২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:১২:২২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তিন কমিটির কাউন্সিল
আবারও বিভক্তির আগুন জ্বালিয়ে দিলেন খোকন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
আবারও বিভক্তির আগুন জ্বালিয়ে দিলেন খোকন


প্রবাদ আছে-কাজ নাই তো খই ভাজ। এমনই কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের দায়িত্ব পাওয়া আনোয়ার হোসেন খোকন। দীর্ঘদিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোনো কমিটি নেই। দলের মধ্যে হযবরল অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকও করে এসেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। দেওয়া হয়নি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোনো কমিটি। তবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির শীর্ষ চার নেতা-আব্দুল লতিফ সম্রাট, জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহমেদ এবং মিজানুর রহমান মিল্টন ভূইয়াকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করেছেন। যার ফলে একটু স্বস্তি ছিল। কিন্তু দলের মধ্যে বিভক্তি কমানো গেল না। সেই সঙ্গে দেশ এবং দলের এই চরম দুর্দিনে কমিটি না থাকায় এবং যোগ্য নেতৃত্ব না থাকায় হুক্কাহুয়া চিল্লাচিল্লি ছাড়া বাস্তবে কোনো কর্মসূচি ছিল না। ছিল না কোনো লবিং। এরই মধ্যে বছর দুয়েক আগে আবির্ভূত হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট আনোয়ার হোসেন খোকন নামের এক নতুন নেতা। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট এবং সিটি কমিটি গঠনের। দায়িত্ব পেয়েই শুরু হলো তোড়জোড়। সকাল-বিকাল, সন্ধ্যা-রাত কাটতে থাকে ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপ মিটিংয়ে। দীর্ঘ কয়েক মাস লম্পঝম্পের পর প্রসব করা হলো তিনটি আধা বিকলঙ্গ কমিটি। ৪১ সদস্যবিশিষ্ট নিউইয়র্ক স্টেটের আহ্বায়ক কমিটি, নিউইয়র্ক মহানগরকে দুই ভাগ করে উত্তর এবং দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হলো। সেই কমিটি দেওয়া হয় ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। ফোনের পর ফোন, লাগাতার হোয়াটসঅ্যাপ বৈঠকের পর যে তিনটি কমিটি দেওয়া হয়, তাতে আনোয়ার হোসেন খোকনের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের। যারা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে গিলে খেতে চেয়েছিল তাদেরও সেই কমিটিতে রাখা হলো। তাদের খুঁটির জোর কোথায় তা নিয়ে এখনো চলে সমালোচনা। এই তিনটি কমিটিতে এমনো লোক রয়েছে, যাদের কোনোদিন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। কমিটি দেওয়ার পরও তাদের দেখা যায় না। ভাগ্য কাকে বলে! যারা বিএনপির জন্য সময় অর্থ নষ্ট করেছে তাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি, মূল্যায়ন করা হয়েছে যারা আনোয়ার হোসেন খোকনকে খুশি করতে পেরেছেন। অন্যদিকে উড়ে এসে জুড়ে বসলে যা হয়, তাই-ই হয়েছে। আনোয়ার হোসেন খোকন যেন উড়ে এসে জুড়ে বসলেন। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ত্রাণকর্তা হিসেবে অবির্ভূত হলেন। তিনিই যেন একমাত্র এবং অপরাজেয় নেতা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে যেন জগাখিচুড়ি অবস্থা। দায়ী কে? একবাক্যে বলা যায়, আনোয়ার হোসেন খোকন। তিনটি বিতর্কিত কমিটি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। তিনি যে তিনটি কমিটি দিয়েছেন, তাতে বিতর্কিত লোক রয়েছে, বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় নয়-এমন লোকও কমিটিতে রেখেছেন। তিন কমিটিতে ৪১ জন করে ১২৩ জন নেতা রয়েছেন। এদের মধ্যে অর্ধেক সক্রিয়, আর বাকি অর্ধেক আনোয়ার হোসেন খোকনের বদৌলতে নেতা। যাদের অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অবস্থা তথৈবচ।

গত প্রায় ১৮ মাসে এই তিনটি কমিটি একটু স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসে। তারা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়। কিন্তু এরই মধ্যে আনোয়ার হোসেন খোকন নতুন খেলা শুরু করেছেন। কিন্তু কোন উদ্দেশ্যে? প্রতি সপ্তাহে হোয়াটসঅ্যাপ মিটিং করে তার মনে হয় শখ মেটে না বা প্রত্যাশা পূরণ হয় না। যে কারণে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জুম মিটিংয়ের ঘোষণা দিয়েছেন এই তিনটি কমিটির কাউন্সিল করার। তার ঘোষণা অনুযায়ী, তিনটি কমিটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১ এপ্রিল। যে ৪১ জন সদস্য রয়েছেন তারাই একমাত্র ভোটার। তাদের ভোটের মাধ্যমেই পাঁচ জনকে নির্বাচিত করা হবে। যেসব পদে নির্বাচন হবে সেগুলো হচ্ছে-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক। নির্বাচনে এই ৪১ জনের বাইরে যারা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সদস্য তারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, কিন্তু তাদের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা নির্বাচন তদারকি করবেন। গঠন করা হবে নির্বাচন কমিশন। আনোয়ার হোসেন খোকনের এই ঘোষণায় স্থিতিশীল তিনটি কমিটির মধ্যে আবারও গুঁতোগুঁতি, দলাদলি শুরু হয়েছে। তৈরি হয়েছে অশান্ত পরিবেশ। যেখানে তাদের দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং লবিং করানোর জন্য কথা আনোয়ার হোসেন খোকনের। সেখানে তিনি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারির ব্যবস্থা করলেন? আনোয়ার হোসেন খোকন কী বিএনপির উন্নতি চান, না বিএনপিকে ধ্বংস করতে চান? ৪১ জনের মধ্যেই যদি নির্বাচন হয়, তাহলে এই কাউন্সিল করার কারণ কী? তলে তলে অন্য কোনো হিসাব আছে কি না তা দেখা দরকার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির এই তিনটি আহ্বায়ক কমিটির লিখিত অনুমোদন দিয়েছেন দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাউন্সিল করতে হলে মহাসচিবের লিখিত চিঠি প্রত্যাশা করেন দলের নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন দলের মহাসচিব কী আদৌ কাউন্সিলের কথা জানেন?

শেয়ার করুন