০৪ মে ২০১২, শনিবার, ১০:৪০:১৩ পূর্বাহ্ন


দোষ অস্বীকার করে মুক্ত হয়ে যা বললেন ট্রাম্প
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গ্রেফতার ও মুক্ত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৪-২০২৩
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গ্রেফতার ও মুক্ত কোর্টে ট্রাম্প


অন্যায় করলে তার প্রতিদান দিতে হবে। বিশেষ করে বিশ্বের শীর্ষ রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে। আপনি যত বড় ব্যক্তিই হোন না কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার জলন্ত প্রমাণ। এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন প্রেসিডেন্টকে আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। একজন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সর্ব শেষে আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার নিউইয়র্কে ম্যানহাটানের আদালতে পৌঁছার পর তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়। ট্রাম্পই প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হলেন। আদালতে হাজির হওয়ার পর ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর আদালতের অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। আদালতে ঢোকার আগে ট্রাম্প সেখানে সমবেত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এর আগে ট্রাম্প টাওয়ার থেকে তিনি গাড়িবহর নিয়ে ম্যানহাটান ক্রিমিনাল কোর্ট ভবন এলাকায় যান। ওই এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। এরপর কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবার ট্রাম্পকে মুক্তিও দেন আদালত। এরপরপরই তিনি আদালত ছেড়ে বেড়িয়ে যান।  এবং নিজ বাসভবনে পৌছান। 

তবে ট্রাম্পকে গ্রেফতার করা নিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। প্রতিটা মুহূর্ত ছিল চমকের পর চমক। গোটা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল েএ ঘটনা পানে। 

তবে ট্রাম্প আদালত ভবনে ঢোকার সময় সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। তাঁর সমর্থনে ওই এলাকায় বিক্ষোভকারী ও তাঁর সমর্থকেরা জড়ো হয়েছেন। তাঁদের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ। আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দেয়। আদালতে বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য ট্রাম্পের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়। এরপর আদালতে তাঁকে অভিযোগের বিষয়ে জানানো হবে। শুনানি শেষে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। 

এর আগে ৪ এপ্রিল সকালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুঃখজনক এক দিন (আজ)।’ তাঁর এক ই-মেইল বার্তার বিষয় ছিল, ‘গ্রেফতার হওয়ার আগে আমার শেষ ই-মেইল।’ এতে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষায় জনগণকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য ফ্লোরিডা থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছান ট্রাম্প। ট্রাম্পের উপস্থিতি ঘিরে শুধু ম্যানহাটান নয়, পুরো নিউইয়র্কের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ট্রাম্প টাওয়ারসহ ম্যানহাটানের ফিফথ অ্যাভিনিউজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ।

যে বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করবেন, তাঁকে ‘একবারেই দলবাজ’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ওই বিচারকের পরিবার ‘ট্রাম্পবিদ্বেষী হিসেবে সুপরিচিত’। ট্রাম্পকে নিয়ে গণমাধ্যমে আগ্রহ বরাবরই ছিল। তাঁর গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় বিশ্বের তাবৎ সংবাদমাধ্যম ফলাও করে এ-সংক্রান্ত খবর প্রচার-প্রকাশ করছে। ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে ভিড় করেছেন অসংখ্য সাংবাদিক।

সাংবাদিক-পুলিশের ভিড়ে ট্রাম্প-সমর্থকদের ব্যানার হাতে বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে। তাঁদেরই একজন ভিতো দিচিয়ারা। ৭১ বছর বয়সী ভিতো একসময় ফক্স নিউজে কাজ করতেন। তাঁর অভিযোগ, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ষড়যন্ত্রের অংশ। আগামী বছরের নির্বাচনে জিতে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে যাওয়া আটকাতেই তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খুলতে পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় বিচারের মুখোমুখি হলেন ট্রাম্প। স্টরমির দাবি, ২০০৬ সালে দুজন শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। পরে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে তাঁকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির মেম্বার ও বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার বলেছেন, আমেরিকা হচ্ছে আইনের দেশ। এখানে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়, তা আবারো প্রমাণিত হলো ট্রাম্পের গ্রেফতারের মাধ্যমে।

গ্রেফতারের আগে ট্রাম্পের শেষ কথা

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালত চত্বরে ঢোকার আগে সেখানে সমবেত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তাঁর শেষ কথা ছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এমনটা হতে পারে, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না।’

সাবেক পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যান সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আদালতে ঢোকার পর তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে নেওয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। 

