২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৫৩:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মিছবাহ-অপু প্যানেলের সংবাদ সম্মেলন
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন মোস্তফা কামাল


গত ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতির নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ও স্বৈরাচারি আচরণ, লাগামহীন অনিয়ম ও কারচুপির এনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মিছবাহ-অপু প্যানেলের পক্ষ সচেতন বিয়ানীবাজারবাসী। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মিছবাহ-অপু প্যানেলের পূর্ণ বিজয়কে কারচুপির মাধ্যমে সভাপতি, সহ সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধক্ষ পদে পরাজিত করে ফলাফল ঘোষণ করে নির্বাচন কমিশন।

গত ২৯ অক্টোবর ওজনপার্কের মামোছ রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিছবাহ-অপু প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মোস্তফা কামাল। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক, মিছবাহ-অপু প্যানেলের আহ্বায়ক মোজাহিদুল ইসলাম, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি আজিমুর রহমান বুরহান, সাবেক উপদেষ্টা আজীজুর রহমান পাখি, মিছবাহ- অপু প্যানেলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলীম, মিছবাহ-অপু প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন মিছবাহ আহমদ, নির্বাচিত সহ সভাপতি মুহিবুর রহমান রুহুল, নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আলম অপু, নির্বাচন চলাকালীন সময়ে এজেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালনরত হেলাল উদ্দিন ও আমিনুল হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় ভোট শেষে দুই প্যানেলের প্রতিনিধির উপস্থিত ছাড়া ভোটার মেশিনের কার্যক্রম বন্ধ করা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্যানেলের প্রতিনিধির উপস্থিত ব্যতিত নির্বাচনী ফলাফল কাগজ প্রিন্ট করে নির্বাচন কমিশন তার পূর্ব বক্তব্যে থেকে সরে আসে। বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পূর্বে নির্বাচন কমিশনারগণ দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করে ফলাফল ঘোষণায় আসেন। নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের অযাচিত ও অপ্রাসঙ্গিক বৈঠক অতীতে কখনো দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশন দুটি প্যানেলের সাথে বৈঠকের সময় বলেছিলেন, ভোট শেষে প্রিসাইডিং অফিসারের দেয়া ভোটার রিসিড, গণনা করবেন এবং পরবর্তিতে দুটি প্যানেলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভোটার মেশিনের ফলাফল প্রিন্ট করবেন। নির্বাচন কমিশন এই দুটোর মধ্যেই একটা কথাও রাখেননি। লিখিত বক্তব্যে প্রশ্ন রাখা হয় নির্বাচন কমিশনের এ দ্বিচারিতা কেন? ফলাফল ঘোষণার পূর্বে মিছবাহ-অপু প্যানেলের সদস্য সচিব মোস্তফা কামাল, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি মকবুল রহিম চুনই ও মূলধারার রাজনীতিবিদ মিছবাহ আবদীন নির্বাচন কমিশনকে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি প্যানেলের প্রতিনিধিদের সম্মুখে মেশিন থেকে নির্বাচনী ফলাফল প্রিন্ট করে আনার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহিউদ্দিন অনুরোধ রক্ষার আগ্রহে বাধা দেন কমিশনের সদস্য আব্দুন নুর। কমিশনের সদস্যদের ধমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাবু হয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহিউদ্দিন সকলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি নিজে ফলাফল ঘোষণার কাগজ সম্পর্কে অবগত নন। তার অগোচরে অপারেটর মেশিন থেকে রেজাল্টের কাগজ প্রিন্ট করা হয়। আমাদের প্রশ্ন কোন অজ্ঞাত কারণে কমিশনের সদস্য আব্দুন নুর প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ফলাফল প্রিন্ট করতে বাধা দেন। বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর মিছবাহ- অপু পরিষদ তাৎক্ষণিক জোরালো আপত্তি করে ও গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী ফলাফল নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের প্রতি মিছবাহ-অপু প্যানেল লিখিতভাবে আপত্তি জানায়। লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার ফলাফল ঘোষণার প্রিন্ট কাগজ ও এজেন্টেদের কাছ থেকে স্বাক্ষরও নেয়নি। জাল ভোট প্রদান ও ফলাফল কারচুপির ব্যাপারে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় ১৬টি মেশিনে ভোট গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১০ নম্বর মেশিনে মান্নান-জুয়েল প্যানেলের একক পাহাড়সম ভোট কীভাবে জমা পড়ে। একজন মেশিন অপারেটর ভুয়া ভোটার রিসিডের জাল ভোটারকে বারবার এই মেশিনে ভোট প্রদান করার সুযোগ করে দিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের সদস্য কারা কারা এই অপকৌশলের সাথে জড়িত ছিল প্রতিবাদী বিয়ানীবাজারবাসী জানতে চায়। একজন জাল ভোটারকে চিহ্নিত করায় সমিতির উপদেষ্টা বুরহান উদ্দীন কপিল ও তার ভাই ফখরুল উদ্দীনের হাতে মিছবাহ-অপু প্যানেলের এজেন্ট আমিনুল হোসেন লাঞ্ছিত হন। এ সময় বুরহান উদ্দীন কপিল নির্বাচন কমিশকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। নির্বাচন কমিশন ছিল নির্বিকার। একজন জাল ভোটারের প্রতি উপদেষ্টার এত দরদ কেন বিয়ানীবাজারবাসী জানতে চায়। শুধু উপদেষ্টা নয় জাল ভোটারের পক্ষে নির্বাচন কমিশনের সদস্য হেলাল উদ্দিনের অবস্থান ছিল জঘণ্যতম। মিছবাহ-অপু পরিষদের এজেন্ট হেলাল উদ্দিন জাল ভোটার চিহ্নিত করেন। কিন্তু কমিশনের সদস্য সালেহ আহমদ মনিয়া ঐ ভুয়া ভোটারকে বের করে দেয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে যান, পরবর্তিতে সালেহ আহমদ মনিয়া তার পকেট থেকে ভুয়া রিসিড বের করে মেশিনে জাল ভোট প্রদান করান। মান্নান- জুয়েল প্যানেলের একজন প্রার্থী সাংবাদিক পরিচয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট প্রদানে সহযোগিতা করে। নির্বাচন কমিশনের নিকট বার বার নালিশ করা সত্ত্বেও কেন জাল ভোটারদের জন্য পিছনের দরজা বন্ধ করা হল না? প্রতিটি পুলিং টেবিলে দুজন প্রিসাইডিং অফিসারের নামে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমন্বয়ক নিয়োগ করে মূলত মান্নান-জুয়েল প্যানেলের প্রার্থীদের আত্মীয়-পরিজন দিয়ে ভোট কেন্দ্র পরিপূর্ণ করা হয়। যা ঐ প্যানেলের পক্ষে অবাধে জাল ভোট প্রদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন কমিশন গোপনে ভোটার তালিকা ক্রমিক নম্বর পরিবর্তন করে। পরিবর্তিত নম্বর ভোটার তালিকার কপি মান্নান-জুয়েল প্যানেলকে প্রদান করা হয়। কিন্তু মিছবাহ-অপু প্যানেলকে পরিবর্তিত ভোটার তালিকা দেয়া হয়নি। ফলে মিছবাহ-অপু প্যানেলের সমর্থিত ভোটারগণ বিড়ম্বনার শিকার হন। মিছবাহ-অপু প্যানেলের প্রতি নির্বাচন কমিশনের নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা কেন? সকলের কাছে এই প্রশ্ন। ভোট কেন্দ্রে মান্নান-জুয়েল প্যানেলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাত দুষ্টের অভিযোগ করা হয়। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সিটি পুলিশের। এর মধ্যে সিটি লাইন ওজনপার্ক সিভিল পেট্রোল’র (সিওপি) নিয়োগ ছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অগোচরে। এই সিওপি মান্নান-জুয়েল প্যানেলের পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। কারা সি ও পিকে নিয়োগ দিল? কেন দিল? এই নিয়োগ কি অপরিহার্য ছিল? মান্নান-জুয়েল প্যানেলের কতিপয় এজেন্ট নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত কোন ক্ষমতাবলে বার বার ভোট প্রদান করে? কমিশনের নিকট অভিযোগ করলেও কমিশন তা আমলে নেয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় বিয়ানীবাজার সমিতি তথা অন্য কোন সংগঠনের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই সাংবাদিক সম্মেলন মাইলফলক হিসাবে থাকবে।

