২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:৫৮:৪০ পূর্বাহ্ন


চলে গেলেন দুই প্রজন্মের দুই ক্রিকেটার
শোকে স্তব্দ ক্রিকেটাঙ্গন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৪-২০২২
শোকে স্তব্দ ক্রিকেটাঙ্গন মোশাররফ হোসেন রুবেল,ছবি/সংগৃহীত


একই দিনে দুই ক্রিকেটার হারিয়ে শোক বিহ্বল হয়ে গেছে ক্রিকেটাঙ্গন। একজন সাবেক ক্রিকেটার ও দীর্ঘদিন আম্পায়ারিং করা সবার শ্রদ্ধার পাত্র সামীউর রহমান সামি। অন্যজন জনপ্রিয় ও অনেক তরুন ক্রিকেটারের আইডল মোশাররফ হোসেন রুবেল। 

 ব্রেন টিউমারের সাথে দীর্ঘদিনের লড়াই মোশারফ রুবেলের। বেশ কিছুদিন হাসপাতালের বেডে অসহায় দিন কেটেছে তার। একের পর এক অনেক চিকিৎসা নিয়েছেনও। কিন্তু তাতে খুব একটা বেশি লাভ হয়নি। ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুর দিকেই ধাবিত হতে থাকেন। এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুই হলো তার সর্বশেষ ঠিকানা। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। 

 ৪০ বছর বয়সী রুবেলকে হারিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা শোকার্ত। অনেককে বেদনাকাতুর হয়ে যেতে দেখা যায়। 

সতীর্থদের মাঝে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মাদ আশরাফুল, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, শাহরিয়ার নাফিস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, রকিবুল হাসান, এনামুল হক জুনিয়র, মোহাম্মাদ শরীফ, নাইম ইসলাম, এনামুল হক বিজয়,হান্নান সরকার, লিটন কুমার দাস, অলক কাপালী, খালেদ মাসুদ পাইলট, হাবিবুল বাশার, আব্দুর রাজ্জাক রাজ প্রমূখ জাতীয় দলের সাবেক বর্তমান অনেক খেলোয়াড় মোশারফ এর সাথে দীর্ঘদিন খেলেছেন। ফলে তার এ মৃত্যুতে সবাই যেন স্তব্দ হয়ে পড়েন। 

 এক কথায় রুবেলের মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তারা, নিজেদের ফেসবুক পেজে সবাই শোক জানিয়েছেন এবং মোশারফ রুবেলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন এই দোয়া করেছেন সবাই। কেউ তার আত্বার শান্তি কামনা করেছেন।

রুবেলের এ মৃত্যুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শোক প্রকাশ করে। এছাড়াও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সহ সাংবাদিকদের সংগঠন, বিভিন্ন ক্রিকেট ক্লাব, ফেডারেশন, সংগঠকরা শোক প্রকাশ করে।  মোশাররফের নামাজে জানাজা হয়েছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এতে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িত তার সতীর্থরা ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গনের বাইরে তার অনেক শুভাকাংখী  নামাজে জানাজায় শরিক হন। 

এদিকে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকেই ছিল। তিনি হয়তো বেশী দিন বাচবেন না এমনটাই ধারনায় ছিল অনেকেরই। কারণ তার স্বাস্থ্যের অবনতি ছিল প্রতিনিয়ত। শেষ পর্যন্ত সেটাই বাস্তবতায় রূপ নিল। ব্রেন টিউমার, ব্রেন ক্যান্সারের এর সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর মৃত্যু বরন করে নিয়েছেন।

২০১৯ সালের মার্চে রুবেলের ব্রেন ক্যান্সার ধরা পরে। এর আগে ব্রেনে টিউমার ধরা পরলেও সেখান থেকে সেরে উঠেছিলেন। পরের ২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে পুরানো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয়েছে কেমোথেরাপি সবমিলিয়ে ২৪টি ক্যামো থেরাপী নিয়েছিলেন তিনি।

মোশারফ রুবেল বাংলাদেশের সপ্তম ক্রিকেটার যিনি ব্যাট হাতে তিন হাজার রান করেছেন ও ৩০০ নিয়েছেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে। তার অভিষেক হয়েছিল ২০০১ - ২০০২ মৌসুমে। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেই থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেন এবং প্রতিনিয়ত ব্যাটসম্যানদের ঘুম হারাম করে প্রচুর উইকেট সংগ্রহ করেন। বিশেষ করে ন্যাশনাল ক্রিকেট লীগ ও  ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে।  

১৯৮১ সালে জন্ম নেওয়া মোশাররফ রুবেলের বোলিং স্টাইল ছিল  লেফট আর্ম অর্থডক্স। জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তবে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এরপর দীর্ঘ গ্যাপ হলেও তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তার করেই খেলেছেন বল ও ব্যাটে। প্রথম শ্রেণীতে ১১২ ম্যাচ খেলেছেন। তবে তার একটি স্বপ্ন অপূরণ থেকে গেছে। সেটা হল টেস্ট ক্রিকেট।

 যোগ্যতা থাকা সত্বেও কখনো তিনি টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে মাঠে নামতে পারেননি। 


সামিউর রহমান সামি, ছবি/সংগৃহীত 


সামিউর রহমান সামির ইন্তেকাল 

মোশারফ রুবেলের মৃত্যুর দিনে ক্রিকেট পাড়ার আরেকজনের মৃত্যু ঘটেছে, তিনি হলেন ৬৮ বছর বয়সী সামীউর রহমান সামি। ১৯৮৬ সালের এশিয়া কাপ ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের। তাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে ছিলেন সামি। পরের ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষেও ম্যাচে ছিলেন এ পেসার। কিন্তু উইকেটশুন্য থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেন।

কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি ছিলেন একজন উজ্জ্বল।  মোহামেডান স্পোর্টিং, আবাহনী লিমিটেডের মত জনপ্রিয় দলে খেলেছেন তিনি সুনামের সােেথ। এরপর মনোযোগ দেন আম্পায়ারিংও। তিন ফরমেটে ১৬৬ ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন ও ম্যাচ রেফারি দায়িত্ব পালন করেন সামি। একই সঙ্গে বাস্কেটবলও খেলেছেন দীর্ঘকায় এ সাবেক ক্রিকেটার। 


শেয়ার করুন