৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৩:২৯ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্কসহ ১৯ স্টেটে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পরিকল্পনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৫
নিউইয়র্কসহ ১৯ স্টেটে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের পরিকল্পনা অপরাধ ও অবৈধ অভিবাসন দমনে ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে ১৯টি অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হচ্ছে


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অবৈধ অভিবাসন ও অপরাধ দমন অভিযানের অংশ হিসেবে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন আরো বিস্তৃত আকার ধারণ করছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর অনুরোধে পেন্টাগন নতুন করে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই অভিযান চলবে আগস্ট থেকে শুরু করে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন ও অপরাধ দমনের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১৯টি অঙ্গরাজ্যে প্রায় ১ হাজার ৭০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। পেন্টাগনের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, এসব সদস্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন এবং মূলত অভিবাসী শনাক্তকরণ, তথ্য সংগ্রহ, আঙুলের ছাপ ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করবেন। তবে তারা কোনো আইনপ্রয়োগকারী কার্যক্রমে সরাসরি অংশ নেবেন না।

ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের এই পরিকল্পনার আওতায় রয়েছে: আলাবামা, আরকানসাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আইডাহো, ইন্ডিয়ানা, আইওয়া, লুইজিয়ানা, নেব্রাস্কা, নেভাডা, নিউ মেক্সিকো, ওহাইও, সাউথ ক্যারোলিনা, সাউথ ডাকোটা, টেনেসি, টেক্সাস, উটাহ, ভার্জিনিয়া এবং ওয়াইয়োমিং। ধারণা করা হচ্ছে, টেক্সাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হবে। ভার্জিনিয়ায় প্রায় ৬০ জন ন্যাশনাল গার্ড সদস্য ২৫ আগস্ট থেকে প্রশিক্ষণ শুরু করবেন এবং সেপ্টেম্বরের শুরুতে কাজে নিযুক্ত হবেন। পেন্টাগনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের আইনগত কাঠামোর ভেতর রেখে সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সহায়তা করতে আমরা এই মোতায়েন করছি। এটি একটি পরিকল্পিত ও সমন্বিত প্রক্রিয়া।

অনেক রাজ্য ইতোমধ্যে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইন্ডিয়ানা, আইডাহো, আইওয়া ও নেভাডা-যেখানে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই অভিযান শুরু হবে। তবে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে মোতায়েনের সময়সূচি ও কৌশল নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট গভর্নরের সিদ্ধান্ত ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর। এদিকে আগামী বছরের যুক্তরাষ্ট্রের ২৫০তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে সামনে রেখে ওয়াশিংটন ডিসিকে সুন্দর ও নিরাপদ রাখতে এই অভিযানকে যুক্ত করা হয়েছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে এই বাহিনী দীর্ঘমেয়াদেও মোতায়েন থাকতে পারে এবং অন্যান্য রাজ্যেও একই ধরনের অভিযান পরিচালিত হবে।

এই সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সমালোচকরা একে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে দেখলেও ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সীমান্ত নিরাপত্তা ও আইনের শাসন’ রক্ষার একটি জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে তুলে ধরেছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে চলমান অপরাধ দমন কার্যক্রম সফলভাবে এগোচ্ছে এবং এর পরবর্তী ধাপ হতে পারে শিকাগো ও নিউইয়র্ক। ওয়াশিংটনে ইতোমধ্যে ২ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে, যারা ট্রাফিক চেকপয়েন্ট, মনুমেন্ট ও উচ্চ অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল দিচ্ছেন। তারা প্রয়োজনে অস্ত্রও বহন করতে পারবেন।

এ মোতায়েনগুলো টাইটেল ৩২ সেকশন ৫০২এফের অধীনে হচ্ছে, যেখানে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা তাদের নিজ নিজ গভর্নরের অধীনে থাকবেন, তবে ফেডারেল নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করবেন। পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনি সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় এই স্ট্যাটাসে মোতায়েন করাই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি।

