০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০২:১২:৪৫ পূর্বাহ্ন


সরকার ভয় পেয়েছে, ভীত হয়েছে এবং তারা কাঁপছে- মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
সরকার ভয় পেয়েছে, ভীত হয়েছে এবং তারা কাঁপছে- মির্জা ফখরুল


পদত্যাগ না করলে সরকার পতন ‘গণজাগরণই হবে’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকালে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘‘ এই জনসমাবেশের থেকে যে ঘোষণা সেই ঘোষণা থেকে আপনি এই ম্যাসেজ নিয়ে যান আর নাই। আবারো রিপিট করছি আমি, মানে মানে পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’’

‘‘ আমি জানি এখান থেকে আপনারা ঘরে ফিরে যাবেন, ঘরে গিয়ে বসে থাকবেন না। প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে প্রতিটি মানুষকে বলেন, মানুষ জেগে উঠেছে, আপনারাও জেগে উঠেছেন। সেই জাগরণের মধ্য দিয়ে ইনশাল্লাহ অবিলম্বে এই সরকারের পতন এদেশের মানুষ দেখবে।”

পরে বিএনপি মহাসচিব সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণায় আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের নেতৃবৃন্দ আজকে এখান থেকে পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন, সামনে যে কয়েকটা দিন সময় আছে… এই পূজার ছুটি। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন যে আপনারা কি করবে? পদত্যাগ করে স্বসন্মানে সেইফ এক্সিট নেবেন নাকি জনগন দ্বারা বিতাড়িত হবে।”

‘‘আবার আমি তাদেরকে আহ্বান জানাই, জনগনের ভাবনা বুঝতে পেরে, জনগনের আওয়াজ বুঝতে পেরে আপনারা পদত্যাগ করে, পদত্যাগ করে শান্তিপূর্ণভাবে জনগনের স্বার্থে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন যেটা সম্পূর্ণভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনটা হবে।”

‘বাংলাদেশে এখন প্রেসিডেন্ট নাই’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আরেকটা সমস্যা তৈরি করেছে ইতিমধ্যে। আমাকে এক সাংবাদিক ভাই লেখে পাঠিয়েছেন যে, বাংলাদেশে এখন প্রেসিডেন্ট নাই। নাই মানে? দেশে তো কোনো প্রেসিডেন্ট নাই।”

‘‘ আপনার সংবিধানে নিয়ম আছে যে, প্রেসিডেন্ট যদি বাইরে ‍যান তাহলে তাহলে কাউকে দায়িত্ব দেয়ার কথা। আজকে এখন পর্যন্ত দেয় নাই, দেয়া হয়নি। অর্থাত এখানেও তারা (সরকার) সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কাজ করছেন, অসাংবিধানিক কাজ করছেন এখানে্ও পুরোপুরিভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে মহানগর দক্ষিন-উত্তরের যৌথ উদ্যোগে ‘ ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগের এক দফা’ দাবিতে এই সমাবেশ হয়। ফকিরেরপুল থেকে শুরু করে কাকরাইল পর্যন্ত সড়কে নেতা-কর্মীদের তিল পরিমান ঠাই ছিলো না। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জনসমাবেশ জনসমুদ্রে রুপ নেয়।

গত রাতে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত আমরা যে খবর পেয়েছি ২৫০জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।”

‘‘ এই থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, সরকার ভয় পেয়েছে, ভীত হয়েছে এবং তারা কাঁপছে। এটা মনে রাখবেন যে, এই সরকারের পায়ের নিচে কোনো মাটি নেই। তারা পরিস্কার করে জেনে গেছে, এদেশের জনগন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে যে, নো… আর নয়। এখন তোমরা দয়া করে পায়তারি গুটাও, যা চুরি করার করেছো, যে অত্যাচার-নির্যাতন করেছো… এখন মানে মানে বিদায় হও।”

তিনি বলেন, ‘‘ এতো মামলা, এতো গ্রেফতার, এতো নির্যাতন, এতো অত্যাচার তারপরেও কি… আপনাদেরকে দমাতে পেরেছে? নেতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে তাতে কি ভয় পেয়েছেন? মামলা দিয়ে হামলা করে, রেইট করে গ্রেফতার করে আর বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না… এটাই হচ্ছে মূল কথা।”

