২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:৫৭:৪৭ পূর্বাহ্ন


একতরফা নির্বাচন দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : চরমোনাই পীর
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৩
একতরফা নির্বাচন দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : চরমোনাই পীর ইসলামি আন্দোলনের সভায় নেতৃবৃন্দ


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীরসাহেব চরমোনাই বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক চড়াই-উৎড়াই হলেও এবারের সমস্যা অতীতের যেকোন সমস্যার চেয়ে জটিল ও বহুমাত্রিক। দেশ আক্ষরিক অর্থেই গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। 

গত ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সাথে জাতীয় সংলাপে লিখিত বক্তব্যে দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীরসাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন। 

পীরসাহেব চরমোনাই আরো বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে সীমানার বাইরে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। ভূ-রাজনীতির জটিলতা দেশ পরাশক্তির বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতি প্রতিষ্ঠানিকভাবেই ধ্বংস হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হত্যা করা হয়েছে, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জায়গা নষ্ট করে রাষ্ট্রকেই অকার্যকর করা হয়েছে। চিন্তা, বুদ্ধি ও কথাবলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদেরকে চরমভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এ অবস্থায় জাতির মুক্তির জন্য, মানবাধিকার এবং ভোটাধিকার রক্ষায়, রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায়, ৭১ এর অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায়, দেশের অর্থনীতি রক্ষায়, মানুষের জান-মাল রক্ষায় ও দেশকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে কি করণীয় তা নির্ধারণে সম্মিলিত পথ-পন্থা খুঁজে বের করতেই আজকের সংলাপ। ঐক্যমতের ভিত্তিতে মুক্তির পথ উন্মোচন করতে হবে।

দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসানাত আব্দুল্লাহ কাইয়ূম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান নিজু, এবি পার্টির মহাসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের জননেতা বাচ্চু ভুইয়া, বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, বিএফইজে’র সভাপতি এম. আব্দুল্লাহ. সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, বিশিষ্ট গবেষক ড. গোলাম মাওলা রনি, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, সম্মিলিত ওলামা ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি, গণঅধিকার পরিষদের যগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ এনডিপির মহাসচিব ড.শাহাদাত হোসেন সেলিম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, নাগরিক ঐক্যের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম কায়সার, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, এনপিডির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে পীরসাহেব চরমোনাই ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, পীরসাহেব চরমোনাই’র এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলো এখানে উপস্থিত। এটা একটা বিশাল শক্তি। সরকারের জুলুম নির্যাতন আমাদেরকে এক হতে সহায়তা করেছে। পীর সাহেব চরমোনাইর এ উদ্রোগ ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। পীরসাহেব চরমোনাইর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি আজকে আশার আলো সঞ্চয় করেছেন। এর সফলতায় আপনাকে নেতৃত্ব দিতে হবে। নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র উপেক্ষিত, জনমতের প্রতিফলন নেই, মানুষ না খেয়ে মারা যায়, মানুষ বিচারহীনতায় ভুগে, নিরাপত্তা নেই, সুবিচার বঞ্চিত সেখানে এত উন্নয়ন মানে হলো কবরস্থানে আলোকসজ্জার নামান্তর ও অর্থহীন। ঋণ করে ঋণ শোধ করতে হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ইসলামী আন্দোলনের স্মরণকালের সর্ববৃহত মহাসমাবেশ, তফসিলের প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এবং একতরফা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে অব্যাহত আন্দোলন করায় আমাদের আবেগ ও শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেছে। আমাদের সংশয়কে পীর সাহেব ভুল প্রমাণিত করে দিলেন। আপনাদের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমত তৈরি হয়ে গেছে। এখন সম্মিলিতভাবে ডাক দিলে সরকারের অস্তিত্ব থাকবে না। সরকারের পতন সময়ের ব্যবধান মাত্র।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, আজকের সংলাপের বক্তব্যে নীতিগতভাবে সকলেই একমত। ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে আমাদের সংশয় দূর হয়ে গেছে। কাক কারে গোশত খায় না। অথচ আওয়ামী লীগ নিজ দলের প্রার্থীদের ডামি প্রার্থী দিয়ে কাকের গোশত খাওয়া শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে নির্বাচন চরম বেঈমানি। নির্বাচনের আগেই কে বিরোধী দল হবে প্রধানমন্ত্রী তা ঠিক করছে জাতিকে তা দেখতে হচ্ছে, এটা নির্বাচনের নামে তামাশা। ভোট চোর-ভোট ডাকাতদের পক্ষে থাকায় ভারতের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হয়েছে। এটা ভারতের পরাজয় প্রমাণিত।

পীরসাহেব চরমোনাই সকল রাজনৈতিক দল ও জন সাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন আমরা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে সকল দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, ব্যাংক লুন্ঠনকারী ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করি। দুর্নীতিকে মূলোৎপাটন করতে পারলে, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করতে পারলে চালের দাম কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৪০ টাকা করা যায়। একই ধারাবাহিকতায় ডাল, তেল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী মূল্য ৩০% কমিয়ে আনা যায়। উৎপাদনমুখী শ্রমিকদের সর্বনি¤œ মজুরী ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা নির্ধারণ করা যায়। সকল পরিবহণের যাত্রীভাড়া ৩০% কমানো যায়। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলও ৩০% কমানো যায়। তিনি বলেন, বিদ্যমান জাতীয় সংকট নিরসনে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারী রাজনৈতিক ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে মানুষের ভোটাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতি, দুঃশাসন ও সন্ত্রাসমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ কল্যাণরাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলি।

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা ৩টি প্রস্তাব আপনাদের বিবেচনার জন্য পেশ করছি- : ১.বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত একতরফা তফসিল বাতিল করে গ্রেফতারকৃত বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

২.বর্তমান বিতর্কিত পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। (জাতীয় সরকারের গুরুত্ব, বাস্তবতা ও রূপরেখা জাতীয়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।) 

৩. কার্যকরি সংসদ, রাজনৈতিক সংহতি এবং শতভাগ জনমতের প্রতিফলনের জন্য পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন’ই অধিকতর উত্তম পদ্ধতি; যা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে তা প্রবর্তন করতে হবে।

শেয়ার করুন