লিখিত বক্তব্যের পর এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান নয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহিউদ্দিনের মেরুদন্ডহীন কার্যক্রম, কমিশনের নির্লজ্জ ভূমিকা বিশেষ করে ছালেহ আহমদ মনিয়া অব্দুন নুর ও হেলাল আহমদের নির্বাচন পরিচালনায় মান্নান- জুয়েল প্যানেলকে জয়ী করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠার কথা বলা হয়। এছাড়াও ১৬ টি মেশিনের মধ্যেই ১০ নম্বর ও ১৩ নম্বর মেশিনে ভোটের ফলাফলের ফারাক নিয়ে বক্তব্য রাখেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে ৩০ জুলাই সদস্য নিবন্ধনের পর ১ সপ্তাহ পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে অতিরিক্ত ১৯৬ ভোটার নিবন্ধনের মাধ্যমে মিছবাহ-অপু প্যানেলের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রের সূচনা। এরপরে নির্বাচন কমিশন গঠন। নির্বাচন কমিশনের সদস্য ছালেহ আহমদ মনিয়া মান্নান-মাহবুব প্যানেলের পক্ষে সচেতন বিয়ানীবাজারবাসীর ব্যানারে ২০২১ সালে সংবাদ সম্মেলন, কমিশনের সদস্য হেলাল উদ্দিন ৩০ জুলাই ২০২৩ মান্নান-জুয়েল প্যানেলের পক্ষে ভোট জমা দেওয়া, কমিশনের সদস্য আব্দুন নূর উপদেষ্টা কপিলের সাথে মান্নান-জুয়েল প্যানেলের জন্য কাজ করা। এখানে ভাল নির্বাচন কীভাবে আশা করা যায়? আমরা বিয়ানীবাজারের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনার প্রশ্নের উত্তরে বলেন, এ ব্যাপারে প্যানেল পরিচালনা কমিটি ও মুরব্বীদের পরামর্শে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে। 

প্রতিবাদ সভা : সংবাদ সম্মেলন পরে নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভোট কারচুপি করে মান্নান-জুয়েল প্যানেলকে জয়ী করার নগ্ন প্রয়াসের বিরুদ্ধে একই স্থানে মিছবাহ-অপু প্যানেলের প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আমিনুল হোসেনের সঞ্চলনায় প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন গহর চৌধুরী কিনু। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন আহমদ মোস্তফা বাবুল, শামস উদ্দীন, ফখরুল ইসলাম বেলাল, চান্দ আলী বাহার, ফজলুর রহমান, জিয়াউল হোসেন, আকমল হোসেন, গোলাম মর্তুজা, হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

শেয়ার করুন