২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৮:১৭:৫০ অপরাহ্ন


বিএনপির সমাবেশে জামায়াতের উপস্থিতির নেপথ্যে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
বিএনপির সমাবেশে জামায়াতের উপস্থিতির নেপথ্যে প্রেসক্লাবের সম্মুখে বিএনপির সমাবেশ : ফাইল ছবি


বিএনপির কর্মসূচিতে জামায়াতের 

উপস্থিতি স্যাবোটাজ না সংহতি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে বিএনপির প্রতীকী অনশনের কর্মসূচি ছিল গত ২ মার্চ। এতে আচমকাই প্রায় অকার্যকর ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের নেতাকর্মীরাও সংহতি জানাতে এসেছিলেন। দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলকে পৌঁছে দিতে এসে মারধরের শিকার হয়েছেন নেতাকর্মীরা। আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন তিনজন। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে হঠ্যাৎ করে বিএনপির কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীর সংহতির কারণ কি? এর পাশাপাশি এর আগে বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল নিয়ে রাজনৈতিন অঙ্গনে নানান আলোচনার ঝড় বইছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দীর্ঘদিন পর জামায়াতের এমন আচরন আসলে কি দলটি বিএনপির সাথে সংহতি জানানোর নামে স্যাবোটাজ করতে চায় কি-না তা নিয়ে। বিএনপির ডাকে গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে জমায়াতের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করে দলটিকে (বিএনপি) বেকায়দায় ফেলতে চায় কি-না?

যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ২০১৩ সালে এবং আবারো তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে ২০১৫ সালে সহিংসতাপূর্ণ হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপির সাথে ২০ দলীয় জোটের ব্যানারেই রাজপথেই ছিল জামায়াত। অন্যদিকে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কিছু কিছু কর্মসূচিও দিয়েছে দলটি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে হঠাৎ করেই কিছু ঝটিকা মিছিল-জমায়েত এবং বক্তৃতা-বিবৃতি ছাড়া দলটির তৎপরতা চোখে পড়েনি।  জামায়াতের দীর্ঘদিন ধরে নিরবতায় দলের ভেতরে এবং বাহিরে গুঞ্জন ছিল যে দলটি বিএনপির ছাতায় আর থাকতে চায় না। সবাই ধরে নেয় যে, দলটির পুরোনো মিত্র বিএনপির সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। গুঞ্জন দেখা দেয় বিএনপি ও জামায়াতের ২২ বছরের পুরোনো সখ্য ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়া ২০১৮-এর নির্বাচনের আগে শোনা গিয়েছিল, জামায়াতই জোট ছাড়ছে। এমনকি সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় জামায়াত ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি এখনো কার্যকর হয়নি। তবে জামায়াতের সাথে বিএনপির যে দূরত্ব হয়েছে তা রাজনীতিতে স্পষ্ট হয়ে যায়।  বলা চলে রাজনীতির মাঠে গত কয়েক বছর রহস্যজনকভাবে নীরবও হয়েই ছিল জামায়াতে ইসলামী। এরই মাঝে জামায়াতে ঘটে নানান ঘটনা। জামায়াতে সংস্কার এবং একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে শীর্ষ নেতৃত্বকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেন দলটিতে দীর্ঘদিন নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে তিনি ছিলেন জামায়াতের একজন আইনজীবী। তিনি এখন লন্ডন প্রবাসী। অন্যদিকে একই দাবি জানিয়ে বহিষ্কৃত হন মজলিসে শূরার সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু। জামায়াত ত্যাগ করা মজলিসে শূরার আরেক সদস্য সাবেক জনপ্রশাসন সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে মজিবুর রহমান মঞ্জু এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি) নামে একটি দল গঠন করেন। এতে তৃণমূলের কয়েকজন নেতাসহ অনেক কর্মী-সমর্থক যোগ দেন। 

তবে এসব ঘটনাকে জামায়াত দলের ভেতরে বাইরে বোঝাতে চেষ্টা করে যে সরকার বিভিন্নভাবে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে করা হচ্ছে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদসহ শীর্ষ চার নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর দলটি ভীষণভাবে রাজনৈতিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে দলের এমন সময়ে বিএনপি যেহেতু তাদের জামায়াতের নিজস্ব ইস্যুতে কোনো আন্দোলনে নীরব ছিল তা-ই তারাও এক ধরনের চুপ মেরে থাকে দীর্ঘদিন। পাশ কাটিয়ে চলে বিএনপিকে। 

তবে হঠাৎ এখন কেন সরব?

মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদসহ শীর্ষ চার নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর জামায়াত বলা চলে সরকারের কঠোর নজরদারিতে ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষনেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর যারা দলের দায়িত্বে এসেছিলেন, তারা পরের কয়েক বছর মামলা মাথায় নিয়ে হয় জেলে না হয় আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু হঠ্যাৎ করে দেখা  যাচ্ছে, অতি সম্প্রতি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে নানান ধরনের সভা করেছেন। হয়েছে সাংগঠনিক সভা। অনেক জায়গায় রাতের আধারে সাংগঠনিক সভা করছে। এসময় অভিযোগের পাশাপাশি গুঞ্জন উঠে জামায়াতের সাথে সরকারের গোপনে যোগাযোগ হচ্ছে। আগের মতো ধরপাকড় না চলার কারণ হচ্ছে সরকারের সাথে সমঝোতা। জানা গেছে, এমন সমঝোতা হয় যা একটি মুসলিম শক্তিধর দেশের সহযোগিতায় । আর এমন সমঝোতার বিনিময়ে সরকার দলটিকে আশ্বস্ত করে যে জামায়াতকে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে বিএনপির বিরুদ্ধে। যা হবে সরকারের প্রশাসনিক কলকাঠি ব্যবহার করে। এমন সমঝোতার কারণেই দলটি নীরব রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। তাছাড়া সমঝোতার ঘটনা ফুটে উঠে যখন দেখা যায় বিএনপি যখন বর্তমান কমিশনের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে তখন সুর সুর করে তখনই ভোটের রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে জামায়াত। তারা অংশ নেয় নির্বাচনে। জানা গেছে, এগুলি সবই ছিল জামায়াতের সাখে এক ধরনের গোপন সমঝোতার কারণে। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল যে, সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতারা অসংখ্য মামলার আসামি হয়ে কারাগারে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তাই  আন্দোলন-সংঘাতে সরকার বদলের সম্ভাবনা নেই। আর বিএনপির জামায়াতকে পাশ কাটিয়ে চলছে। তাই জামায়াত একা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে সরকারের সঙ্গে একধরনের সমঝোতায় চলছে। দীর্ঘদিন নিরাবতার এমন কারণই ছিল বলে জামায়াত থেকে বলা হয় নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় ‘দেশ’ প্রতিনিধির সাথে একজন জামায়াত নেতার আলাপে।

তবে রাজনীতিতে বিশেষ করে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপরীতে নীরব থাকার আরো কারণ এসময় বারবার আলোচিত হতে থাকে। জানা গেছে, কাগজ-কলমে না হলেও জামায়াতের সাথে সরকারের যে দীর্ঘদিন একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বিএনপির কাছে। এর বেশ কিছু নমুনার মধ্যে হলো দলটি বিএনপিকে পাশ কাটিয়ে চলা। এর বাইরেও দলটির একধরনের দুতিয়ালি চোখে পরে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে বেশ কিছুদিন আগে জামায়াতের পক্ষে দেয়া এক বিবৃতিসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সরকারের নানা সমালোচনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় জামায়াত। সেই বিবৃতিতে জিয়াউর রহমানের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেনি দলটি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভেতরে-বাইরে ক্ষোভ বিরাজ করে। অভিযোগ উঠে সরকারের সাথে যোগসাজোশেই দুই কূল রক্ষা করে জামায়াত বিবৃতিটি তৈরি করে। অতি সম্প্রতি রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাথে সাইফুর রহমান নামে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছে। এ জামায়াত নেতা বক্তব্য দেয়ার সময় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন খন্দকার মোশাররফ। এসময় খন্দকার মোশাররফ হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে থাকেন, এই জামায়াত বাংলাদেশকে আজকের এই জায়গায় এনেছে। এই জামায়াতের ফাজলামোর কারণে।

