২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:৪৯:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


দেশকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
আমি তো এখনো জেলেই আছি
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
আমি তো এখনো জেলেই আছি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী


মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বাংলাদেশের জনপ্রিয় নির্মাতা। তবে সম্প্রতি তিনি নতুন পরিচয়ে হাজির হয়েছেন দর্শকদের সামনে। ক্যামেরার সামনে থেকে হঠাৎ করেই দাঁড়িছেন সামনে। অর্থাৎ নির্মাতা এবং অভিনেতা। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির। 

প্রশ্ন: সম্প্রতি ওটিটি অ্যাপে প্রকাশ হওয়া ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’-তে প্রথম বারের মতো অভিনয় করলেন। অভিজ্ঞতা কেমন? 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: এতদিন আমি পর্দার আড়ালে ছিলাম, আমার অনুপ্রেরণায় অভিনেতারা নিজেদের আবেগ ফুটিয়ে তুলতেন। এবার আমি সবার সামনে নিজেকে মেলে ধরছি, মনে হচ্ছে যেন নিজের আবেগকে নগ্ন করছি সকলের সামনে! 

প্রশ্ন: নিজের নতুন পরিচয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: কখনো ভাবিনি অভিনয় করব। সেটাও করা হয়ে গেল। ফলে একধরনের সংকোচ ভাব তো আছেই। একই সঙ্গে উত্তেজনাও কাজ করছে। নিজেদের জীবন থেকে গল্প বের করার মধ্যে একটা ভালনারেবিলিটি আছে। কিন্তু হৃদয় খুঁড়ে বেদনা বের করে আনাই তো শিল্পীর কাজ।’

প্রশ্ন: এই কাজটির পেছনে অনুপ্রেরণা আসলে কি ছিল? 

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী: নিজের সময়টার সাক্ষী হওয়া ছাড়া আমাদের আর কীই-বা করার আছে। আমরা এখানে সেটাই করার চেষ্টা করেছি। বাবা-মা হিসেবে আমরা বিশেষ কেউ না। সব মা-বাবার গল্পই এক। সন্তানের জন্য সব মা-বাবারই স্পেশাল ত্যাগের গল্প আছে, আনন্দের গল্প আছে, বিব্রতকর গল্প আছে-এই ছবিটা যদি তাঁদের সেসব অনুভূতির কথা মনে করিয়ে দেয়, তাহলেই আমরা খুশি হব।’

প্রশ্ন: এই অটোবায়োগ্রাফির কতটা বাস্তব আর কতটা কল্পনাপ্রসূত?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : ফিফটি-ফিফটি। কিন্তু যদি বলি, সিক্সটি পার্সেন্ট ফ্যাক্ট, তাহলে বাকি ফোরটি পার্সেন্ট কি মিথ্যা? না। এই যে ফোরটি পার্সেন্ট, এটা হয়তো আমাদের জীবনে অন্যভাবে ঘটেছে। আবার যে অংশটুকু সত্যিই আমাদের জীবনে ঘটেছে, সেটাও কি হুবহু এভাবেই ঘটেছে? সেটাও কিন্তু না, ওটাও রিকনস্ট্রাক্ট করেছি আমাদের প্রয়োজনে। ফলে এটা একটা ফিকশন। অ্যাট দ্য সেম টাইম এটা মিথ্যা না। 

প্রশ্ন: জেলে যাওয়ার মতো ঘটনা তো আপনার জীবনে ঘটেনি। এই ঘটনাটা কেন সিনেমায়?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : আমি তো এখনো জেলেই আছি।

প্রশ্ন: মানে?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : জেলে তো আপনি ফিজিক্যালি থাকতে পারেন, আবার মেন্টালিও থাকতে পারেন। আমি তো নানাভাবেই জেলে আছি। 

প্রশ্ন: এই যে আফস করার ব্যাপারটা, পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটা?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : এমন আফস করেই তো আমরা বেঁচে আছি। এ রকম অপমানের জীবনই তো আমাদের জীবন। এটা তো শুধু আমার একার অপমান না। আমরা যারা ক্ষমতাহীন, তারা ক্ষমতাবানদের পায়ের কাছে বসে থেকে ক্ষমা চেয়েই তো বেঁচে আছি। বাংলাদেশে ক্ষমতাহীন যত মানুষ আছে, তারা প্রত্যেকেই বুঝবে, এটার অর্থ কী। হাজার হাজার মানুষ আমাকে বার্তা পাঠিয়েছে। কেউ লিখেছে, আপনি যখন পায়ের কাছে বসেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন, তখন আমার কান্না পেয়েছে। 

