০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


আমাদের পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা গোছানো নয় : বিআইপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৫-২০২৫
আমাদের পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা গোছানো নয় : বিআইপি


আমাদের পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা গোছানো নয়। আবার এটাও ঠিক যে আমাদের সীমিত সম্পদ। তবে সীমিত সম্পেদকে সঠিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে: “নগর, অঞ্চল এবং গ্রামীণ এলাকার বৈষম্যহীন উন্নয়নে স্থানিক (Spatial) পরিকল্পনা” প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব বক্তব্য উঠে আসে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অন্যদিকে ঢাকা ডিকলারেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর তিন দিনব্যাপী নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিষয়ক ৪র্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পর্দা নামলো। 

গত ১২ মে সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় ঢাকা ডিকলারেশন তুলে ধরেন সংগঠনের সহ-সভাপতি সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন।

ঢাকা ডিকলারেশনের ১৩ টি পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে, রাজনৈতিক এজেন্ডায় স্থানিক পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্তি; জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ; ন্যায়সঙ্গত রূপান্তরের নীতি প্রোমোশোন; ভূমি, পানি এবং সক্রিয় ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনা; প্রতিবেশ অর্থনীতি ও সমাজের ভারসাম্য রক্ষা; প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন; প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদার করন; ক্ষমতা ও সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ; সকলের জন্য বসতির ন্যায্যতা; জ্ঞান ও উপাত্ত ভিত্তিক পরিকল্পনা; একটি স্থানিক পরিকল্পনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা প্রমুখ।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন ব্যবস্থা গোছানো নয়। আমাদের জনসংখ্যা অনুযায়ী ব্যবহার উপযোগী ভূমির পরিমাণ খুবই সামান্য। কৃষিজমি কম, বনভূমিও কম, পাহাড় তো একেবারেই সামান্য। অব্যবহৃত ভূমির দিক থেকে একেবারেই সর্বনিম্ন বাংলাদেশে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে অব্যবহৃত ভূমি রয়েছে ফলে তারা বড় বড় পাওয়ার প্লান্ট, নিউক্লিয়ার প্লান্ট করতে পারে। তাই প্রতিটি এলাকায় উন্নয়ন সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে হওয়া প্রয়োজন। এজন্য নগর পরিকল্পনাবিদদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। সার্বিক পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা। আলাদা আলাদা সেক্টরাল পরিকল্পনার বাহিরে সমন্বিত জাতীয় স্থানিক (Spatial) পরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। এবং পরিকল্পনাবিদদের নেতৃত্বেই সংশ্লীষ্ট সকল পেশাজীবীদের সমন্বয়ে পরিকল্পনা দল গঠন করে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক যোগসাজসে নদী দখল, বন দখল এগুলোর বিষয়ে ঐক্যমত কমিশনের মাধ্যমে অঙ্গীকার করাতে পারি কিনা চেষ্টা করছি। স্থানীয় জনগণের যৌথ সম্পদ কিংবা খাস জমি অধিকাংশ জায়গায় প্রভাবশালীরা দখলে নেয় কিংবা তাদের যোগসাজসে কেউ কেউ দখল করে থাকে। কিন্তু এসকল স্থানীয় যৌথ সম্পদ যেন স্থানীয় জনগণই ব্যবহার করতে পারে সেই ব্যবস্থা হতে হবে। আমাদের সীমিত সম্পদকে সঠিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “পরিকল্পনা দেশের সবচেয়ে অবহেলিত একটি শব্দ। কিন্তু এটিতে আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের অভাব রয়েছে একটি প্লাটফর্মের যেখান থেকে দেশের সকল বিষয়ে একসাথে পরিকল্পনা হবে। সংস্থাগুলোর মধ্যে যদি প্রফেশনালিজম থাকে তাহলে আমরা এগিয়ে যাবো।”

 বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “পরিকল্পিত বাংলাদেশের জন্য বড় বাঁধা হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থে করা উন্নয়ন। আমরা কাগজ কলমে অনেক প্লান করি, কিন্তু স্বার্থ গোষ্ঠীর কারনে বাস্তবায়ন হয় না। সরকারের উন্নয়নগুলোর দিকে তাকালেও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই। আমাদের সবারই নগর পরিকল্পনা সম্পর্কে বেসিক ধারনা থাকা প্রয়োজন।” সমাপনী অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন থিজ উডস্ট্রা, সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

বিআইপির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দেশে পরিকল্পনা শিক্ষার পথিকৃৎ ও সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানকে এবং দেশের প্রথম পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক এ এস এম মাহবুব উন নবীকে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদাণ করা হয়। একইসাথে পরিকল্পনা পেশার অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এমিরেটাস অধ্যাপক এটিএম নুরুল আমিন এবং এমিরেটাস অধ্যাপক সেলিম রশিদকে প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক সদস্য পদ প্রদান করা হয়। বিআইপির এবারের সম্মেলনে সবমিলিয়ে অন্তত ৬০ টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেশী-বিদেশী পরিকল্পনাবিদ এবং পেশাজীবীবৃন্দ। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, ইরান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেনসহ অন্তত ১৫ টি দেশের ৩৫ জন বিদেশী ডেলিগেট সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।

শেয়ার করুন