১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫১:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


‘বিগ বিউটিফুল বিল’ সিনেটে পাস, হাউসে চ্যালেঞ্জের মুখে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২৫
‘বিগ বিউটিফুল বিল’ সিনেটে পাস, হাউসে চ্যালেঞ্জের মুখে ইউএস কংগ্রেস


যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টার ম্যারাথন ভোটাভুটির পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ অল্প ব্যবধানে গত ১ জুলাই মঙ্গলবার পাস হয়েছে। ৫১-৫০ ভোটে বিলটি অনুমোদিত হয়, যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স টাই ভেঙে নির্ধারক ভোট দেন। তিনজন রিপাবলিকান সিনেটর র‌্যান্ড পল, থম টিলিস ও সুসান কলিন্স সব ডেমোক্রেটের সঙ্গে বিলটির বিপক্ষে ভোট দেন। এই বিলে ২০১৭ সালের ট্রাম্প ট্যাক্স কাটসের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে এবং ওভারটাইম ও টিফসের ওপর কর সাময়িকভাবে মওকুফ রাখা হয়েছে। এছাড়া বিলটি সেনাবাহিনী ও ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নে বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। তবে এর খরচ মেটাতে মেডিকেইড, খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি (স্ন্যাপ) এবং ক্লিন এনার্জির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় ঋণের ঊর্ধ্বসীমা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বিলটি পাস করাতে রিপাবলিকানরা ’কারেন্ট পলিসি বেসলাইন’ নামে পরিচিত একটি বিতর্কিত কৌশল ব্যবহার করে বিলের ব্যয় গোপন করেছেন, যা ভবিষ্যতে সিনেটের ৬০ ভোটের প্রথাগত সীমাকে দুর্বল করে ফেলতে পারে। এই কৌশল ব্যবহার করে ২০১৭ সালের ট্যাক্স কাটসের ব্যয় ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার কম দেখানো হয়েছে। সিনেটের ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার এ বিষয়ে বলেন, এই প্রতারণার মূল্য আমেরিকানরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেবে।

সিনেট ভোটের আগে রিপাবলিকান নেতারা বিলটির বিভিন্ন অংশে সংশোধনী আনেন। গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর জন্য বরাদ্দ ২৫ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ৫০ বিলিয়ন করা হয়, ক্লিন এনার্জি ট্যাক্স ক্রেডিটের জন্য সোলার লিজিং নিষিদ্ধ করার ধারা ও উইন্ড-সোলার প্রকল্পে অতিরিক্ত কর বাদ দেওয়া হয়। তবে রিপাবলিকানদের মেডিকেইড সম্প্রসারণের তহবিল ছাঁটার পরিকল্পনা চূড়ান্ত বিল থেকে বাদ যায়। অপরদিকে, সিনেটের ভোট শুরুর পর্বে, যেখানে একাধিক সংশোধনী একের পর এক তোলা হয়, তাতে রেকর্ড ৪৫টির বেশি সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে ভোট হয়। টেড ক্রুজের প্রস্তাবিত ১০ বছরের জন্য রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে এআই রেগুলেশনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব ৯৯-১ ভোটে বাতিল হয়। ডেমোক্র্যাটরা বিলিয়নিয়ারদের কর ছাড়ের বিরোধিতায় একাধিক বার্তা-ভিত্তিক সংশোধনী আনলেও সেগুলো ব্যর্থ হয়।

ননপার্টিসান কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস পূর্বাভাস দিয়েছে, বিলটি আইনে পরিণত হলে পরবর্তী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটে ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি তৈরি হবে, রাজস্ব আয় কমবে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ব্যয় কমবে মাত্র ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার। একইসাথে ২০৩৪ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যবিমা হারাতে পারে। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’-এ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে লক্ষণীয় বাজেট ছাঁটাই প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য মূলত সরকারি ব্যয় হ্রাস ও ধনীদের কর ছাড় বহাল রাখা। স্বাস্থ্যসেবা খাতে সবচেয়ে বড় আঘাতটি এসেছে মেডিকেইড কর্মসূচির ওপর, যেখান থেকে আগামী এক দশকে প্রায় ৯০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাজেট ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। বিলটি মেডিকেইডের যোগ্যতা আরও কঠোর করছে, যার ফলে দরিদ্র, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী নাগরিকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের হিসাব অনুযায়ী, এই ছাঁটাইয়ের ফলে ২০৩৪ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ আমেরিকান স্বাস্থ্যবিমা হারাতে পারেন।

অন্যদিকে, স্ন্যাপ বা খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি থেকেও বড় ধরনের ছাঁটাই করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় স্ন্যাপ-এর বাজেট থেকে প্রায় ২০ শতাংশ, অর্থাৎ আনুমানিক ১৭০ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেওয়া হবে এক দশকে। এই বিলের অধীনে উপকারভোগীদের জন্য কাজের বাধ্যবাধকতা কঠোর করা হবে এবং রাজ্য সরকারগুলোকে বাড়তি ব্যয় বহন করতে বলা হচ্ছে। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ স্ন্যাপ সুবিধা হারাতে পারেন বা কম ভাতা পেতে পারেন। বিশেষ করে, অভিবাসী পরিবার এবং যাদের উপর নির্ভরশীল কেউ নেই-এমন ব্যক্তিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ পরিবর্তনের ফলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিক্ষা খাতেও বিলটির পরোক্ষ প্রভাব স্পষ্ট। যদিও সরাসরি বাজেট ছাঁটাই করা হয়নি, তথাপি পরিষ্কার জ্বালানি কর ছাড় ও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট তহবিলে বড় ধরনের ছাঁটাই করা হয়েছে, যা দরিদ্র এলাকাগুলোর স্কুল ও অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এছাড়া ফেডারেল শিক্ষাঋণ সহায়তা ও ঋণ মাফ কর্মসূচি সীমিত করা হচ্ছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বোঝায় পড়ে যাবে এবং অনেকেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে। পাশাপাশি, পেল গ্রান্ট ও টাইটেল-১ তহবিল ভবিষ্যতে চাপে পড়বে, যা নিম্নআয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে।

বিলটি এখন হাউসে ফিরে যাচ্ছে, যেখানে রিপাবলিকানরা মাত্র তিনটি ভোট হারানোর সুযোগ রাখে। আগের সংস্করণ এক ভোটের ব্যবধানে পাস হয়েছিল। তবে সিনেট সংস্করণে কিছু পরিবর্তনের কারণে হাউসে বাধার মুখে পড়তে পারে বিলটি। ফ্রিডম ককাস সদস্যরা ব্যয় ছাঁটের ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আবার নিউইয়র্কের রিপাবলিকান নিক লালোটা করছাড় সীমা ৪০,০০০ ডলারে বাড়ানোর বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার সুইং জেলার প্রতিনিধি ডেভিড ভালাডাওও মেডিকেইড ছাঁটের বিষয়ে বিরোধিতা জানিয়েছেন।

স্পিকার মাইক জনসন ও তার নেতৃত্বাধীন হাউস রিপাবলিকানরা আশা করছেন ৪ জুলাইয়ের আগেই বিলটি পাস করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ডেস্কে পাঠাতে পারবেন। তবে সিনেট সংস্করণ নিয়ে হাউসে আলোচনা ও সংশোধনী নিয়ে বিলটির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। একাধিক রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন যে হাউসের হাতে বিলটি পড়ে আরও ভারসাম্যপূর্ণ সংস্করণ আসবে।

শেয়ার করুন