০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩৮:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নিউইয়র্কে আরো আট ইমিগ্রেশন জাজ বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১২-২০২৫
নিউইয়র্কে আরো আট ইমিগ্রেশন জাজ বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস


নিউইয়র্ক সিটির ২৬ ফেডারেল প্লাজায় কর্মরত আট জন ইমিগ্রেশন জাজকে হঠাৎ বরখাস্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ১ ডিসেম্বর ঘটে যাওয়া এই ঘটনা দেশব্যাপী ইমিগ্রেশন আদালত ব্যবস্থায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা না দিলেও অভিবাসন নীতি আরো কঠোর করা এবং দ্রুততর বহিষ্কারের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বরখাস্ত হওয়া জাজদের মধ্যে অন্যতম আমিনা এ খান, যিনি ওই ভবনের সহকারি চিফ ইমিগ্রেশন জাজ হিসেবে অন্য বিচারকদের তত্ত্বাবধান করতেন। এর আগে এই বছর নিউইয়র্কেই ছয়জন জাজ বরখাস্ত হয়েছিলেন। নতুন বরখাস্তের ফলে ২৬ ফেডারেল প্লাজার মোট ৩৪ জন ইমিগ্রেশন জাজের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। জাতীয় ইমিগ্রেশন জাজ অ্যাসোসিয়েশন এবং ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের একজন কর্মকর্তা বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও প্রশাসন কারণ প্রকাশে নীরব রয়েছে। এ বছর দেশজুড়ে প্রায় ৯০ জন ইমিগ্রেশন জজ বরখাস্ত হয়েছেন। মার্কিন অভিবাসন আদালতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরনের চাকরিচ্যুতি।

বরখাস্ত হওয়া কয়েকজন জাজ জানান, তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও হঠাৎ করে বরখাস্ত করা হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, যেসব বিচারক অভিবাসীদের মামলায় তুলনামূলকভাবে বেশি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন, তাদের টার্গেট করেই এসব বরখাস্ত করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে জাজদের মধ্যে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, যা বিচারিক স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বরখাস্তের দিনই লোয়ার ম্যানহাটনে প্রায় ২০০ জন প্রতিবাদকারী সম্ভাব্য আইস অভিযানের বিরুদ্ধে জড়ো হন। ট্রাম্প প্রশাসন নিউইয়র্ককে স্যানকচুয়ারি সিটি নীতি অবলম্বনের জন্য বহুবার সমালোচনা করেছে, কারণ এতে স্থানীয় পুলিশ ফেডারেল অভিবাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সীমিত সহযোগিতা করে থাকে। ২৬ ফেডারেল প্লাজা ভবনটি দীর্ঘদিন ধরেই অভিবাসী গ্রেফতারের কেন্দ্রবিন্দু। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা গেছে, রুটিন চেকইন বা শুনানিতে আসা অভিবাসীদেরও হঠাৎ করে মাস্কধারী ফেডারেল এজেন্টরা গ্রেফতার করছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভবনের বাইরে বহুবার উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে এক ভিডিও সাংবাদিক সংঘর্ষের সময় আহত হন এবং আরো একটি ঘটনায় এক নারীকে ফেডারেল এজেন্ট ধাক্কা দিলে তা ভিডিওতে ধরা পড়ে।

ইমিগ্রেশন জাজদের অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, জাজদের নির্বিচারে বরখাস্ত বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা বিনষ্ট করছে। বরখাস্ত জাজদের একজন বলেন, আমরা বছরের পর বছর আইন মেনে ন্যায়বিচার করেছি। হঠাৎ করে আমাদের চাকরি হারানোর কোনো যুক্তি নেই। অভিবাসন অধিকার সংগঠনগুলো এই বরখাস্তকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপে অভিবাসীরা আরো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বেন এবং ন্যায্য বিচার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এতে দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হবে।

নিউইয়র্কের অভিবাসী সম্প্রদায় ও অধিকারের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানিয়ে বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থান অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকারকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলছে। তারা দাবি করেছে, বিচারিক স্বাধীনতা রক্ষায় অবিলম্বে পদক্ষেপ জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলমান এই বরখাস্ত এবং অভিবাসন গ্রেফতারের ধারাবাহিকতা বর্তমান প্রশাসনের নীতি বাস্তবায়নের একটি অংশ হলেও এর প্রভাব পড়ছে আদালত পরিচালনা, বিচারপ্রার্থীদের অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতার ওপর। নিউইয়র্কে বরখাস্ত হওয়া এ আটজন জাজের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আদালত ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের বরখাস্ত ইমিগ্রেশন জজ তানিয়া নেমারের বৈষম্যের অভিযোগে মামলা

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বরখাস্ত হওয়া ওহাইওর সাবেক ইমিগ্রেশন জাজ তানিয়া নেমার যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। ১ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় তিনি দাবি করেন, তার লিঙ্গ, লেবাননের সঙ্গে দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং ডেমোক্র‍্যাট দলীয় রাজনীতিতে প্রার্থী হওয়ার ইতিহাস-এ তিনটি কারণে তাকে অবৈধভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা ফেডারেল সিভিল রাইটস আইনের লঙ্ঘন। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, নেমার তার পরীক্ষামূলক চাকরির মধ্যবর্তী সময়ে হঠাৎ ও অযৌক্তিকভাবে বরখাস্ত হন, যদিও তিনি উচ্চতম কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন পেয়েছিলেন। বরখাস্তের সময় তাকে আদালত ভবন থেকে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বের করে দেন। তার সুপারভাইজার এবং অ্যাকটিং চিফ ইমিগ্রেশন জাজ জানিয়েছেন, তারা কেউই জানতেন না কেন নেমারকে বরখাস্ত করা হলো।

ইমিগ্রেশন জাজদের প্রতিনিধিত্বকারী ইউনিয়নের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন আসার পর থেকে ১০০-এর বেশি ইমিগ্রেশন জাজ কেউ বরখাস্ত, কেউ পদত্যাগে বাধ্য, আবার কেউ বাধ্যতামূলক বদলিতে পড়েছেন। এসব পরিবর্তন ইমিগ্রেশন আদালতের কার্যক্রমকে বিপর্যস্ত করেছে এবং কয়েক মিলিয়ন বিতাড়ন মামলার সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি বিচার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ও বিচারককে এক্সিকিউটিভ অফিস ফর ইমিগ্রেশন রিভিউ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা পুরো দেশের ইমিগ্রেশন আদালতগুলোর তত্ত্বাবধান করে।

নেমারের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বরখাস্তের জন্য কোনো যৌক্তিক ও বৈধ কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এক কর্মকর্তা তার পুরোনো ট্রাফিক লঙ্ঘন এবং ২০১০-১১ সালের দুটি স্থানীয় কর-সংক্রান্ত মামলার বিষয় তুলে ধরেছেন, যেগুলো তিনি ইমিগ্রেশন জজ হওয়ার আগে ব্যাকগ্রাউন্ড চেকে ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছিলেন। মামলায় বলা হয়েছে, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যেন এগুলোই বরখাস্তের কারণ।

বরখাস্তের পর নেমারইক্যুয়াল এমপ্লয়মেন্ট অপরচুনিটি অফিসে বৈষম্যের অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ইক্যুয়াল এমপ্লয়মেন্ট অপরচুনিটি দাবি করে, টাইটেল সেভেন, যে আইনের অধীনে কর্মস্থলের বৈষম্য নিষিদ্ধ তা ইমিগ্রেশন জজদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ এটি নাকি প্রেসিডেন্টের সংবিধানগত ক্ষমতার সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি করে। নেমার ও তার আইনজীবীরা এটিকে সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যা বলে উল্লেখ করেছেন। মামলায় বলা হয়েছে, সংবিধানের কোথাও বলা নেই যে নির্বাহী শাখা বৈষম্যের মাধ্যমে যেকোনো ফেডারেল কর্মচারীকে বরখাস্ত করতে পারে। আইনজীবীরা ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অবস্থানকে একটি ঐতিহাসিক সিভিল রাইটস আইনের ওপর ভয়াবহ আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছেন।

শেয়ার করুন