৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:২২:১১ অপরাহ্ন


‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অধীন ভেনেজুয়েলানদের নির্বাসন অবৈধ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৫
‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অধীন ভেনেজুয়েলানদের নির্বাসন অবৈধ সালভাদরের কুখ্যাত সেকট কারাগার


যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ৪ জুন রায় দিয়েছে, এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট-এর আওতায় গত ১৫ মার্চ যেভাবে ১৩০ জনেরও বেশি ভেনেজুয়েলান পুরুষকে এল সালভাদরের কুখ্যাত সেকট কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, তা ছিল অবৈধ। আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে, এসব ব্যক্তিকে আইনি সহায়তা ও হ্যাবিয়াস কর্পাস, অর্থাৎ আটকাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এখন থেকে তাদেরকে এই আইনি সুযোগ দিতে হবে। ওই আদেশ দিয়েছেন ডিসি ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের প্রধান বিচারক জেমস ই বোয়াসবার্গ। তিনি বলেন, এই মানুষদের যথাযথ নোটিশ না দিয়েই এবং কোনো রকম আইনি প্রতিকার ছাড়াই নির্বাসিত করা হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে এমন একটি প্রক্রিয়া প্রস্তাব করতে, যাতে সিসোট কারাগারে আটক এই ব্যক্তিরা যথাযথ আইনি লড়াইয়ের সুযোগ পান।

রায়ে বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ বলেন, মামলার পরিস্থিতি ছিল ‘কাফকা সদৃশ’-একটি বিভ্রান্তিকর, অযৌক্তিক ও দুঃস্বপ্নময় অবস্থা, যেখানে মানুষদের গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়েছে কোনো রকম ব্যাখ্যা বা আইনি প্রতিকারের সুযোগ ছাড়াই। তিনি পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, এই অভিবাসীদের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ করা হয়েছে যেন তারা কখনো এই দেশে ছিলই না, তাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয়েছে। বিচারক আরো বলেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টের একক সিদ্ধান্তে এই ব্যক্তিদের এল সালভাদরের কুখ্যাত সেকট কারাগারে পাঠানো হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত মৌলিক অধিকারগুলোর সরাসরি লঙ্ঘন। সরকার কোনো প্রকার নোটিশ বা শুনানির সুযোগ না দিয়েই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে, যা আইন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

বিচারক আরো উল্লেখ করেন, অনেক বন্দির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ছিল দুর্বল ও ভিত্তিহীন, যেমন- শরীরে ট্যাটু থাকা বা তৃতীয় পক্ষের সন্দেহভাজন বিবৃতির ভিত্তিতে গ্যাং সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করা। এসব অভিযোগকে তিনি গুরুতর অবিচার বলে অভিহিত করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে শান্তিকালে ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর এমন ব্যবহারকে তিনি নজিরবিহীন ও অটোক্রেটিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। বিচারক বলেন, সরকার একটি সাংবিধানিক প্রতারণা করেছে, কারণ তারা ব্যক্তিদের নির্বাসনের আগে ন্যূনতম নোটিশ বা আইনি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগও দেয়নি। এই রায় মার্কিন অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়: কারো অভিবাসন অবস্থা বা পরিচয় তাকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।

বিচারকের পর্যবেক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া

রায়ে বিচারক স্পষ্ট করে বলেন, সেকট-এর বন্দিদের কখনোই সরকারের দাবির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল না। তিনি আরো বলেন, এমন অনেকের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো গ্যাং সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই, তবুও তারা বিদেশি কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এসিএলইউর প্রধান আইনজীবী লি গেলারেন্ট বলেন, আদালত সঠিকভাবেই বলেছে, সরকার কাউকে কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই কুখ্যাত বিদেশি কারাগারে পাঠিয়ে দায়মুক্ত হতে পারে না। ডেমোক্রেসি ফরওয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট স্কাই পেরিমান বলেন, এই রায় প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রে কেউই আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে না, আর কোনো প্রেসিডেন্ট তার ইচ্ছামতো মানুষকে ‘শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করে অদৃশ্য করে দিতে পারে না। এসিএলইউ ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার আইনি পরিচালক স্কট মিশেলম্যান বলেন, এই রায় আমাদের সংবিধানের একটি মৌলিক প্রতিশ্রুতিকে পুনরায় স্বীকৃতি দিয়েছে, যেখানে বলা আছে, কোনো ব্যক্তিকে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া তার জীবন, স্বাধীনতা বা সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

এই রায় যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি শুধু ভেনেজুয়েলান বন্দিদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ উন্মুক্ত করল না, বরং সরকারের নির্বিচারে ক্ষমতা ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তাও পৌঁছে দিলো। শান্তিকালে ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর মতো যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগের নজিরবিহীন পদক্ষেপকে আদালত স্পষ্টভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে। এই সিদ্ধান্ত অভিবাসী অধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পক্ষে একটি ঐতিহাসিক বিজয় এবং ভবিষ্যতে এমন নির্বিচার ও গোপন নীতির পুনরাবৃত্তি রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে।

শেয়ার করুন