বিএনপির সমাবেশে জামায়াতের উপস্থিতির নেপথ্যে

এতো সন্দেহ অবিশ্বাস আর নীরবতা ভেঙে সেই জামায়াত কেন বিএনপির কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে এসেছে? এর পেছনে রয়েছে নানান কারণ। জানা গেছে, সরকারের সাথে জামায়াতের সেই গোপন সখ্য যেই শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্রের সহযোগিতায় হয়েছিল যা এখন আর আর নেই। রাজনৈতিক নানান মেরুকরণে শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্রটি জামায়াতের চেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পর্কেই বেশি গুরুত্ব দেয়। অপরদিকে জামায়াতের সাথে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে যে সমঝোতা হয় বিএনপিকে ভাগে রাখতে তাতেও ছেদ পড়ে। কারণ পার্শ্ববর্তী একটি দেশ জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের গোপন গাঁটছড়ায় আপত্তি তোলে। তারা জামায়াতের বিপরীত মেরুতে থাকা ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দেয়। এতেও জামায়াত পড়েছে বেকায়দায়। বিএনপি সাইজ করে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জামায়াতের আকাশ কুসুম উচ্চাভিলাষী ভাবনায় ছেদ পড়ে। তাই আবার ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়নে চলে আসতে চেষ্টা করছে জামায়াত। অর্থাৎ তারা বিএনপির দিকে ঝুঁকে অসতে চায়। তাদের অনশনে কর্মসূচিকে যোগ দেয়। 

শেষ কথা

তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরেকটি সূত্র মনে করে জামায়াতের সাথে সরকারের আসলে যোগাযোগ ঠিকই আছে। সরকারেরই ইশারায় তারা ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে’ বিএনপির প্রতীকী অনশনে যোগ দেয়। যেই ইশারায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সরকারের নানা সমালোচনার প্রতিবাদ জানিয়ে দেয়া বিবৃতি দেয় জামায়াত।  কেননা সেই বিবৃতিতে জিয়াউর রহমানের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেনি দলটি। আরো জানা গেছে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে’ বিএনপির প্রতীকী অনশন ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি সারা দেশে বেশ সাড়া ফেলে। এতে সরকার বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। আবার সম্প্রতি ডাকা বাম গণতান্ত্রিক জোটের ২৮ মার্চে হরতালে বিএনপির সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাসকে সরকার ভালোভাবে নেয়নি, বরং বিব্রত হয়েছে সরকার। অন্যদিকে গত ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরব্যাপী কর্মসূচি শুরু করতে জাতীয় কমিটি ও স্টিয়ারিং কমিটির বাইরে আরো ২৫টি কমিটি গঠন করে বিএনপি। এর মধ্যে ১৫টি বিষয়ভিত্তিক কমিটি এবং ১০টি বিভাগীয় কমিটি। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই ২৫টি কমিটির নাম ঘোষণা করে। সংবাদ সম্মেলনে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির যে লেগো করা হয়েছে তার নিচে লেখা রয়েছে ‘ ২৬ মার্চ, ১৯৭১ যেখান থেকে শুরু’। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, বছরব্যাপী অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে করতে খন্দকার মোশাররফকে আহ্বায়ক ও আব্দুস সালামকে সদস্য সচিব করে ১৩৪ সদস্যের জাতীয় কমিটি করা হয়। এতে স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রয়েছে। এছাড়া পুরো কার্যক্রম তদারকিতে ৭ সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটিও করা হয়েছে।

