২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ৬:০৩:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


আসিফ নজরুল বললেন
বদমাশ লোকটাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
বদমাশ লোকটাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করে অনুষ্ঠানে মঞ্চে আসিফ নজরুল (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) সহ অতিথিবৃন্দ


আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লেখক আসিফ নজরুল বলেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সমাজের সবচেয়ে বদমাশ লোকটাও নির্বাচনের আগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করে। গত ৬ মার্চ সোমবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিস্থ বেঙ্গল শিল্পালয়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র “অপারেশন জ্যাকপট” প্রদর্শনের মধ্যদিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। 

জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এই আলোচনাসভায় আসিফ নজরুল  আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিহীন সমাজ, আইনের শাসন। অথচ মুক্তিযুদ্ধের পরই রাজনীতি বিপরীত স্রোতের দিকে ধাবিত হয়েছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা, অস্থায়ী ও ১৯৭২ সালের সংবিধানের নিরিখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাখ্যা হাজির করেন তিনি।

রাজনীতিবিদ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আলোচনা শুরু করেন একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল কি এক দশকের? মুক্তিযুদ্ধ কোনো কেবল সামরিক যুদ্ধ ছিল না। এর ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তি। তেভাগা আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ক্ষুধিরামের আত্মত্যাগের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধ নিহিত ছিল। অথচ আমরা এমনভাবে ইতিহাস শুরু করি যা ১৯৪৭ সালে শুরু হয়, যেন এর আগে অন্ধকার ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা একেকটি এলাকা ফুলের বাগানের মতো সাজিয়েছিলাম। দুর্নীতি, লুটপাত, ধর্ষণ ছিল না। কিন্তু স্বাধীনতার পর এগুলো কিভাবে এলো? রাষ্ট্র কিভাবে ক্যাসিনোর রাজ্য হয়ে উঠলো? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের বিকল্প শক্তি দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।  তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন। এক. যারা নীতি, আদর্শ উপলব্ধি করে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন; দুই. পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে যারা মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিলেন; তিন. লাভালাভের হিসেব করে যারা মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। এসময় তিনি বলেন, আদর্শগত দিক থেকে অনেক কিছুই আমরা উপলব্ধি করতে পারিনি। আমাদের উচিত ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরে আদর্শিক জায়গা থেকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখন পলিটিক্স রাজনীতি ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। কেবল জিন্দাবাদের রাজনীতি, কারো কোনো আদর্শিক অবস্থান নেই।

সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, তরুণদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গতানুগতিকভাবে উপস্থাপন করেছি। জীবন্ত ইতিহাস হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। গবেষক সালেক খোকন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অত্যন্ত মর্মান্তিক ও জীবন্ত তিনটি ঘটনা তুলে ধরেন। এতে উপস্থিত অতিথি ও শ্রেুাতাদের অনেকের চোখের জ্বলে ভেসে গেছে। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জরাঝীর্ণ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চিন্তার সক্ষমতা ছাড়া কোনো রাষ্ট্র দাঁড়াতে পারে না। “কলোনাইজড” মন নিয়ে আমরা এখনো জ্ঞানচর্চা করছি। এর কার্যকারিতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল নারী-পুরুষ সকলে সমভাবে মানুষ হিসেবে মর্যাদা পাবেন, নারীরা সমাজে শ্রদ্ধা পাবেন, সাম্প্রদায়িকতার বাইরে গিয়ে মানুষ পরস্পরকে বরণ করে নিবেন, রাষ্ট্রে মানুষ ন্যায়বিচার পাবেন। এগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তি।

শেয়ার করুন