প্রশ্ন: আপনার জীবনে এমন অপমানের ঘটনা কী কী ঘটেছে?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : অসংখ্য ঘটনা। একটা উদাহরণ দিই। আমার সিনেমা কদিন পরপরই আটকা পড়ে সেন্সর বোর্ডে। একজন ফিল্মমেকারকে অপমান-অপদস্থ করার সবচেয়ে বড় এবং সহজ কৌশল এটা। কতজনের বাসায় ভিডিও প্লেয়ারসহ চলে গেছি সিনেমাটি দেখানোর জন্য। সিনেমা চলছে, উনি এর মাঝে ফোনে কথা বলছেন, ব্যবসা বা রাজনীতির কাজ করছেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে উপদেশ দিচ্ছেন, জ্ঞান দিচ্ছেন- আপনারা কেন এ ধরনের সিনেমা বানান? এটা তো হয়নি। আমি শুনি, বলি, হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন হয়তো। এটা একজন ফিল্মমেকারের জন্য কতটা অপমানের; এমন একেকটা ঘটনার পর আমার বুক ফেটে কান্না এসেছে, মনে হয়েছে, কেন এমন অপমানের জীবন বেছে নিলাম। কেন ফিল্মমেকার হলাম?

প্রশ্ন: সিনেমার গল্পটা কীভাবে তৈরি হলো?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : গল্পটা নিয়ে আমি আর তিশা কথা বলতে শুরু করেছি কোভিডের সময়। বাস্তবে তখন আমরা বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। যখন জানতে পারলাম যে বাচ্চা হবে না, তিশা একটা ট্রমার মধ্যে চলে গেল, মেন্টাল স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তখনই আমরা দুজন ডিসাইড করলাম, এটা নিয়েই লেখা উচিত। লেখা শুরু করলাম। এর মাঝে তিশা কনসিভ করল, গল্পে ওইটা ঢুকছে, আমাদের জীবনে যা যা ঘটছে, সেটা গল্পে ঢুকছে। এই বাজি ফোটানো আমাদের জীবনে ঘটেছে বলেই গল্পে ঢুকেছে।

প্রশ্ন: কেমন ছিল ঘটনাটা?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : ইলহাম (ফারুকী-তিশার মেয়ে) যখন হয়, ৫ জানুয়ারি। তার আগে ৩১ ডিসেম্বর রাতে ভয়ংকরভাবে বাজি ফোটানো শুরু হলো। তার আগের থার্টি ফার্স্ট নাইটে একটা তিন মাসের বাচ্চা বাজি ফোটানোর শব্দে আতঙ্কে প্যানিক অ্যাটাকে মারা গিয়েছিল। ওই নিউজটা আমার মাথায় ছিল। যখন দেখলাম আমার বউয়ের পেটের বাচ্চা বাজি ফোটানোর শব্দে ক্রমাগত লাথি মারছে, আনইউজুয়াল মুভমেন্ট করছে, ওই ঘটনা থেকেই মাথায় এল, এখান থেকেই ঘটনার মোড় ঘুরতে পারে।

প্রশ্ন: নির্মাতা হিসেবে বলুন, অভিনেতা সরয়ার ফারুকী কেমন করলেন?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : আমি এই চরিত্র নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, কাউকে কাউকে রেডি করেও রেখেছিলাম। যদিও আমি জানি, অটোবায়োগ্রাফি বলে এতে তিশার সঙ্গে আমারই অভিনয় করা উচিত। শেষ পর্যন্ত তিশা আর রনির চেষ্টায় আমি রাজি হয়েছি। তবে প্রথম দু-এক দিনের মধ্যে যদি দেখতাম, আমি এই চরিত্রকে যে রকম চাই, চরিত্রটা তার আশপাশেও যাচ্ছে না, তাহলে ডেফিনিটলি আমি ফুটেজ ফেলে দিয়ে অন্য কাউকে দিয়ে চরিত্রটা করাতাম।

শেয়ার করুন