তবে আদালত চত্বরে ঢোকার আগ মুহূর্তে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ এ ট্রাম্প বলেন, ‘আদালত চত্বরকে অবাস্তব মনে হচ্ছে! ওয়াও, তারা আমাকে গ্রেফতার করতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এমনটা হতে পারে, বিশ্বাস করতে পারছি না।’ শেষে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর শ্লোগান লেখেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন।’

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি মামলায় আদালতে বিচারের মুখে পড়েছেন। সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খুলতে স্টরমি ড্যানিয়েলসকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ার মামলায় বিচারের মুখোমুখি হলেন ট্রাম্প। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে সম্পর্কের বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে তাঁকে ওই অর্থ দেওয়া হয়। এই অর্থ দেওয়া আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ নয়। কিন্তু এই অর্থের বিষয়টি সম্পদ বিবরণীতে যথাযথভাবে উল্লেখ না করে গোপন করেন ট্রাম্প। যদিও বেআইনি কিছু করেছেন-এমন কথা বারবার অস্বীকার করছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। 

আদালত কক্ষে অভিযোগ অস্বীকার

ম্যানহাটন ক্রিমিনাল কোর্ট ভবনের ১৫ তলায় আদালত কক্ষে প্রবেশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরইমধ্যে বিচারক জুয়ান ম্যানুয়েল মার্চানের সামনে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসময় কক্ষে উপস্থিত ছিল বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। তবে তাদের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প কিছু বলেননি। পুরো সময় তাকে শান্ত দেখা গেছে। বিবিসি জানিয়েছে, শুনানির আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কোর্টরুমে শুধুমাত্র পাঁচজন ফটোগ্রাফারকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারা শুধুমাত্র স্থির ছবি তোলার অনুমতি পেয়েছেন। আদালতে ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আদালতে যাওয়ার আগে আইনজীবীদের সঙ্গে ট্রাম্পের পরামর্শ

আদালতে হাজির হওয়ার আগে নিউইয়র্কের ট্রাম্প টাওয়ারে আইনজীবীদের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলাপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে ৩ এপ্রিল সোমবার নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন ট্রাম্প। ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ম্যানহাটানের আদালতে হাজির হবেন তিনি। ফ্লোরিডা থেকে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে নিউইয়র্কে আসেন ট্রাম্প। বোয়িং-৭৫৭ মডেলের ওই উড়োজাহাজে লেখা তাঁর নামটি ছিল চোখে পড়ার মতো। আড়াই ঘণ্টা পর সেটি নিউইয়র্কের লাগার্ডিয়া বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগে পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যৌন সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখতেই এই তারকাকে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আসে। যদিও সেই পর্নো তারকার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।

মঙ্গলবার প্রথমে ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প আত্মসমর্পণ করতে পারেন। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের কাজ শেষ হওয়ার পর তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে। তবে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের কর্মকর্তারা ট্রাম্পের হাতে হাতকড়া পরাবেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন। আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিস্তারিত প্রকাশের কথা রয়েছে। স্থানীয় সময় বেলা ২টা ১৫ মিনিটে শুনানি শুরু হওয়ার কথা। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি।

এদিকে ট্রাম্পের মামলার শুনানি উপলক্ষে নিউইয়র্ক শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ট্রাম্প টাওয়ার ও আদালতের চারপাশে ব্যারিকেড স্থাপন করেছে পুলিশ। আদালতের আশপাশের কয়েকটি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস ৩ এপ্রিল সোমবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যে-ই প্রতিবাদের সময় সহিংসতা করবে, তাকেই আটক করা হবে।

যেভাবে পর্নো তারকার সঙ্গে জড়িয়ে ‘ফাঁসলেন’ ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লেক তাহো। ২০০৬ সালের জুলাইয়ে এই লেকের পাড়ে আয়োজন করা হয়েছিল এক গলফ টুর্নামেন্টের। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখনো রাজনীতিতে অতটা পরিচিত নন। মানুষের কাছে তখন তিনি আবাসন ব্যবসার মোগল। টেলিভিশন রিয়েলিটি শো তারকা হিসেবেও ছিলেন বিখ্যাত। ওই টুর্নামেন্ট চলাকালে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের।

দুজনের ওই সাক্ষাৎ এবং এর পরে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার জেরে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছেন মার্কিনরা। গত ৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের আদালতে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন ট্রাম্প। নতুন ইতিহাস বলা হচ্ছে এ কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এ ধরনের অপরাধের অভিযোগ আনা হলো। ট্রাম্পকে আত্মসমর্পণ করতেও বলা হয়েছে। বলতে গেলে, তাঁর গ্রেপ্তার এখন অনিবার্য।

স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে ট্রাম্পের ওই সাক্ষাতে কী হয়েছিল, পরে কোন ঘটনার জেরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চটলেন তিনি, আর এ নিয়ে ট্রাম্প কী বলছেন, চলুন দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

লেক তাহোয় সাক্ষাৎ

স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। ২০১৮ সালে স্মৃতিচারণামূলক একটি বই লিখেছিলেন তিনি। ওই বইয়ে নেভাদায় ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন তিনি। তখনকার একটি ছবিও সামনে এসেছে। ছবিটিতে দেখা যায়, পর্নো সিনেমার একটি স্টুডিওতে একসঙ্গে রয়েছেন ট্রাম্প ও ড্যানিয়েলস। ট্রাম্পের মাথায় লাল টুপি, হলুদ শার্ট আর খাকি প্যান্ট। ড্যানিয়েলস পরেছিলেন কালো টপস।

২০০৬ সালে নেভাদায় দুজনের সাক্ষাতের সময় ট্রাম্পের বয়স ছিল ৬০ আর ড্যানিয়েলসের ২৭ বছর। এর মাস চারেক আগেই ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়া ছেলে ব্যারনের জন্ম দেন। নিজের বইয়ে ড্যানিয়েলস লিখেছেন, নেভাদায় থাকাকালে ট্রাম্পের একটি বাসায় তাঁকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। নিজের এক দেহরক্ষীর মাধ্যমে তাঁকে ওই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। টুইটারে ট্রাম্পকে ‘ছোট্ট’ হিসেবে সম্বোধন করেছেন ড্যানিয়েলস। এমনকি অপমান করে ‘ঘোড়ামুখী’ বলে ডেকেছেন তিনি।

এরপর কী হয়েছিল, তা-ও বইয়ে লিখেছেন ড্যানিয়েলস। ট্রাম্পের সঙ্গে নাকি তাঁর যৌন সম্পর্ক হয়েছিল। বইয়ে ট্রাম্পের শারীরিক গড়ন নিয়েও নেতিবাচক বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। ড্যানিয়েলস আরও লিখেছেন, ওই ঘটনার পর বছরজুড়ে ট্রাম্পের সংস্পর্শে ছিলেন তিনি। তাঁর আশা ছিল, এর বিনিময়ে ট্রাম্প নিজের রিয়েলিটি শোতে তাঁকে নেবেন। তবে এমনটি আদৌ ঘটেনি।

বইয়ে স্টর্মি ড্যানিয়েলসের এসব দাবি মানতে অবশ্য নারাজ ট্রাম্প। তাঁর পাল্টা দাবি, সাবেক এই পর্নো তারকার সঙ্গে তাঁর কখনোই যৌন সম্পর্ক হয়নি। ড্যানিয়েলসই বরং জোরজবরদস্তি করে তাঁর কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছিলেন।

মুখ বন্ধ রাখতে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার

২০০৬ সাল থেকে এবার বেশ কিছুটা সামনে এগোনো যাক। ২০১৬ সাল। রিপাবলিকান পার্টির হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন ট্রাম্প। তখন দ্য ন্যাশনাল এনকোয়ায়রার নামে একটি সংবাদপত্রের নজরে আসে, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টায় রয়েছেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস। ওই সংবাদপত্রের মালিক ছিলেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ। তিনি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনের সঙ্গে ড্যানিয়েলসের পরিচয় করিয়ে দেন। কোহেন এখন ট্রাম্পবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাঁর ভাষ্যমতে, ২০০৬ সালের যৌন সম্পর্কের কথা চেপে যাওয়ার বিনিময়ে ড্যানিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার (১০৭ টাকা হিসাবে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা) ঘুষ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অর্থের বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখতে ছদ্মনামে একটি চুক্তি করেছিলেন ট্রাম্প ও ড্যানিয়েলস। সেখানে ট্রাম্পের নাম ডেভিড ডেনিসন ও ড্যানিয়েলসের নাম পেগি পিটারসন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। চুক্তিপত্রটি তৈরি করেছিলেন আইনজীবী মাইকেল কোহেন। সেটি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে ওই চুক্তির বিষয়টি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সামনে আনে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এরপর ট্রাম্পের সঙ্গে করা তথ্য গোপন করে চুক্তি বাতিল করতে আদালতে আবেদন করেন ড্যানিয়েলস। ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার মূলে রয়েছে এই অর্থ লেনদেন। এতে নির্বাচনী প্রচার তহবিল আইনের সম্ভাব্য লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্টর্মিকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ছিল নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের ওপর। বিষয়টি তদন্তের জন্য তিনি গ্র্যান্ড জুরি গঠন করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ জুরি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত জানায়। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। কারণ, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগ একজন ডেমোক্র্যাট। তাঁকে ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরাতেই এ পরিকল্পনা করা হয়েছে।

