মেলা বাঙালির যেন প্রাণের উৎসব। মেলা মানেই বাঙালির সরব উপস্থিতি। আর তা যদি হয় বছরের শুরুতে তাহলেতো কথাই নেই। সেই চিন্তা থেকেই মনে হয় শো টাইম মিউজিকের প্রেসিডেন্ট আলমগীর খান আলম মৌসুমের পথম মেলার আয়োজন করলেন। গত ১৪ মে দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয় বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের ৭৫ স্ট্রিট এবং ৩৭ রোডে। মেলায় বাঙালিরা বাঙালিয়ানায় অংশগ্রহণ করেছেন। বাঙালির সাজে, বাঙালির কেনা-কাটায়, বাঙালির আনন্দ- উচ্ছ্বাসের মনে হয়নি, এটি ভিনদেশী কোন স্ট্রিট। বাঙালির রং-এ রঙিন হয়েছিলো জ্যাকসন হাইটসের ৭৫ স্ট্রিট এবং ৩৭ রোড। রঙিন হবে না কেন? আবহাওয়াতো ছিলো চমৎকার। মেলার জন্য উপযুক্ত। মেলায় আলোচনা ছিলো, অতিথিদের সম্মাননা ছিলো, দোকান ছিলো, সেই দোকানে কেনাকাটা ছিলো, সেই সাথে ছিলো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আকর্ষণীয় ছিলো র্যাফেল ড্র।
এই মেলাটি উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, কুইন্স কমিউনিটি বোর্ড সদস্য, বাংলা সিপিপ্যাপের প্রেসিডেন্ট ও মানবতা ফেরিওয়ালা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। মেলায় বাংলা বর্ষবরণ, ষড়ঋতুর বাংলাদেশ ও ভালোবাসার গুরুত্ব তুলে ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মানবতাবাদী নেতা আবু জাফর মাহমুদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যা সকলের কাছে প্রশংসিত হয়। সবাই প্রদর্শিত প্রামাণ্যচিত্রটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মেলায় বাংলাদেশ কমিউনিটির কৃতি ব্যক্তিত্ব হিসেবে মানবসেবা, কমিউনিটি উন্নয়ন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মাঝে নানামুখি অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন নিউইয়র্কের ৩০তম ডিস্ট্রিক্টের অ্যাসেম্বলি মেম্বার স্টিভেন বি রাগা।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, নিউইয়র্কে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ, বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সিইও আবু জাফর মাহমুদ বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমেরিকান অন্যান্য সংস্কৃতির মধ্যে বাংলা সংস্কৃতি ও সঙ্গীত এখন অনন্য স্থানে পৌঁছেছে। এর পেছনে যারা কাজ করছেন তারা ধন্যবাদ পাবার দাবি রাখেন। আমি বিশ্বাস করি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা একেকটি আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের পক্ষে একটি প্রবাহ তৈরি করেন। বাংলাদেশের সেই সাংস্কৃতিক প্রবাহ এখন সফল একটি উচ্চতায় পৌঁছেছে।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বৈশাখী মেলা আর অন্যান্য মেলার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। বাংলা সনের সঙ্গে চন্দ্র সন ও ফসলী সনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের জীবনপ্রবাহ জড়িত। আমরা যখন মোগল শাসিত ছিলাম, তখন কৃষিজীবী জনগোষ্ঠির ফসলি হিসাব, ব্যবসার হিসাব ঠিক রাখার জন্যই সম্রাট আকবর যে সন গণনার প্রবর্তন করেন, সেটিই বাংলা সন। মানুষের জীবিকাকে সঠিক হিসেবের মধ্যেই আনার জন্যই সাল গণনার সূত্রপাত। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখ। বৈশাখকে ঘিরেই আমরা হালখাতা করে আসছি। বছরের প্রথম দিনের ‘হাল’ দিনের হিসাব খোলাটিই হালখাতা। আমরা বাংলা অঞ্চল থেকে এসে এখন যেহেতু পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছি, তার নেতৃত্বটা দিচ্ছি আমেরিকা থেকে। বাংলা নতুন বছরে এসে, আমাদের জীবনধারা, ভাতৃত্ব ও আগামীর করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শিল্পীরা নেচেগেয়ে মেলা জমিয়ে তোলেন। কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ সংগীতের ফাঁকে ফাঁকে মঞ্চে উঠে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কম্যুনিটি নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন আলমগীর খান আলম, দুলাল মিয়া ও কামরুজ্জামান বাবু। মেলায় বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের চীফ এডভাইজার মীর বাশার, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান, জেবিবিএ’র প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ, কুইন্স ডিমোক্র্যাটিক পার্টি ডিস্ট্রিক্ট লিডার এ্যাট লার্জ এটর্নি মইন চৌধুরী, বিশিষ্ট রিয়েলএ্যাস্টেট ইনভেস্টর নুরুল আজিম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিলাল চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাকসুদুল এইচ চৌধুরী, ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, আদিত্য শাহিন, কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট আব্দুর রশীদ বাবু, ডা. রফিকুল ইসলাম, লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আহসান হাবিব, কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজি শাখাওয়াত হোসেন আজম, বিশিষ্ট আইন বিশেজ্ঞ ড. রফিক আহমেদ, রাশেক মালিক প্রমুখ।
মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করে সবার মন জয় করে নেন বাংলাদেশ থেকে আহত শিল্পী কনক চাপা, বিন্দু কনা, মির্জা, প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী কামরুজ্জামান বকুল, কৃষ্ণা তিথি, শাহ মাহবুব, আফতাব জনি, আমানত হোসেন আমান, রায়হান তাজ, মিমসহ অনেকে।
মেলার অন্যতম প্রধান আর্কষণ লটারিতে প্রথম পুরষ্কার নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্কের টিকেট বিজয়ী হন সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী।