২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:১৭:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


মুনার তিন দিনব্যাপী কনভেনশন শুরু ১৮ আগস্ট
রশীদ আহমদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
মুনার তিন দিনব্যাপী কনভেনশন শুরু ১৮ আগস্ট


করোনাকালীন বিরূপ পরিস্থিতির কারণে গত ৩ বছর আমেরিকান-বাংলাদেশিদের অন্যতম বৃহৎ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। দীর্ঘ বিরতির পর এবার নতুনরূপে এবং আরো বৃহৎ পরিসরে ‘মুনা কনভেনশন-২৩’-এর আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী কনভেনশনের প্রাথমিক সব প্রস্তিুত ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যের পেনসিলভানিয়া কনভেনশন সেন্টারে আগামী ১৮, ১৯ ও ২০ আগস্ট (শুক্র, শনি ও রোববার) অনুষ্ঠিত হবে এবারের মুনা কনভেনশন-২৩। আয়োজকরা আশা করছেন এবার মুনা কনভেনশনে প্রায় ২০ হাজার লোক অংশগ্রহণ করবেন।

‘আল-কোরআন গাইডেন্স ফর হিউম্যানিটি’ সেøাগানকে প্রতিপাদ্য করে এবারের কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মুসলিম জীবনে বিশেষ করে বাংলাদেশি-আমেরিকান পরিবারের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

উল্লেখ্য, মুনা হচ্ছে আমেরিকার একটি দাওয়াতি ও সামাজিক সংগঠন। মানুষের ব্যক্তিগত, নৈতিক ও সামাজিক মানোন্নয়নের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় মুনা। ১৯৯০ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে করপোরেশনভুক্ত হওয়া সংগঠনটি বর্তমানে ৪০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যে নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। একটি দাওয়াতি সংগঠন হিসেবে মুনা মুসলিমদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলাম পালনের পাশাপাশি অমুসলিমদের কাছে ইসলামের সঠিক শিক্ষা তুলে ধরার আহ্বান জানায়। অলাভজনক সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় এ সংগঠন কোনো দেশের কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। নিজস্ব সংবিধান ও কর্মসূচির আলোকেই সংগঠনটি জন্মলগ্ন থেকে পরিচালিত হচ্ছে। মুনা চায় এমন প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের উন্নয়ন, যারা স্রষ্টা বা প্রতিপালক আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সমাজে রাখবে উৎপাদনমুখী ভূমিকা। এবারের ২০২৩ হচ্ছে ৬ষ্ঠ কনভেনশন। এবারের কনভেনশনে ২০ হাজার ডেলিগেটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৫ হাজার রেজিস্ট্রেশন ছাড়িয়ে গেছে।

কনভেনশন সফল করতে মুনার ন্যাশনাল, জোনাল, চ্যাপ্টার ও সাব চ্যাপ্টারের দায়িত্বশীলরা দিনরাত পরিশ্রম করে চলছেন। বিভিন্ন সময় ইমাম-ওলামা, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আলোচনা, ডিনার পার্টি, সংবাদসম্মেলন, ব্রিফিংসহ নামাভাবে প্রচার-প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুনার দায়িত্বশীলরা জানান, অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও মুনা রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন নয়। মুনা চায় সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, ইনসাফ ও রাজনৈতিক সচেতনতা গড়ে তুলতে, যাতে তারা রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিকেরা সচেতনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। মুনা আমেরিকায় জাতীয়ভিত্তিক সংগঠন হলেও এর প্রাথমিক লক্ষ্য বাংলা ভাষাভাষী তথা বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটি। এটি প্রধানত বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যেই কর্মকা- পরিচালনা করে। মুনা চায় মুসলিমরা এখানকার মূলধারার জীবনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করবে এবং একই সঙ্গে নিজের আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করবে। তাই মুনা চায় আরো বেশিসংখ্যক বাংলাদেশিকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে। এ ক্ষেত্রে মুনা ইয়ুথ ও ইয়ং সিস্টার অব মুনার সঙ্গে সন্তানদের সম্পৃক্ত করতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানায় মুনা। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও তরুণদের জন্য থাকবে আলাদা ইয়ুথ কনভেনশন। আলোচনা ছাড়াও থাকবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকবে বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান। এছাড়া ফিলাডেলফিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য থাকবে নানা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের সুযোগ।