তবে ভারমন্ট অঙ্গরাজ্য এই অভিযানে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বাকি রাজ্যগুলোতে এখনো পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের কাজ চলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করে অবৈধ এবং অপরাধে জড়িত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমরা এই অপরাধীদের সরিয়ে ফেলতে চাই এবং যদি তারা থেকে যায়, তাহলে নিশ্চিত করবো যেন তারা আর কখনো ফিরে না আসে।

এমন একটি সময়ে, যখন অভিবাসন নীতি যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, তখন এই অভিযানের কার্যকারিতা ও আইনি বৈধতা ভবিষ্যতে নজরদারির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

ঠেকানোর সুযোগ নেই গভর্নর হোচুলের

নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ক্যালিফোর্নিয়ার মতো নিউইয়র্কেও ন্যাশনাল গার্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে তা তিনি মেনে নেবেন না। তবে বাস্তবতা হলো, আইনি দিক থেকে হোচুলের হাতে তেমন কোনো কার্যকর উপায় নেই ট্রাম্পকে থামানোর। প্রেসিডেন্ট চাইলে যে কোনো সময় নিউইয়র্ক ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন, এবং সেই ক্ষেত্রে গভর্নরের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনে, সাধারণত প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরই নিজ নিজ রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ডের কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই বাহিনীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি বা জননিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে একই সঙ্গে এ গার্ড সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বাহিনীরও অংশ। প্রেসিডেন্ট যখন কোনো রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারালাইজ করেন, তখন সেই সদস্যরা আর রাজ্যের অধীনে থাকেন না-তারা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অধীনে চলে যান।

এই অবস্থায় গভর্নর হোচুল কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। তিনি গার্ড সদস্যদের ট্রাম্পের নির্দেশ অমান্য করতে বলতে পারবেন না। যদি কেউ আদেশ অমান্য করেন, তবে তাদের সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আইনি দিক থেকে হোচুলের একমাত্র বিকল্প হলো কোনো ফেডারেল আদালতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করা-যেমনটা ক্যালিফোর্নিয়া করেছে।

ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় ন্যাশনাল গার্ড ফেডারালাইজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের আইন টাইটেল ১০ ব্যবহার করেন, তবে তিনি ইনসারেকশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করেননি। টাইটেল ১০-এর আওতায় রাষ্ট্রপতি আদেশ দিতে পারেন। তবে সেটি রাজ্যের গভর্নরের মাধ্যমে জারি হওয়ার বিধান রয়েছে, যা ক্যালিফোর্নিয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি। ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, গভর্নরের সম্মতি ছাড়া এ পদক্ষেপ অবৈধ। এ মামলার রায় ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ ক্ষমতা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

যদি আদালত বলেন, টাইটেল ১০ প্রয়োগ করতে হলে গভর্নরের অনুমতি নিতে হবে, তবে নিউইয়র্কে একই কৌশল ব্যবহার করতে ট্রাম্পের বাধা আসবে। তবে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প চাইলে ইনসারেকশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করতে পারেন, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি একতরফাভাবে ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল সার্ভিসে ডাকতে পারেন। ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিসের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জোসেফ নান বলেন, গভর্নরদের কৌশল হতে পারে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা এবং আগেভাগে নিজে থেকেই গার্ড মোতায়েন করে ফেডারেল হস্তক্ষেপ ঠেকানোর চেষ্টা করা। মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ জর্জ ফ্লয়েড আন্দোলনের সময় এমন কৌশল অবলম্বন করে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ এড়াতে পেরেছিলেন।

গভর্নর হোচুল ইতোমধ্যেই নিউইয়র্ক শহরের সাবওয়েতে অপরাধ দমন ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন। যদিও প্রগতিশীলদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি, তবুও হোচুল দাবি করছেন, এ উদ্যোগে অপরাধ হ্রাস পেয়েছে এবং জনগণের আস্থা বেড়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের ক্ষমতার অপব্যবহারের সম্পূর্ণ বিপরীত।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ট্রাম্প যদি পুনরায় ক্ষমতায় ফেরেন, তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারেন। আর গভর্নর হোচুলের মতো নেতাদের আইনি সীমাবদ্ধতা সেই চেষ্টাকে প্রতিহত করতে খুব একটা কাজে নাও আসতে পারে।

শেয়ার করুন