ডিসেম্বর ২০২৩। ধারাবাহিক তৃতীয় টার্ম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শেষ বছর ক্ষমতাশীল আওয়ামী নেতৃত্বের সরকার। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক ২০০৯ থেকে ২০২৩ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির আকার বেড়েছে বহুগুণ, সারাদেশে বিপুল কাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। সম্পদের সুষম বিতরণ, সুশাসন, দুর্নীতি নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও খাদ্য সংকট নেই। তবে গণতন্ত্র গৃহবন্দি। আইনের শাসন অনেক প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪, ২০১৮ নির্বাচন নিয়ে ঘরে বাইরে অনেক যৌক্তিক প্রশ্ন। ভূরাজনৈতিক উপসর্গ হিসেবে পাশের বাড়ির প্রতিবেশী সব ক্ষেত্রেই সার্বিক প্রভাব বিস্তারে সক্রিয়। বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র নানা কথা বলে চাপ সৃষ্টি করছে চীন বিরোধী জোটে সামিল করতে বাংলাদেশকে। যৌক্তিক কারণেই কিছু মানুষ আর প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে প্রাধান্য দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। ওদিকে বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত চীনবিরোধী জোটে যোগদান বিষয়ে করা সতর্ক বাণী শুনিয়েছে। চীনের বৈষয়িক উন্নয়ন পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড বিষয়ে সম্পৃক্ততা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে বাংলাদেশ। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার চ্যালেঞ্জ আছে বাংলাদেশের। মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু দেশ রাশিয়ার বিরোধে পশ্চিমা অবরোধ ভাঙার সাহস নেই বাংলাদেশের। রাশিয়ার তেল-গ্যাস সরবরাহ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশের জোটগুলো নির্বাচন নিয়ে নানা নসিহত করছে। দেশে বিরোধী দলগুলো সরকারবিরোধী অবস্থান সুদৃঢ় করছে। অর্থনীতি সংকটে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ। চতুর্মুখী বৈষয়িক চাপ, অভ্যন্তরীণ সমস্যা, সংকট, নিজেদের দল, জোটের অসহিষ্ণুতা নিয়ে অনেকটাই দিশেহারা ক্ষমতাসীন দল।
এমনিতেই ভ্রান্তনীতি আর কৌশলের কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত। উপরন্তু করোনা পরবর্তী বিক্ষুব্ধ জ্বালানি বাজার ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে টালমাটাল হয়ে পড়ায় দিশেহারা বাংলাদেশ। নিজেদের জ্বালানি অনুসন্ধান উপেক্ষা করে বিদেশি জ্বালানি নির্ভরতার ভুল কৌশলে জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত। ডলার সংকটের কারণে কয়লা, তেল, এলএনজি কেনার সামর্থ্য সীমিত। নিজেদের গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা দ্রুত কমছে। আসন্ন গ্রীষ্মকাল আর রমজানের সময় পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে চিন্তাযুক্ত বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ সংকট মেটাতে হলে কয়লা, তেল, গ্যাস কেনার জন্য ডলার প্রয়োজন। জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আইপিপিগুলোকে ডলার দিতে হবে। ডলার প্রয়োজন আইওসিগুলোর গ্যাসের মূল্য পরিশোধের জন্য।
এদিকে শিল্পগুলো বিশেষত রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোকেও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। না হলে রপ্তানি সঙ্কুুচিত হয়ে ডলার সংকট বাড়াবে। কি করবে সরকার? এমনি অবস্থায় ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রুপের সঙ্গে সম্পাদিত অস্বচ্ছ, একপেশে চুক্তি নিয়ে দেশে বিদেশে বিতর্ক। প্রতিবেশীর একচ্ছত্র প্রভাবে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ।
আইএমএফ থেকে প্রতিশ্রুত ঋণ নেয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে তাড়াহুড়ো করে অ্যাক্ট সংশোধন করে সরকারের নির্বাহী আদেশে গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর অর্জন প্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বাড়ানোর পথে হাঁটছে। এমনিতেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্যে পুড়ছে সাধারণ মানুষ। এতোকিছু করেও আসন্ন গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহে স্বস্তি থাকার নিশ্চয়তা নেই।
এরই মাঝে ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। ২০২৩ নির্বাচনের বছর। এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের সূচনায় নির্বাচন। তবে এ বছরের শেষের দিকে নির্বাচনী সব কার্মকা- গুছিয়ে নিয়ে আসার কথা কর্তৃপক্ষের। আগামী বছরের শুরুতেই হয়তো ভোট।
এর মধ্যে বিরোধীদলগুলো রাজপথে সরব থাকলেও ওদেরও কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো নির্বাচনী কৌশল দৃশ্যমান নয়। জনগণ সব দলের শাসন দেখেছে। বর্তমান সংকট মুহূর্তে জনগণের শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা। এবারের জাতীয় নির্বাচন ২০১৪ বা ২০১৮ মতো হওয়ার সুযোগ নেই। অর্থনীতির ত্রিশঙ্কু অবস্থায় দেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় অশুভ পরিবর্তন হলে এলোমেলো হয়ে যাবে সবকিছু। মেগা প্রকল্পগুলোর অনেকটা বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে। ২০২৬ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছানোর কথা। যা কিছু হোক দেশপ্রেমিক জনগণ ভোটের অধিকার প্রয়োগের স্বচ্ছন্দ সুযোগ পেলে ভুল করবে না বলেই বিশ্বাস। ফলে এতোকিছুর মধ্যে দেখতে হবে, সরকার কীভাবে চতুর্মুখী চাপ সামাল দেয়।