এবারের কনভেনশনের মূল থিম ‘আল-কোরআন গাইডেন্স ফর হিউম্যানিটি’ এ কারণে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, কোরআন গোটা মানবজাতিকে সত্য ও সঠিক পথ দেখায়। কোরআন হচ্ছে বিশ্বাসী মানুষের বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই মহাগ্রন্থের কল্যাণকর পতাকা প্রতিটি হৃদয়ে, প্রতিটি ঘরে। তাছাড়া ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ পরিবর্তনের একমাত্র শাশ্বত বিধান এই কোরআন। এটি শুধু মুসলিম তথা ইসলামে বিশ্বাসীদের জন্য নয়, এটা গোটা মানবগোষ্ঠীর উন্নতি ও অগ্রগতির সোপান। 

মুনা নিজের সদস্য ও অন্য মুসলিমদের নিয়ে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে চায়, যাতে তারা অন্য ধর্মাবলম্বী, ভিন্ন ভাষাভাষী বর্ণ ও গোত্রের জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে পারস্পরিক সংলাপে নিয়োজিত হতে পারে। যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বোঝাপড়া, সামাজিক প্রসার ও উন্নয়ন ঘটানো যায়। মুনা মনে করে, এ প্রক্রিয়ায় সমাজের সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। এবারের কনভেনশন এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

মুনা চায় বাংলাদেশি-আমেরিকানরা কর্মতৎপরতায় বেশি বেশি করে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুক। সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে বাঁচাতে চায়। প্রতিটি বাংলা ভাষাভাষী অভিভাবক তাদের সন্তানকে মুনা ইয়ুথ এবং ইয়ং সিস্টার অব মুনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করুক। মুনা চায় বাংলাদেশি-আমেরিকানদের আমেরিকার মূলধারার মুসলিম স্কলার ও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।

এবারের কনভেনশনে দিকনির্দেশনা-সংবলিত আলোচনা রাখবেন বিশ্বখ্যাত আলোচকবৃন্দ। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় আলোচকরা আলোচনা করবেন। সম্মেলনে প্রতিবারের মতো এবারও রয়েছে কোরআন ও নাশিদ প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি থাকছে মনোজ্ঞ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ইসলামি পণ্য ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকান নিয়ে বিশাল বাজার। শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘লার্ন এন্ড ফান’ এবং বিভিন্ন খেলাধুলা রাইডের ব্যবস্থা। প্রতিযোগিতার প্রতিটি বিভাগে রয়েছে আলাদা আলাদা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বা তালিকাভুক্ত হওয়ার বেশ কিছু নিয়মাবলি। এছাড়া ফিলাডেলফিয়া ভ্রমণকারীদের জন্য থাকছে নানা দর্শনীয় স্থান পরিবহন ও পরিদর্শনের সুযোগ। পরিবার-পরিজন, বন্ধু, স্বজন আর গোটা আমেরিকা থেকে আসা বাংলা ভাষাভাষীদের এই সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় অংশগ্রহণের সুবর্ণ সুযোগ।

মুনা কনভেনশনে দূর থেকে আসা ডেলিগেটরা থাকবেন বিভিন্ন হোটেল এবং প্রাইভেট বাসাবাড়িতে। তবে কনভেনশন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ম্যারিয়ট, শেরাটন, হিলটন, ডাবলট্রিসহ ১২টি উন্নতমানের হোটেল ইতিমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে জানা গেছে। তবে পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য থেকে আসা ডেলিগেটরা নিজ নিজ ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন কনভেনশনে যাওয়া আসা করবেন। ডেলিগেটদের আপ্যায়নের জন্য কয়েকটি রেস্টুরেন্টের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। যদিও খাবার নিজ খরচেই খেতে হবে।

কনভেনশনের প্যারালাল বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারে মুনার সংশ্লিষ্ট বিভাগের পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ফিলাডেলফিয়ায় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য এবারের কনভেনশনের কনভেনর ও সংগঠনের ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কনভেনশনের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। তবে তিনি ডেলিগেটদের সময়মতো কনভেনশনে যোগদান করে সুষ্ঠু ও সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন