০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৭:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


এস্টোরিয়ায় আল-আমিন মাদরাসার সামার সমাপনী অনুষ্ঠান
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৫
এস্টোরিয়ায় আল-আমিন মাদরাসার সামার সমাপনী অনুষ্ঠান এস্টোরিয়ায় আল-আমিন মাদরাসার সামার সমাপনী অনুষ্ঠানে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা


নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় অবস্থিত আল-আমিন জামে মসজিদের আওতাধীন আল-আমিন মাদরাসায় গত ২৪ আগস্ট সামার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। আধুনিক বহু সাংস্কৃতিক সমাজে বসবাসরত প্রবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা কেবল একটি ঐতিহ্যগত চর্চা নয়, বরং এটি তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও আত্মপরিচয় রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নিউইয়র্ক শহরের এ মাদরাসা নতুন প্রজন্মকে ইসলামি শিক্ষা, নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধে গড়ে তুলছে। সামারের ছুটির সময় এই ইসলামী ক্লাস ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মতো আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, ধর্মীয় চর্চা এবং পারিবারিক সংহতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এই আয়োজনে প্রথম লেভেল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী এবং হিফয বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। তারা কিরাত প্রতিযোগিতা, হামদ, নাতে রাসুল, ইসলামিক খুতবা, জুমা ও জানাজার নামাজ এবং ঈদের নামাজের অনুশীলনসহ নানা ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক উপস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সে উপস্থিত অভিভাবকরা মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। মাদরাসার সিলেবাস অনুযায়ী ইসলামি শরিয়া, পবিত্র কোরআন এবং ইসলামি সাধারণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রথম লেভেলে প্রথম হন নাইমা ইসলাম, দ্বিতীয় হোসেইন আহমেদ চৌধুরী এবং তৃতীয় সুমাইয়া আলম। দ্বিতীয় লেভেল ‘এ’ সেকশনে প্রথম স্থান অর্জন করেন সামিন মোস্তফা, দ্বিতীয় মুশফিক মুছা এবং তৃতীয় আমিনুর রহমান তাহিয়া। দ্বিতীয় লেভেল ‘বি’ সেকশনে প্রথম নাদিয়া নূর, দ্বিতীয় জহুরা রহমান এবং তৃতীয় মারজান তাজকিয়া। তৃতীয় লেভেলে প্রথম হন মাহির খান এলাহী, দ্বিতীয় ইউসুফ চৌধুরী এবং তৃতীয় তাসফিয়া মেহজাবিন। ষষ্ঠ শ্রেণির বিভাগে প্রথম হন আরিয়ান আলম, দ্বিতীয় কাইয়ান ওমর আহমেদ এবং তৃতীয় সাফায়ত খান। হিফয লেভেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন ওলিউর রহমান চৌধুরী, দ্বিতীয় জারিফ আবিদ এবং তৃতীয় আবিদুর রহমান চৌধুরী।

এছাড়া রেইনি পার্কে আয়োজিত বিভিন্ন আউটডোর কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ২৩ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কারস্বরূপ জায়নামাজ, একটি করে মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিপুলসংখ্যক অভিভাবকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-মইনুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ মিছবা উর রহমান, শামসুল ইসলাম, আবু মুছা, আবিদ চৌধুরী, রাশিক আহমেদ চৌধুরী, খালেদুর রহমান, মোহাম্মদ আমিনুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ মোস্তফা এবং মুজিব উল্লাহ সাইদ জিলো সাহিব প্রমুখ।

কার্যকরি পরিষদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আমিন হোসাইন এবং সভাপতি শাহাব উদ্দীন। অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সাবেক ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও মাদরাসার শিক্ষকবৃন্দ: মাওলানা মোহাম্মদ নেছার আহমেদ, মাওলানা মহিউদ্দিন আল ফারুক, হাফিজ মাওলানা নজমুল ইসলাম, সাফায়ত খান, মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, ইসলাম উদ্দিন, মোহিত পারভেজ ও সোহায়েল।

সমাপনী বক্তব্যে মাদরাসার প্রিন্সিপাল, ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা লুৎফুর রহমান চৌধুরী বলেন, এই শিশু শিক্ষার্থীরাই জান্নাতের বাগানের ফুল। তাদেরকে যদি আমরা যথাযথভাবে গড়ে তুলি, তবে তারা আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে। তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন স্কুল শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে অবহেলা করি, তাহলে এই বহুজাতিক সংস্কৃতির সমাজে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হারিয়ে যেতে পারে এবং কিয়ামতের দিনে এর জবাবদিহি থেকে কেউ রেহাই পাবে না। তিনি আরও বলেন, ইসলাম একমাত্র ধর্ম যা মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, সুনাগরিকত্ব এবং সৎ চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেয়। বর্তমান নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে আল্লাহর নির্দেশিত পথ-আল কোরআন এবং প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণেই ইহকাল ও পরকালের মুক্তি সম্ভব। আর এই মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে মাদরাসা শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

এ অনুষ্ঠান শুধু শিক্ষার্থীদের অর্জন প্রদর্শনের একটি সুযোগ নয়, বরং এটি অভিভাবকদের মধ্যে ইসলামি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে। বলা যায়, প্রবাসে বসবাসরত মুসলিম শিশুদের পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব বিকাশে ধর্মীয় শিক্ষা এবং তার প্রকাশ ও মূল্যায়নের পরিবেশ থাকা অত্যন্ত জরুরি।

আল আমিন মাদরাসার এই সামার সমাপনী অনুষ্ঠান শুধুমাত্র একটি বার্ষিক আয়োজন ছিল না, বরং এটি একটি মূল্যবোধনির্ভর ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনার বাস্তব প্রতিফলন। শিক্ষার্থীদের কোরআন তেলাওয়াত, ইসলামিক বক্তৃতা ও নামাজ অনুশীলনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলামের নৈতিক আলোয় গড়ে তোলার যে প্রচেষ্টা এখানে দেখা গেছে, তা প্রবাসে বসবাসকারী মুসলিম অভিভাবকদের জন্য আশাজাগানিয়া। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মিলিত উৎসাহ প্রমাণ করে যে, প্রবাসেও ইসলামি শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা কতটা প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক। সকলের প্রত্যাশা, এ ধরনের আয়োজন ভবিষ্যতেও ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে।

শেয়ার করুন