২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৪৭:৫৯ পূর্বাহ্ন


বিদিশার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে কারা?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২২
বিদিশার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে কারা? বিদিশা


ছাদ খোলা গাড়িতে হঠাত করেই রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানান গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। কেনো কি কারণে বিদিশার এমন মোটর শোভাযাত্রা বা এর পেছনেই বা কারা তা বেশ আলোচনর জন্ম দিয়েছে। 

বিদিশার চমকের আগের ঘোষণা

গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবারই বিদিশা এরশাদই তার চমক লাগানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। জাতীয় পার্টির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে তাতে সন্তান এরিক এরশাদকে নিয়ে অংশ নিয়ে তাতে বিদিশা বলেন, আর মাত্র কয়েক মাস পরেই এরিকের বয়স ২১ হবে। অপো করুন। চমকের পর চমক আসবে সামনে। 

বিদিশার পেছনে আসলে কারা?

রওশদ এরশাদের অসুস্থতার মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে তার সাবেক স্ত্রী বিদিশাকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। বিদিশার উপস্থিতিতে ঢাকার বারিধারায় এরশাদের বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির ‘পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায়’ দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাফর ইকবাল সিদ্দিকী। আর গত শনিবার তার এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার বিদিশার পেছনে আসলে কারা? তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন এর উত্তর গণমাধ্যমে বিদিশা অনেক আগেই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একথা বলেন, ভুলে গেলে চলবে না, এরশাদ সাহেব সেনা পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান। এরিক আজ একা না। এরিকের সাথে সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার এবং এরশাদকে যারা ভালোবাসে, তারা আছে। 

কিন্তু এখন কেন বিদিশা মাঠে?

পেছনে কয়েকশ মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর। গাড়িতে দাঁড়িয়ে পথে পথে হাত নাড়েন, ভি চিহ্ন দেখান, শেষে গুলশান-১ নম্বর পুলিশ প্লাজার সামনে গিয়ে বক্তব্যও দেন গত শনিবার। এতে তিনি বলেন, ২০ মার্চ জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলে এই শোভাযাত্রা। শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বারিধারার দূতাবাস রোডের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসা থেকে মোটরবহরসহ একটি ছাদ খোলা খয়েরি রঙের গাড়ি নিয়ে বের হন বিদিশা। এরপর গুলশান দুই নম্বর, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, মহাখালী, তেজগাঁও লিংক রোড হয়ে হাতিরঝিলে একবার চক্কর দেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর পুলিশ প্লাজার সামনে গিয়ে বিদিশা এরশাদ বলেন, ‘এই দিনে আমি প্রয়াত এরশাদ সাহেবের জন্য দোয়া চাচ্ছি। ওনার আমল ছিল স্বর্ণ যুগ। ওনার সময়ে যে চালের দাম ছিল কেজি ২০ টাকার নিচে, এখন সে চাল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সামনে রোজা। মানুষ খাদ্যদ্রব্য নিয়ে বিপদে আছে। এখনই সরকার দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সরকারের সব ভালো কাজ ম্লান হয়ে যাবে।’ বিদিশা নিজেকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে বলেন, তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পুনর্গঠিত হচ্ছে। এতে ছেলে এরিক এরশাদও দলে যুক্ত হওয়ার কথা বললেও  মোটর শোভাযাত্রায় সে (এরিক) ছিলেন না। শোভাযাত্রায় বিদিশার সঙ্গে তাঁর গঠিত কমিটির কো-চেয়ারম্যান, উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 


বিদিশা ও এরিক

টার্গেট কি জিএম কাদের?

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জীবিত থাকাকালীন তিনি জাতীয় পার্টির কো-চেয়াররম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৯ সালের ৫ মে তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াররম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন স্বয়ং হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর থেকে নানান বক্তব্য আসেন বিদিশা থেকে। গণমাধ্যমে বিদিশা নিজেকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে বলেছেন তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পুনর্গঠিত হচ্ছে বলে বেশ কয়েকবারই আওয়াজ দেন। এছাড়া তিনি হুংকার দেন- ‘আমাদের ৩০টি জেলায় ইতোমধ্যেই জেলা কমিটি গঠন হয়ে গেছে। ৬৪ জেলার কমিটি গঠন হলেই আমরা ঢাকায় বৃহত্তর কর্মসূচি দেবো। আর সেই কর্মসূচির হাত ধরেই নেতা নির্বাচিত হবে। কিন্তু পার্টি আগের মতোই থাকবে। আমরা কারো জন্য থেমে থাকবে না। আমি এখনও কাউকে বহিষ্কার করিনি। আমার দরজা সবার জন্য খোলা।’ ধারণা করা হচ্ছে জি এম কাদেরকে জাপার একটি অংশ বিদিশাকে নামিয়েছেন। তারা জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের একধরনের সাইজ করতেই তাকে ব্যবহার করছেন। 

নাকি নেপথ্যে সরকার?

তবে কয়েকশ মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে বিদিশার মোটর শোভাযাত্রা কেবল নিছক মিছিল না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। তারা মনে করেন, এর পেছনে আরো বড়ো খেলা আছে। এটা শুধু বিদিশার ক্ষোভ থেকেই হয়নি। বরং মনে করা হচ্ছে জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ব্যাপারে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারেরও ক্ষোভ আছে। কেননা তারা জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ দলের অনেক নেতার বক্তৃতা বিবৃতি সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে। তারা জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের অতি সম্প্রতি বলেছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেছেন, দেশে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই, সামাজিক নিরাপত্তা নেই, সড়কে বের হলে জীবনের নিরাপত্তা নেই, স্বামী ও সন্তান নিয়ে বেড়াতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারী, ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। নিজের ঘরেও মানুষের নিরাপত্তা নেই। এখন নিজের জমিতে ঘর তুলতেও চাঁদা দিতে হয়। মানুষ জানে না, কার কাছে গেলে কী সমাধান পাওয়া যায়। বলেছেন, দ্রব্যমূল্য এভাবে বাড়লে দেশে দুর্ভি দেখা দিতে পারে। আগে বেশ কয়েকবারই বলেছেন, এখন নির্বাচন খুনোখুনি আর আতঙ্কের নাম। এর পাশাপাশি বলে যাচ্ছেন মুক্তির জন্য মানুষ জাপাকেই বিকল্প শক্তি মনে করে। 

শেষ কথা 

দেশের রাজনীতিতে একের পর এক চমক দেখা যাচ্ছে। এবার মিলেছে কয়েকশ মোটরসাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের শোভাযাত্রা। কিন্তু কোনো এমন মোটর শোভাযাত্রা তা নিয়ে নানান গুঞ্জন দেখো দিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক রাজনীতি বিষয়টি বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে যে-ই কিছু করবে তার বা তার দলের বিরুদ্ধে এমন চমকপ্রদ পদক্ষেপই চোখে পড়বে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। এতে ধারণা খুবই স্বাভাবিক জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বাগে রাখা ছাড়াও আরো অনেক রাজনৈতিক খেলা আছে এর পেছনে। 

শেয়ার করুন