‘‘ এই কথা যত তাড়াতাড়ি তারা(সরকার) বুঝবে তত তাদের উপকার হবে, তারা সেইফ এক্সিট নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে।”

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৯৬জনকে সাজা দেয়ার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘‘ তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে যে,যারা আমরা নির্বাচন করতে পারি এই ধরনের নেতাদের যদি সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা যায় তাহলে তাদের মাঠ পরিস্কার। সেই আগের মতোই সেইভাবে তারা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে।”

‘‘ কতটা কাওয়ার্ড হলে, কতটা ভীত হলে তারা এই ধরনের ব্যবস্থা গুলো নিচ্ছে। তাই এটা পরিস্কার আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনীতি একেবারে রসাতলে যাবে। আপনারা জানেন, গত কয়েকদিনে অর্থনীতির কি অবস্থা হয়েছে, রিজার্ভের কি অবস্থা হয়েছে? মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করে, লুটপাট করে তারা বিদেশে বাড়ি-ঘর তৈরি করেছে।”

‘আর নতুন নতুন করে উদ্বোধন করে আর একটা করে প্রস্তর খন্ড লাগায়। এই প্রস্তর খন্ডগুলো টিকবে না। এগুলো নিমজ্জিত হতে চলেছে। ওটা দিয়ে কোনো লাভ হবে না… জনগন আর আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’ বলেন তিনি।

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে গতকাল দেখে আসার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আমাদের ডাক্তার সাহেবরা খুবই উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। কারণ তার চিকিতসা এখানে আর সম্ভব না। কত ভয়াবহ, কত অমানবিক, কত দানবীয় এই সরকার অবৈধ ক্ষমতা থাকা এই সরকার তাকে চিকিতসার সুযোগ দিচ্ছে না।”

সরকার পদত্যাগের এক দফার এই কর্মসূচি যুগপত আন্দোলনের সমমনা জে্াট ও দলগুলোও পালন করে। ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, ফকিরেরপুল পানি ট্যাংকের কাছে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জো্ট বিজয় নগরে, এলডিপির এফডিসির কাছে দলের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে।

‘বাড়াবাড়ি করবেন না’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। আরে ভাই কিসের বাড়াবাড়ি? আপনাদের অহংকার বেড়ে গেছে, আপনাদের দাম্ভিকতা বেড়ে গেছে।”

‘‘ আমরা বলতে চাই, এই বাড়াবাড়ি বন্ধ করেন। অহংকারীকে আল্লাহও পছন্দ করেন না। জনতার এই ঢল দেখে বুঝতে চেষ্টা করুন.. আপনারা কোথায় আছেন?”

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে একটা বিষয় বলতে চাই, ওবায়দুল কাদের সাহেব একটা স্বীকাররোক্তি জবানবন্দি দিয়েছেন ১৮ তারিখ বসে যাবেন ? আপনাদের পরিণতি শাপলা চত্বর থেকে ভয়াবহ হবে।”

‘‘ আরে ভাই, আমরা কি বলেছি বসে যাবো? আমি বলতে চাই, আমাদের বসাবসির কর্মসূচি নাই, আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি আছে। শাপলা চত্বরে নিয়ে যে বক্তব্য আপনি রেখেছেন তাতে আপনারা যে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন এটা আপনার স্বীকারোক্তিতে প্রমাণ হয়ে গেছে। মনে রাখবেন কাদের সাহেব শাপলা চত্বরের লোকজন আর আমরা এক না।”

মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় , আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, রাকিবুল ইসলাম বকুল প্রমূখ বক্তব্য দেন।

যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সুলতান আহমেদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্র দলের রাশেদ ইকবাল খান, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন,গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, মুন্সিগঞ্জে কামরুজ্জামান রতন, ঢাকা জেলা খন্দকার আবু আশফাক, টাঙ্গাইলের হাসানুজ্জামিল, নারায়নগঞ্জের সাখাওয়াত হোসেন, মানিকগঞ্জের এসএম জিন্নাহ কবির প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুল হালিম, আতাউর রহমান ঢালী, শাহজাদা মিয়া, মামুন আহমেদ, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, হারুনুর রশীদ, আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, রফিকুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন অসীম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, শরীফুল আলম, ওয়ারেস আলী মামুন, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, নেওয়াজ হালিমা আরলি, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।




শেয়ার করুন