১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০৪:৪১:৪৪ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশে ৭৫ দিন
সালেক সুফী,বাংলাদেশ থেকে ফিরে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২২
বাংলাদেশে ৭৫ দিন


বাংলাদেশ। আমার মায়ের দেশ।  ১৯৫৪ সালের ১৪ এপ্রিল ( পহেলা বৈশাখ) ঝালকাঠিতে জন্মের পর শৈশব ,কৈশোর , যৌবনের স্বর্ণালী দিন কাটিয়ে ২০০৫ পারি জমিয়েছি অস্ট্রেলিয়ায়।  বিশ্বের ৪০ দেশের ৭০ শহরে নানা কাজে পরিদর্শন করেছি। থেকেছি মেলবোর্নে , সিডনি , ব্রিসবেন ,পার্থ, এডিলাইড ,ওয়াশিংটন, মস্কো, ক্যালগারি ,লন্ডন ,প্যারিস, আমস্টারডাম, ব্রুসেলস ,দেলেমন্ট ,লুজার্ন , রোম  ,এথেন্স, দুবাই , দোহা ,  বালি, কুয়ালামপুর , সিঙ্গাপুর ,ব্যাংকক, হংকং, টোকিও , হিরোশিমা , কিয়োটো, দিল্লী, কলকাতা , ইয়াঙ্গুন, কাঠমান্ডু , কাবুল কত শহরে না দেখেছি।


কিন্তু বাংলাদেশে এখনো গেলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।  ফিরে আসার সময় কষ্ট পাই। এবারে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষদের অনেক আদর স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছি। জানিনা পরিবর্তিত  বিশ্বে আবার যাবার সুযোগ হবে কিনা সহসা।  ভাবলাম, লিখে রাখি স্মৃতিগুলো। দুনিয়ার শ্রেষ্ট শহর মেলবোর্ন থেকেছি ১৬ বছর। এখন থাকি গোল্ড কোস্টের কাছাকাছি। জানি ঢাকার সঙ্গে তুলনা করা বোকামি।  তবু ঢাকা আমার প্রিয় শহর ,বাংলাদেশ আমার প্রিয় দেশ। 

করোনার দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর জুলাই মাসের শেষ দিকে পারিবারিক বিশেষ কাজে বাংলাদেশ গিয়েছিলাম। নানা কাজে সম্পৃক্ত থেকে দীর্ঘ ৭৫ দিন যাবত বাংলাদেশে, আর  কয়েকদিন মালয়েশিয়া থেকে ব্রিসবেন ফিরেছি ১৪ অক্টোরব শুক্রবার। বাংলাদেশ সফরের  মূল উপলক্ষ ছিল ফরিদপুরে আমাদের পৈতৃক বাড়ি মায়ের নাম নাম "ইফ্ফাত মঞ্জিল" ডেভেলোপারদের দিয়ে পুননির্মাণ। ভেবেছিলাম  তিন সপ্তাহ বাংলাদেশে থাকবো। কিন্তু নানা কারণে তিন মাস থাকতে হলো।  মায়ের দেশে দীর্ঘ সময় কাটানো ভালো লেগেছে। মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেছি নানা কাজের সাথে। বিশেষ করে গ্যাস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ উপভোগ করেছি। কয়লা এবং পাথর খনি পরিদর্শন করেছি। নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে কাজ করেছি। আমাদের বাবা, মা ,বড়ো দুই বোন পরলোকে।  অবশিষ্ট আছি আমি আর ছোট ভাই সাকি। এবার কিন্তু বাংলাদেশে সবাই আমাদের আপ্রাণ করে আগলে রেখেছে। বিশেষত বুয়েট বন্ধুর পরিবার , এনার্জি এন্ড পাওয়ার আমজাদ রিপা দের কথা না বললেই নয়। 



অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী হওয়ার পর এতো দিন একনাগাড়ে বাংলাদেশ থাকা হয় নি। পৌঢ়ত্বের এই সময়ে বাংলাদেশে বৃষ্টি বিহীন তীব্র গরমে কষ্ট হলেও দেশের এক প্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে ঘুরেছি , সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেছি নিবিড়ভাবে। শত সমস্যার মাঝেও বিপুল সম্ভাবনা উপলব্ধি করেছি। সাতক্ষীড়াা থেকে রাজশাহী , দিনাজপুর থেকে পটুয়াখালী , গাজীপুর , কুমিল্লা , টাঙ্গাইল, ফরিদপুর প্রতিটি স্থানে সবার অফুরন্ত স্নেহ ভালোবাসা পেয়েছি। সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যমান গ্যাস বিদ্যুৎ সংকটের স্বরূপ উন্মোচনের , সুপারিশ করার।  অনেক লিখেছি, অনেক বার ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় উপস্থিত হয়েছি জ্বালানি আর ক্রীড়া বিষয়ক আলোচনায়। বুয়েট সহপাঠীর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছি , আমাদের এনার্জি এন্ড পাওয়ার পত্রিকা , রংবেরং মাসিক পত্রিকায় লিখেছি।  সুযোগ পেয়ে হাওয়া আর পড়ান নামের দুটি ভালো লাগা মুভি দেখেছি। কত স্মৃতি ধরে রাখা যায়। 

২৪ জুলাই সকাল থেকেই জড়িয়ে পড়েছি নানা কাজে।  প্রথম দিন প্রখ্যাত ধারভাষ্যকার আলফাজ ভাইয়ের কর্মস্থল তৈরী পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট দেখে শুরু। রাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আলোচনা থেকে পথচলা। ফরিদপুরে বা পরিবারের সবাইকে নিয়ে সফর নিঃসন্দেহে নস্টালজিক ছিল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রথম বারের মতো দেখায় ভিন্ন রকম আকর্ষণ ছিল।  ভালোয় ভালোয় ডেভেলপার সঙ্গে কাজ শেষ হলো।  শিউলি অপার কলেজ আর আমাদের রাজেন্দ্র কলেজ স্মৃতিময় সময় কেটেছে। একরাত ফরিদপুর থাকার পর পুরোনো পথে আরিচা হয়ে ঢাকা ফিরি। 

শুরু হয় জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে সম্পৃক্ততা। বিপিএমআই উপস্থিত হয়ে বিদ্যুৎ সেক্টরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিলাম বিদ্যমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আধুনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। 

জিটিসিএলে আমার পুরানো সহকর্মীদের সঙ্গে বিশ্ব জ্বালানি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সমস্যা আর সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত মোট বিনিময় করি। আমার বুয়েট সহকর্মীর প্রতিষ্ঠান প্রকৌশুলি সংসদ সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির লিকেজ অনুসদ্ধান এবং রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করছিলো সিডিএম প্রকল্পের আওতায়। এই কাজ গ্যাস সঞ্চালনে বিস্তৃত করার প্রয়াসে সার্ভে করার সিদ্ধান্ত  হলো। আমি নিজে  পিএসএলে পরামর্শকের  দায়িত্ব  নিলাম। 

বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্প কারখানাগুলোর করুন অবস্থা আমাকে বিচলিত করলো। সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু দিন বাংলাদেশে অবস্থান দীর্ঘায়িত করে গ্যাস কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করবো। যেখানে সম্ভব ছাদে সৌর বিদ্যুৎ বসানোয় সহায়তা করবো। (চলবে)



শেয়ার করুন