২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৯:৩১ পূর্বাহ্ন


জনগণকে নিয়েই গণআন্দোলনের টার্গেট বিএনপির
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১০-২০২২
জনগণকে নিয়েই গণআন্দোলনের টার্গেট বিএনপির বিএনপির একটি প্রতিবাদ সমাবেশ


দলমত নির্বিশেষে এক দফার আন্দোলনে সকলকে শরিক করতে বিএনপি সংলাপ চালিয়ে যাবে আরো কয়েক মাস। এরপর আন্দোলনের প্রথম ধাপে যুগপৎ ও পরবর্তীতে তা গণআন্দোলনে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি। আর এজন্যই দলটি কিছুটা ধীর গতিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

বিএনপি এখন যা করছে

ধীরে সুস্থে বুঝে শুনে আন্দোলন করতে চায় বিএনপি। তাড়াহুড়া করে আন্দোলন করে একদিকে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে চায় না অন্যদিকে তার সাথে অংশ নিতে ইচ্ছুক শরিক দলগুলিকেও বুঝতে চায়। আরো কাছাকাছি আনতে চায় তাদের। কারণ মাঠের এসব দলগুলি বিএনপি’র সাথে আন্দোলন করতে কিছুটা পিছুটান আছে বেশ কয়েকটি কারণে। এসব বিষয় ফয়সালা যেমন বিএনপি চায় তেমনি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে চাওয়া দলগুলির একিই উদ্দেশ্য। 

হাইকমান্ডের নির্দেশ

২০০৮ সালে তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলাতে সাজা পেয়ে প্রথমবারের মতো দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে কারাগারে খালেদা জিয়া। করোনাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার সাথে স্বজন ছাড়াও দলের শীর্ষ নেতারা কেউ দেখা করতে পারতেন না। তবে গত মে মাসে বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় এক বছর পর দেখা করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ’ফিরোজা’য় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সাতজন সদস্য। এরপর কোরবানির ঈদের দিন খালেদা জিয়ার দেখা পেয়েছিলেন এই নেতারা। সবশেষে আগস্টে জন্মদিনেও সাক্ষাৎ হয় স্থায়ী কমিটির কয়েকজনের সাথে।

গত বছর রোজার ঈদে বিএনপি চেয়ারপারসন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত হয়নি। দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। তবে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় এক বছর পর দেখা করার পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের তিনি বিভিন্ন পরামর্শ দেন। জানিয়ে দেন সরকারের সাথে কোনো সমঝোতায় যাওয়া যাবে না। জনগণকে নিয়ে সব দলের দলের সাথে সংলাপ করে একটি গণআন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে এর পরে কোরবানি ঈদেও সাক্ষাৎ হয়। এতেও একিভাবে খালেদা জিয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সর্তক করে দেন। জানান দলের শক্তি ক্ষয় না করতে। সর্তক করে দেন সরকার নিপিড়ন নির্যাতন করে দলকে বিপথে পরিচালিত করতে পারে। তাই সর্তক থাকতে পরামর্শ দেন তিনি। আর সেভাবেই বিএনপি’র সংলাপ চলছে। চলছে আন্দোলন কর্মসূচি। 

চলছে সংলাপ বিএনপি’র

এবছরের ২৪ মে থেকে সরকাবের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে বিএনপি। মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ সংলাপ।  আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে চূড়ান্ত একটি আন্দোলনের রূপরেখা দিতে সংলাপ চলছে। সংলাপ আছে ২০ দলীয় জোট এবং ৭ দলীয় গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক অন্যান্য দলগুলোর সাথে। তবে এসবের বাইরেও বিএনপি’র অনেক শীর্ষ নেতা সরকারের সাথে নেই এমন দলের সাথে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে পর্দার আড়োলে। এসব দলগুলি মধ্যে রয়েছে বাম প্রগতিশীল বেশ কয়েকটি দল। যারা চায় না বিএনপি’র সাথে প্রকাশ্যে কোনো সংলাপ। জামায়াতসহ কয়েকটি মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক দলের দীর্ঘদিন ধরে সর্ম্পক থাকার কারণে বিএনপি’র সাথে এসব বাম প্রগতিশীল দল ও ব্যাক্তির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। একারণে বিএনপি জামায়াতসহ এসব দলগুলি এড়িয়ে চলছে যেনো বৃহত্তর গণ ঐক্যে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। কারণ দেশে বিদেশে সরকার বিএনপি’কে একটি স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক দল হিসাবে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টারি তৈরি করে। এসব কারণে দেশে-বিদেশে বিএনপি বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। তবে চলমান সংলাপে বিএনপি আশা করে ধীরে সুস্থে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দেশের ভেতরে থাকা বাম প্রগতিশীল দলগুলির সাথে দফায় দফায় সংলাপে দূরত্ব অনেক কমে যাবে। সৃষ্টি হবে আত্মবিশ্বাস। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের সাথে। 

থেমে নেই কুটনৈতিক তৎপরতা 

বিএনপি যে কেবল বিভিন্ন দল ও সংগঠন বা ব্যাক্তি বিশেষের সাথে বৈঠক করছে তা নয়। দলটি কূটনৈতিকদের সাথে দেশে বিদেশে বিভিন্ন ধরনের উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তাদের অবস্থান তুলে ধরছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে দলটি।  নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিটি যথার্থভাবে তুলে ধরতে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিদেশীদের সাথে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারণ বিএনপি মনে করে দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করে তারা। সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে লন্ডন থেকে সরাসরি দেখভাল করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বিএনপি’র প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশও সফর করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে। দলটির কূটনৈতিক উইং নানামুখী কর্মতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তারা ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রাখছেন। এরই বহি:প্রকাশ ঘটেছে দলটির নেতৃবৃন্দের সম্প্রতি বিভিন্ন কূটনৈতিক তৎপরতায়। তারা  সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসনের ও এর পরপরই কানাডা হাই কমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর ব্রাডলি কোটসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। 

চলছে গণআন্দোলনে রূপ দেয়ারও কর্মসূচি

জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে চলছে বিএনপি’র কর্মসূচি। রাজধানীর ১৬টি স্থানে ঘোষিত কর্মসূচি এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে নতুন করে কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। এর মধ্যে রয়েছে বিভাগীয় গণসমাবেশ। তিন মাসব্যাপী এ কর্মসূচি শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে। খোঁজ নিযে জানা গেছে বিএনপি’র কর্মসূচিতে সরকারের হামলা মামলায় দলটি আরো উৎফ্ল্লু বোধ করছে। চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে সভা-সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের পাঁচজন নেতাকর্মী মারা গেছেন। বিএনপি অভিযোগ করেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজপথের অন্দোলনে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে না পেরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় হামলা চালিয়ে আসছে। সারাদেশে অর্ধশতাধিক স্থানে তাদের সমাবেশে হামলা হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বেশ কয়েটি স্থানে। হাজার নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাড়িতে হামলা ছাড়াও অনেক নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

শেষ কথা

বিএনপি’র পক্ষ থেকে টানা এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলটির হাইকমান্ড মনে করে তাদের রাজনীতি এখন ইতিবাচক পথেই আছে। দেশের ভেতরে এধরনের হামলা মামলার কারণে সরকারই আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। আর এসবকে পুঁজি করে বিএনপি এখন তাদের কর্মসূচিকে আরো প্রসারিত করেছে। বিএনপি’র লক্ষ্যই এখন পুরো আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণআন্দোলনে দিকে ধাবিত করা।  সে লক্ষ্যেই চলে সংলাপ, কর্মসূচির ধারাবাহিতকতা আর কূটনৈতিক তগৎপরতা।

শেয়ার করুন