশাল বিপদে পড়তে হবে। আসলে এ মহাসড়কটি এতোটাই দীর্ঘ যে সাহায্যের জন্য বিপদগ্রস্ত ভ্রমণকারীর কাছে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই এই পথ দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে নিজের সঙ্গে গাড়ি বা বাইক মেরামতের সব ধরনের সরঞ্জাম থাকা জরুরি। এটি দিয়ে নিজের গাড়ি পাংচার বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামত করে নেওয়া যাবে।
জ্যাকসন হাইটসের ‘দিল্লি হাইটস’
দুই টাকার নানরুটি যদি পাঁচ টাকার আলুর দম দিয়ে গিলতে হয়, তাহলে যে কথাটা প্রথমে মনে আসে তাহলো বাঁশের চেয়ে কঞ্চির দাম বেশি। তবে করার কিছু নেই। ব্যস্ত জায়গায় পরিবেশ কিনতে হলে একটু খরচ করতে হবে বৈকি!
আসলে কিডিং করছিলাম।
জ্যাকসন হাইটসের ভিড় এড়িয়ে হাতের কাছে নিরিবিলি পরিবেশে একটু চা খেতে চেয়েছিলাম। তাই নজরে পড়তেই ঢুঁ মেরেছিলাম দিল্লি হাইটসে। আর শুধু শুধু কি চা খাওয়া যায়? বাড়ি কিনতে গেলে যেমন লোকেশন খুঁজতে হয়। তেমনি খাবারের জন্য পরিবেশ। পাশাপাশি খাবারের মানতো আছেই।
সিটি ব্যাংক আর ডাইভারসিটি প্লাজার পাশেই চমৎকার নিরিবিলি পরিবেশে খাওয়া, সময় কাটানো বা কারো জন্য অপেক্ষার আদর্শ স্থান হতে পারে এই দিল্লি হাইটস। এখানে আছে ইন্ডিয়ান, নেপালি, ইন্দো-চাইনিজ এবং বাংলাদেশি অনেক খাবারের সমাহার।
আছে নানা ধরনের এপিটাইজার, স্যুপ, চাউমিন, রাইস, বিরিয়ানি, আছে টিপিকাল নেপালি খাবার, মোমো, কারি, নানা ধরনের চাট, ইন্ডিয়ান চাইনিজ এপিটাইজার এবং আছে ভেজিটারিয়ানদের জন্য নানা পদের খাবার।
সাইনবোর্ডে হালাল খাবারের কথাই বলা আছে। আধুনিকতার সঙ্গে ব্যবসার মিশেল দিতে গিয়ে আজকাল অনেক সাধারণ মানের রেস্টুরেন্টেও পানি দিতে চায় না। বোতলের পানি কিনে খেতে হয়। তবে এখানে ব্যতিক্রম। বসলেই চমৎকার ডিজাইনের গ্লাসে হিমশীতল পানি সরবরাহ করা হয়, যা একটা বাড়তি পাওনা।
প্যানডামিকের পর এখন অনেক রেস্টুরেন্টে যা দেখা যায় না, তাহলো প্রতি টেবিলে হ্যান্ড সেনিটাইজার, যা তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
যারা নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটানোর পাশাপাশি খাবারে একটু বৈচিত্র্যতা চান, তারা ঢুঁ মারতে পারেন এখানে। আমাদের অনেকেরই ঘরের পাশের অনেক জিনিস দু’চোখ মেলে দেখা হয় না, তারাও আসতে পারেন। বলা তো যায় না শুধু শিশির বিন্দু নয়, হয়তোবা মুক্তোর বিন্দুও খুঁজে পেতে পারেন।
ঠিকানা : দিল্লি হাইটস
৩৭-৬৬ ৭৪ স্ট্রিট, জ্যাকসন হাইটস
ফোন : ৭১৮৫০৭১১১১
২১ এপ্রিল ২০২৫