২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:৪৮:১০ অপরাহ্ন


বিলে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর : মার্কিন সিনেটে পাস হলো বন্দুক সুরা বিল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২২
বিলে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর : মার্কিন সিনেটে পাস হলো বন্দুক সুরা বিল বন্দুক আইনের দাবিতে বিক্ষোভ


আমেরিকার কংগ্রেসের উচ্চক সিনেটে গত ২৩ জুন পাস হলো আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিল, যা গত ৩০ বছরের মধ্যে ফেডারেল সরকার মারফত বন্দুক সংস্কার আইনের প্রথম বড় পদপে হিসেবে গণ্য হয়েছে। ১০০ সদস্যের সিনেটে প্রায়য় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিলটি পাস হয়েছে। বিলের পে পড়েছে ৬৫টি ভোট। বিপে ৩৩টি। রিপাবলিকানরা এই ভোটের সমর্থনে ডেমোক্রেটদের সাথে যোগ দিয়েছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিতর্কিত নীতিগত ইস্যুতে একটি উল্লেখযোগ্য দ্বিদলীয় অগ্রগতি। 

বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডের। সুতরাং এখন এটি আইনে পরিণত হলো। বিলটিতে মানসিক স্বাস্থ্য, স্কুল নিরাপত্তা, অপরাধমূলক পটভুমির রেকর্ড রাখতে ১৩.২ বিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্কুল, শপিংমলে বন্দুকবাজের ধারাবাহিক হামলার প্রেক্ষিতে আগ্নেয়াস্ত্র আইন আরো কঠোর করার জন্য বার্তা দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফেডারেল বন্দুক সুরা বিলের উপর ভোট সেই দিনেই আসে যখন সুপ্রিম কোর্ট নিউইয়র্কের বন্দুক আইনকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা ঘোষণা করে এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে হ্যান্ডগান বহন করার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৯০ মিলিয়েনেরও বেশি বন্দুক বেসামরিক ব্যক্তিদের মালিকানাধীন।

শুধুমাত্র ২০২০ সালে ৪৫ হাজারের বেশি আমেরিকান আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত আঘাতের কারণে মারা গেছে। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট সে দেশের নাগরিকদের আত্মরার জন্য প্রকাশ্য স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিল আনায় বন্দুকপ্রেমী সংগঠনগুলির সমালোচনার মুখে পড়েছিল বাইডেন সরকার। এবার চাপের মুখে পড়ে বন্দুকবাজের হামলা ঠেকাতে অস্ত্র আইনে বদল আনলো সরকার। আমেরিকায় গত তিন দশকে আগ্নেয়াস্ত্র বিল পাশের এই পদক্ষেপ অন্যতম ঐতিহাসিক ঘটনা বলে দাবি শাসক ডেমোক্রেট শিবিরের। এই বছরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে রক্তয়ী গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল টেক্সাসের উভালদেতে। গত ২৪ মে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯ জন শিশু এবং দুই শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছিল। তার আগে বাফেলোতে একটি সুপারমার্কেটে ১০ জন নিহত হয়েছিলেন।

বাইডেনের স্বারে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন পেলো যুক্তরাষ্ট্র

সম্প্রতি বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা প্রকট রূপ ধারণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বেশ কয়েকটি স্থানে ভয়বহ বন্দুক হামলার পর দেশজুড়ে দাবি উঠে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের দাবিতে। কয়েকদিন আগে ক্যালিফোর্নিয়াতে নতুন অস্ত্র আইন নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পর গত ২৫ জুন দেশটির ইতিহাসের গত তিন দশকের মধ্যে প্রথম বড় ফেডারেল বন্দুক সংস্কার আইনে স্বার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

বাফেলো এবং উভালদের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলায় ১৯ শিশুসহ ৩০ জনের বেশি লোক নিহত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে দ্বিদলীয় বিলটি পাস হলো। নতুন এই আইনের ফলে আইনগতভাবে অঙ্গরাজ্যগুলি তাদের রাজ্যে যদি কোনো বন্দুকধারীকে বিপজ্জনক মনে করে, তাহলে তাদের হাত থেকে অস্ত্র দূরে রাখতে পারবে।

নতুন এই আইনের অধীনে ২১ বছরের কমবয়সী বন্দুক ক্রেতাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কঠোরভাবে যাচাই করা হবে এবং হুমকি হিসেবে বিবেচিত লোকদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র অপসারণের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে উত্সাহিত করা যাবে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনার পর কংগ্রেস চলতি সপ্তাহে দ্বিদলীয় সমর্থনে আইনটি অনুমোদন করে।

আইনে স্বার করার সময় বাইডেন তার পাশে থাকা স্ত্রী জিলকে বলেন, ঈশ্বরের কৃপায় এটি অনেক জীবন বাঁচাতে চলেছে। তবে গত সপ্তাহে বন্দুকের মালিকদের অধিকার প্রসারিত করে আইনটির সংস্কার করে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী আত্মরার জন্য জনসমে একটি হ্যান্ডগান বহন করার মতা থাকবে নাগরিকদের। এই রায়ের পর বাইডেন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট কিছু ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে একটি অস্ত্র সংক্রান্ত এবং আরেকটি হলো দেশব্যাপী গর্ভপাতের অধিকারকে বেআইনি ঘোষণা করা।

বন্দুক নিয়ন্ত্রণ দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বিভাজনকারী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বন্দুক বিক্রির ওপর নতুন নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জেতার জন্য ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা প্রচারণার অংশ হিসেবে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনে স্বার করেছেন বাইডেন।

নতুন এই আইনের অধীনে যা থাকছে

১. বন্দুক সহিংসতা রোধে প্রণীত নতুন এই আইনের অধীনে ২১ বছরের কমবয়সী ক্রেতাদের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড কঠোরভাবে যাচাই করা হবে।

২. মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম এবং স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল তহবিলে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হবে।

৩. হুমকি হিসেবে বিবেচিত লোকদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র অপসারণের জন্য ‘লাল পতাকা’ আইন প্রয়োগ করতে তহবিল বরাদ্দের মাধ্যমে অঙ্গরাজ্যগুলোকে উত্সাহিত করা হবে।

৪. অবিবাহিত অন্তরঙ্গ সঙ্গীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে বন্দুক বিক্রি নিষিদ্ধ করতে তথাকথিত ‘বয়ফ্রেন্ড লুপহোল’ বন্ধ করা।

জি-৭ সম্মেলনের জন্য জার্মানি সফরের আগে বাইডেন বলেছিলে, এই সময়ে যখন ওয়াশিংটনে কিছু করা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে, আমরা ফলপ্রসূ কিছু করছি। আমরা যদি বন্দুকের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারি, তবে আমাদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে সম হবে। আমি জানি আরো অনেক কাজ করার আছে এবং আমি কখনই হাল ছাড়বো না।

এর আগে বন্দুক সুরা আইন পাস উপলে ১১ জুলাই হোয়াইট হাউস ইভেন্টে বন্দুক সহিংসতার শিকার পরিবার এবং আইনপ্রণেতাদের আতিথ্য করার ঘোষণাও দিয়েছেলেন বাইডেন।

শেয়ার করুন