২০০৬ সালে নেভাদায় দুজনের সাক্ষাতের সময় ট্রাম্পের বয়স ছিল ৬০ বছর। ড্যানিয়েলস তখন ২৭ বছরের তরুণী। এর মাস চারেক আগেই ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়া ছেলে ব্যারনের জন্ম দেন। গ্রেপ্তারের পর মুক্ত ট্রাম্প, আদালত চত্বর ছেড়েছেন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ পর মুক্তি পেয়েছেন। নিউইয়র্কের ম্যানহাটান আদালত চত্বর ছেড়েছেন তিনি। ৪ এপ্রিল ফ্লোরিডায় নিজ বাড়িতে ফেরার কথা রয়েছে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের। বিবিসির খবরে বলা হয়, আদালদত থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলেও তিনি এড়িয়ে যান। ফ্লোরিডায় ফিরে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। এর আগে ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ম্যানহাটানের আদালতে পৌঁছার পর ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাঁকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর বিচারকের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় তাঁকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আইনজীবীরা ছিলেন। সিএনএনের খবরে বলা হয়, আদালতে শুনানিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। পরে সার্বিক প্রক্রিয়া শেষে তিনি আদালত চত্বর ছেড়ে যান।  ট্রাম্পই প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হলেন। 

এর আগে আদালত চত্বরে ঢোকার আগে ট্রাম্প সেখানে সমবেত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। তিনি ট্রাম্প টাওয়ার থেকে গাড়িবহর নিয়ে ম্যানহাটান ক্রিমিনাল কোর্ট ভবন এলাকায় যান। ওই এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।

আদালত ভবনে ঢোকার সময় সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন ট্রাম্প। তাঁর সমর্থনে ওই এলাকায় বিক্ষোভকারী ও তাঁর সমর্থকেরা জড়ো হয়েছেন। তাঁদের ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখে পুলিশ। আকাশে হেলিকপ্টার চক্কর দেয়।


মুক্ত হয়ে যা বললেন ট্রাম্প 

আদালত থেকে ফ্লোরিডায় ফিরে তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। বিবিসি জানায়, ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোয় নিজ সমর্থকদের উদ্দেশে এ সময় বক্তব্য দেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি কড়া ভাষায় জো বাইডেন ও তার দল এবং বিচার সংশ্লিষ্ট সবার সমালোচনা করেন। তিনি তার দোষ অস্বীকার করে বক্তব্যের শুরুতে বলেন, তার বিরোধীরা জাতিকে ধ্বংস করতে চায়। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় অভিসংশন করার বিষয়টির সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, একাধিক বিষয়ে তদন্ত করে তাকে আক্রমণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি করে জো বাইডেন জয় পেয়েছেন বলে আবারও দাবি করে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকে, ডেমোক্র্যাটসরা (জো বাইডেনের দল) আমার ক্যাম্পেইনের উপর নজরদারি চালিয়েছে। তারা আমার উপর তদন্তের হামলা চালিয়েছে।

এরপর নিউইয়র্কের ম্যানহাটন আদালতের জেলা অ্যাটর্নি আলভিন ব্রাগের কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। এই আলভিন ব্রাগই ট্রাম্পকে আদালত পর্যন্ত নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা করেছেন। অ্যাটর্নি ব্রাগকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেছেন, আলভিন ব্রাগ একজন ক্রিমিনাল। তার বিচার হওয়া উচিত অথবা তার পদত্যাগ করা উচিত।

ট্রাম্পের দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তথ্যগুলো মিডিয়ায় ফাঁস করেছেন ব্রাগ। ট্রাম্প বলেন, জেলা অ্যাটর্নির অফিসের একটি ওয়েবপেইজও ছিল। যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এ সব করেছে তারা সেখানে বৈঠক করত। এরপর ম্যানহাটন আদালতের বিচারক জুয়ান মার্চেনের সমালোচনা করেন ট্রাম্প বলেন, আমার একজন ট্রাম্প-ঘৃণাকারী বিচারক আছে, সঙ্গে আছে ট্রাম্প-ঘৃণাকারী স্ত্রী ও পরিবার। ট্রাম্পের দাবি, বিচারক জুয়ান মার্চেনের স্ত্রী তার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে টুইট করেছিলেন। অপরদিকে তার মেয়ে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের হয়ে কাজ করেছেন।

বাইডেন এবং তার প্রশাসনের সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা খারাপ। আমাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাশিয়া চীনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন? সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। যদি আমি আপনাদের প্রেসিডেন্ট থাকতাম তাহলে এর কিছুই হতো না। 





শেয়ার করুন