বরিশালের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল /ছবি সংগৃহীত
দুদিন আগ থেকেই বাস ধর্মঘটের নামে বরিশাল শহর অভিমুখী বাস বন্ধ করে দেয়া, এরপর তিন চাকার যানবহনও বন্ধ। ঢাকা বরিশালের লঞ্চ সহ সকল নৌযান পরিবহন বন্ধ। কার্যত বরিশাল শহর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দেশের অন্যসব এলাকা থেকে। এমনি মুহুর্তেও অন্তত তিনদিন আগ থেকেই শহর অভিমুখে মানুষের ঢল। বেলস পার্কে আগের দুই রাতে খোল আকাশের নীচে মানুষ ঘুমিয়ে কাটায়। ধীরে ধীরে গোটা শহরে বিভিন্ন উপায়ে মানুষ এসে অনেকটা জনসমুদ্র হয়ে যায়। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ছিল। কিন্তু তারা বাধা দেয়নি। এরপরও কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত বিকেল ২টায় শুরু হওয়া সমাবেশ মানুষের চাপে শুরু করে দেয় বিএনপি কর্তৃপক্ষ সকাল ১১টা থেকেই।
বেলস পার্কের এ বিশাল সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার বিদ্যুতের স্বয়ংসম্পুর্নের কথা বললেও বাস্তবে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে, হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে তারা। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করে যাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা নেই, তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। এমন একটি খাত পাবেন না, যেখানে থেকে তারা চুরি করেনি। এখন তারা দুর্ভিক্ষের কথা বলছে। এমতাবস্থায় আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেণ, এই সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবে। ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। এখন চালের কেজি ৬০ ৭০ টাকা। চাকরি দিয়েছে আওয়ামী লীগের ছেলেদের। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিয়েছে তারা।
বিএনপি সরকার থাকাকালীন বরিশাল বিভাগ করে দিয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বরিশালে বিশ্ববিদ্যালয়, বিকেএসপি করেছিলাম। আর এই সরকার দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। তারা টাকা পাচার করে বৈশ্বিক সমস্যার কথা বলছেন। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কথা বলছেন। তারা এখন দুর্ভোগের কথা কেন বলছেন? যখন বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন, তখন এই কথা মনে ছিল না? আমাদের কাছে হিসাব আছে, কত টাকা কত কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।
শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক ) এ সম্মেলন মুলত বিএনপির প্রতিটা বিভাগীয় শহরে -খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দলের নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে।
বেলসপার্ক এ বিএনপির সমাবেশের একাংশ/ছবি সংগৃহীত
এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে। বর্গী হল দস্যু। যারা সবকিছু লুট করে নিয়ে যেত। এরা একবারও নেই যে ভোট চুরি করেনি। যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। আওয়ামী লীগের চরিত্র দুটি জিনিষ আছে। একটি চুরি একটি সন্ত্রাস। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। এখন নতুন করে ভোট চুরি ফন্দি আটছে। কিন্তু এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সে সরকার নির্বাচনের কৌশল কী করবে সেটা তারা ঠিক করে নেবে।
বিএনপি আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি মজিবুর রহমান সরোয়ার,
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।
