২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:০৯:৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


দল বাঁচাতে চুপচাপ জামায়াত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৩
দল বাঁচাতে চুপচাপ জামায়াত


আবারো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিশ্চুপ। নেই তেমন সাড়া-শব্দ। রাজনৈতিক অঙ্গনে সুনশান নিরবতা দলটিতে। কিন্তু কেনো এমন অবস্থান নিয়েছে দলটি- তা নিয়ে নানান ধরনের গুঞ্জন বাতাসে। চলতি বছরের রাজধানীতে ১০ বছর পর ১০ জুনে পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে সমাবেশ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশ করছেন তারা। এর আগে নানান ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করে দলটি। এই সমাবেশের আগে কর্মসূচির অনুমতি নিতে গিয়ে জামায়াতের ৪ আইনজীবী আটক হয়েছিল। কর্মসূচি পালনে সহযোগিতার আবেদন দেয়ার সময় জামায়াতের চার আইনজীবীকে আটকের দুই ঘণ্টা পর ছেড়েও দিয়েছিল পুলিশ। তবে এ সময় ঠিকই জামায়াতের আবেদনও গ্রহণ করে পুলিশ। 

এই সময়ে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এবং জামায়াত আমিরসহ আটক সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে ৫ জুন সোমবার বিকেল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল আহ্বান করেছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী শাখা। মূলত ৫ জুনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে সহযোগিতার আবেদন নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একটি প্রতিনিধি দল সশরীরে ডিএমপি কার্যালয়ে যান। ডিএমপি থেকে সাক্ষাৎ শেষে প্রতিনিধিদলের প্রেস ব্রিফিং করার কথা ছিল। অবশ্য সে-ই কর্মসূচির অনুমতি না দিলেও একেবারে বড়ো কর্মসূচি অর্থাৎ ১০ জুনের সমাবেশের অনুমুতি পায় দলটি।

এই সমাবেশ অত্যন্ত সফলভাবে করে দলটি। আর এর পর থেকে তারা দফায় দফায় দলটি রাজধানীর বাইরেও সমাবেশে অনুমতি চায়। কিন্তু ১০ জুনে সমাবেশ করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন খুবই রাজনৈতিক বেকায়দায় পড়ে যায়। দেশে বিদেশে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের দহরম মহরমের খবরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে দলটি। এতে জামায়াতও পড়ে বেকায়দায়। এমন কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বুদ্ধিজীবী, আইনজীবীরা গর্জে উঠে। 

এমন পরিস্থিতিতে খবর প্রকাশিত হয় যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানি আগামী ১০ আগস্ট ধার্য করে আদালত। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। উচ্চ আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন দাবি করায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয় শুনানির জন্যে ৩ আগস্ট কার্যতালিকায় ছিল। 

একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় শুরুতেই বিষয়টি মেনশন করেন রিটকারি আইনজীবী ব্যারিস্টার তানীয়া আমীর। আপিল বিভাগকে তিনি বলেন, মামলা কার্যতালিকার মধ্যেই ৪ আগস্ট জামায়াত সমাবেশ করলে আদালত অবমাননা হবে। এ সময় আপিল বিভাগ বলেন আদালত অবমাননার আবেদন আনুন। পরে আদালত শুনানির এ দিন ধার্য করেন। জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গত ২৬ জুন আবেদন করেছেন মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মো. হুমায়ুন কবির ও ইমদাদুল হক নামে তিনজন। রিটকারি আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে আমরা দুটি আবেদন করেছি। তার মধ্যে একটি হলো আদালত কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সেই নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে তারা, যেটা আদালত অবমাননার শামিল। 

আরেকটি হলো জামায়াতের ব্যানারে বা তাদের প্রতীক ব্যবহার করে রাজনৈতিক সব ধরনের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। চেম্বার আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে শুনানির জন্য ৩১ জুলাই দিন ঠিক করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছে। এতে আরো জানান হয় দীর্ঘ সময় পর পুলিশের মৌখিক অনুমতি নিয়ে গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করে জামায়াত। সমাবেশে তারা নিজেদের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করে এবং দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি চায়। আবার আগামী ৪ আগস্ট সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে জামায়াত।

সাঈদীর মৃত্যুতে আরো বেকায়দায় জামায়াত

জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া নিয়ে যখন চলে নানান ধরনের বির্তক, ঠিক সেসময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত্র হয়ে জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যান ১৪ আগস্ট। ঢাকায় শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানান। তার জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালের সামনে এসে বিক্ষোভ করছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে সেসময়। যদিও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিবারের পক্ষ থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা না করায় জামায়াত সর্ম্পকে আরো ভুল মেসেজ চলে যায় দেশে বিদেশে। সাঈদীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এলাকা এবং শাহবাগ মোড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা হয়েছে।

সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতাসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এমন ঘটনায় জামায়াত আরো বেকায়দায় পড়ে। ফলে দলটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেশে বিদেশে চাপ আরো বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে খবরে দেখা যায় জামায়াত বেশ চুপচাপ। আর কোনো স্থানে সমাবেশ বা কোনো কর্মসূচি পালনে আওয়াজ নেই। এমন পরিস্থিতির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া আবেদনের শুনানির জন্য ৩১ আগস্ট তারিখ রেখেছিল আপিল বিভাগ। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই তারিখ রাখেন। 

এমন পরিস্থিতিতে দলটি তাদের সমাবেশ কর্মসূচি দূরে থাক দল বাঁচানোই বড়ো কাজ বলে মনে করেছে। আর এমন পরিস্থিতিতে আর বেশি বাড়াবাড়ি না করে চুপচাপ থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে করে তারা। কেননা জামায়াতের নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানি ছিল ১০ আগস্ট। নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানির দিনই দলটিকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে- এমন আশঙ্কা বিরাজ করছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। আর এর আগে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে ধর পাকড়ের শিকার হতে পারে বলেই তাদের মধ্যে আশঙ্কা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত ভাবছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ক্ষেপিয়ে ভবিষ্যতে দলই নিষিদ্ধ হয়ে যায় নাকি- তাই দলটি এখন সামনের দিকে এগুতে সাবধানে চলছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ার করুন