৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:০৯:১২ অপরাহ্ন


নিউইয়র্কে গৃহসংকট মোকাবেলায় গভর্নর হোকুলের ৫০ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৫
নিউইয়র্কে গৃহসংকট মোকাবেলায় গভর্নর হোকুলের ৫০ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ ক্যাথি হোচুল


নিউ ইয়র্ক স্টেটে ক্রমবর্ধমান গৃহসংকট মোকাবেলায় গভর্নর ক্যাথি হোকুল ২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো হাউজিং অ্যাক্সেস ভাউচার প্রোগ্রাম (হাভিপি)-এর জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ। এই ভাউচার প্রোগ্রামের মাধ্যমে কম আয়ের পরিবারগুলোকে বাড়িভাড়া বাবদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। যদিও এই বরাদ্দটি মূলত প্রস্তাবিত ২৫০ মিলিয়নের তুলনায় অনেক কম, তবুও বিশেষজ্ঞ ও আইনপ্রণেতারা একে গৃহসহায়তার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হিসেবে দেখছেন। হাভিপি প্রোগ্রামটির আওতায় আনুমানিক ২,৫০০টি পরিবারের বাসস্থান ভাড়া সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে। অথচ শুধু পশ্চিম নিউ ইয়র্ক অঞ্চলেই গৃহহীন মানুষের সংখ্যা ৬,৩৭৫ জনের বেশি। ফলে প্রোগ্রামটি বাস্তব চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অনেকে। তবে এই প্রোগ্রাম শুধুমাত্র আশ্রয় প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বিচার বিভাগীয় ব্যয়, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, শিশুদের অস্থায়ী আবাসনে থাকা শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যা ইত্যাদি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যয় হ্রাস করতেও সহায়ক হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

প্রোগ্রামটির বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। আইনপ্রণেতারা প্রোগ্রামটি ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে চালু করতে চাইছেন, যেখানে গভর্নর হোকুল চান এটি ২০২৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হোক। তাছাড়া, প্রোগ্রামটি কীভাবে পরিচালিত হবে, কারা এই সুবিধা পাবেন এবং সহায়তা কতদিন চলবে-এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। হাভিপি নিয়ে নিউ ইয়র্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। স্টেট সিনেটর ব্রায়ান কাভানাঘ ও অ্যাসেম্বলি মেম্বার লিন্ডা রোজেনথাল এই প্রস্তাবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুরুতে গভর্নর হোকুল এই ভাউচার প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও বাজেট আলোচনা চলাকালীন তিনি শেষ পর্যন্ত এতে সম্মতি দেন। অ্যাসেম্বলি মেম্বার রোজেনথাল একে ’একটি দরজা খোলার সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি তহবিল আদায়ের জন্য তারা লড়াই করবেন।

গৃহায়ণ অধিকারকর্মী ও সম্পত্তি খাতের প্রতিনিধিরা-যারা সাধারণত একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান নেন-এই প্রোগ্রামের ব্যাপারে বিরলভাবে একমত হয়েছেন। নিউ ইয়র্ক অ্যাপার্টমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জে মার্টিন বলেন, আমরা কৃতজ্ঞ যে হাভিপি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, কিন্তু হতাশ যে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। হাভিপি ছাড়াও ২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে আরও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য আবাসন প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজ্যের নিজস্ব জমিতে ১৫,০০০ নতুন আবাসন ইউনিট নির্মাণের লক্ষ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মূলধন তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ধরনের হাউজিং প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ, নিউ ইয়র্ক সিটিতে আবাসন নির্মাণে কিছু রাজ্য-আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল এবং আপস্টেট অঞ্চলের জন্য নতুন কর ছাড়সহ একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া, ২০২৩ অর্থবছরের বাজেট অনুযায়ী গভর্নর হোকুল একটি পাঁচ বছরের ২৫ বিলিয়ন ডলারের হাউজিং পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল এক লাখ সাশ্রয়ী আবাসন তৈরি বা সংরক্ষণ-যার মধ্যে ১০ হাজার হবে সহায়তাসম্পন্ন (সাপোর্টিভ হাউজিং) এবং ৫০,০০০ বাড়ি হবে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিকীকরণকৃত। ইতোমধ্যে এই পরিকল্পনার অধীনে ৪৫,০০০-এর বেশি বাড়ি নির্মাণ বা সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুধু আবাসন নির্মাণ নয়, স্থানীয় সরকারের জন্য 'প্রো-হাউজিং কমিউনিটিজ প্রোগ্রাম' চালু করে রাজ্য সরকার এমন একটি কাঠামো তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারগুলো রাজ্যের ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের অগ্রাধিকার প্রকল্প তহবিলের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। বর্তমানে নিউ ইয়র্ক সিটিসহ ২০০টিরও বেশি শহর এই প্রোগ্রামে সনদপ্রাপ্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, গভর্নর হোকুলের নেতৃত্বে নিউ ইয়র্ক রাজ্য গৃহসংকট সমাধানে একটি বিস্তৃত এবং সুপরিকল্পিত কৌশল গ্রহণ করেছে। যদিও হাভিপি প্রোগ্রামে বরাদ্দকৃত অর্থ এখনো চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত, তবুও এই উদ্যোগটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে পারে। রাজ্যের প্রত্যন্ত ও নগর অঞ্চলে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই আশা করা যায়।

শেয়ার করুন