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ ভূমিকা রাখে। কেননা বিএনপিকে একটি স্বাধীনতা বিরোধীদল হিসেবে প্রচার প্রোপাগান্ডা আওয়ামী বেশ পারঙ্গমতা দেখিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে জামায়াত আরো বেশি অস্থির হয়ে উঠে। এসব ঘটনায় জামায়াত রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা চলে একা পড়ে যায় আন্দোলনে মাঠে। অন্যদিকে বামরা বিএনপির সাথে যুগপৎ বা যে কোনো ধরনের আন্দোলনে কঠোর শর্ত দিয়েছে। তা হলো কোনোভাবেই জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্ক থাকতে পারবে না। বিএনপি যদি জামায়াতকে ছেড়ে বামদলগুলিসহ বিভিন্ন প্রগতিশলি রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি শক্ত প্লাটফর্ম গড়ে তোলো সেক্ষেত্রে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বেকায়দা পড়তে পারে। ধারণা করা হচ্ছে জামায়াত এটি চায় না যে বিএনপি তাদের বাদ দিয়ে এমন একটি জোট গঠন করুক। 

এটা হলে জামায়াতও আরো একা হয়ে যাবে। সেকারণে বিএনপিকে বির্তকিত করতে তারা ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে’ বিএনপির প্রতীকী অনশনে সংহতি জানিয়েছে। যেনো বামসহ অপরাপররা বুঝে নেয় জামায়াত বিএনপির সাথেই আছে। এতে একদিকে বিএনপি পড়বে বিব্রতকর অবস্থায়। অন্যদিকে সরকার একে কাজে লাগিয়ে দেশে-বিদেশে মাঠ গরম করবে এই বলে যে বিএনপি-জামায়াতের মতো শক্তিকে সাথে রেখেই ক্ষমতায় যেতে চায়, আন্দোলন করছে। এদিকে আরেকটি সূত্র জানায় কোনো কারণে জামায়াত বুঝে ফেলেছে যে তাদেরকে সরকার ব্যবহার করছে। সরকার যে কারণে জামায়াতকে গোপনে ব্যবহার করেছে তার ফল তুলে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এখন জামায়াতকে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইছে। আর আরেকটা ভয় জামায়াতের মধ্যে তাহলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আয়োজনের মতো বড় কোনো ঝুঁকি নিতে পারে সরকার। হতে পারে তারা আরো কোণঠাসা জামায়াত। 

কেননা গত রোববার রাতে সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর ও জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ শীর্ষ ১৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। রোববার রাতে শহরের সয়া ধানগড়া মধ্যপাড়া মহলায় দারুল ইসলামী একাডেমিতে গোপন বৈঠকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জামায়াত এখন বদ্ধমূল যে তারা সরকার তাদের সাথে করা গোপন সমঝোতায় থাকছে না। এসব বুঝেই তারা বিএনপির ঘাড়ে চড়তে চাচ্ছে তারা। এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিএনপি নেতা বলেছেন, বিএনপি ২০ দলীয় জোটের শরিকদের গত শনিবার তাদের অনশনে অংশ সংহতি জানাতে আহ্বান জানিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই জামায়াতসহ অন্য শরিকরা সেখানে সংহতি জানাতে এসেছেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে অতীতেও বিএনপি এমন অনেক কর্মসূচি নিয়েছে যাতে জমায়াতকে তারা আশা করেছিল অংশ নেবে বা ন্যূনতম হলেও সংহতি জানাবে। কিন্তু জামায়াতে সেসব অনুষ্ঠানে সংহতি জানাতেও আসেনি। পাশেও থাকেনি। তাছাড়া ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে’ বিএনপির প্রতীকী অনশনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল গত ৩১ মার্চ। 

এ কর্মসূচি ঘোষণার কোনো অংশেই বিএনপি বলেনি যে তারা তাদের এ কর্মসূচিতে কাউকে সংহতি জানাতে বলেছিল। আর এসব কারণেই প্রশ্ন থেকেই যাবে গত শনিবার জামায়াত এভাবে দলবল নিয়ে কেনো বিএনপির কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে এসেছিল? 


শেয়ার করুন