২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৭:৫৯:৪০ অপরাহ্ন


সংঘর্ষে ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেট এলাকার ব্যাবসায়ী কর্মচারি
ঈদ শপিংয়ের মওসুমে নিউমার্কেট রণক্ষেত্র
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৪-২০২২
ঈদ শপিংয়ের মওসুমে নিউমার্কেট রণক্ষেত্র নিউমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্র ,ছবি/ সংগৃহীত


একজন নিহত ও একজন লাইফ সাপোর্টে এবং বেশ ক’জন আহত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুতর আহত দুই শিক্ষার্থীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। নিউমার্কেট ও তার আশপাশের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা কলেছেন ছাত্রদের ব্যাপক সংঘর্ষের শেষ খবর এটা। গত ১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার মধ্যরাতে সর্বশেষ জানা গেছে, ওই মুহূর্তে দুই পক্ষই যার যার অব¯’ানে সরে গেছে। রাস্তা ও আশপাশ এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। তবে থমথম ভাব বিরাজ করছে। 

এ অনাকাংখিত সংঘর্ষে দুই পক্ষই ব্যাপক ক্ষতিগ্র¯’। বিশেষ করে ব্যাবসায়ীরা। কারণ ঢাকার মার্কেটগুলোতে সারাবছরে ঈদে যে কেনাবেচা হয়, সেটার উপরই অনেকাংশ সারা বছর গড় করে চলেন ব্যাবসায়ীরা। চলছে মধ্য রমজান। এ মুহূর্তে ব্যাবসায়ীদের ঘুম নষ্ট করে ব্যাবসা নিয়েই ব্যাস্ত। সকাল ৮টা থেকেই তাদের দোকান খোলার প্র¯‘তি। কেনাবেচা চলে মধ্যরাত অব্দি। এমনি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দুই পক্ষের মধ্যে যে দীর্ঘমেয়াদের সংঘর্ষ চললো তাতে নিহত ও লাইফ সাপোর্টে থাকা দু’জনের অপুরণীয় ক্ষতি তো হয়েই গেছে দুইয়ের পরিবারে। এ ঘটনায় প্রায় ৪১ জনের মত আহত হয়েছে। যার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এছাড়াও ছাত্রদেরও পরীক্ষা বাতিল, হল ছাড়ার নির্দেশ, ছাত্রদের অধ্যক্ষেকে আটকে রাখা সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরম বিশৃংখলা তৈরি হলো। এ হামলায় শেষ পর্যন্ত শুধু ঢাকা কলেজই নয়, আশপাশের কলেছেন ছাত্ররাও যোগ দিয়েছিল বলে খবরে প্রকাশ। 

কেন এমনটা?  

এূলত: নিউ মার্কেটের চার নম্বর গেটের কাছে পাশাপাশি দুটি ফাস্টফুডের দোকানের মধ্যে ইফতার বিক্রির টেবিল সাঝানো নিয়ে দ্বন্দ্ব। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িয়ে যায় বা জড়িয়ে ফেলানো হয় ঢাকা কলেজের ক’জন শিক্ষার্থীদের। তাদের উপর দোকানীদের আক্রমণ ও লাঠিপেটার সূত্র ধরে তাদের ঢাকা কলেজের হলে যেয়ে উল্টা-পাল্টা বুঝানো ও ঝাক বেধে ওই শিক্ষার্থীদের পক্ষে নেমে পড়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে যাওয়া। ১৮ এপ্রিল সোমবার মধ্যরাত থেকে ওই সংঘর্ষ শুরু। মোটামুটি সেহরির সময় বাদ দিয়ে আর সারা রাতই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। সাথে ইটের টুকরার বৃষ্টি। পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। পরের দিন ১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও শুরু। চলে সারাদিন দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ। দিনের শেষভাগে যেয়ে পুলিশ ছাত্রদের ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাসের মধ্যে এবং ব্যাবসায়ীদের মার্কেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে পরি¯ি’তি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশও ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় দুই পক্ষকে। এর মধ্যে নিহত ব্যাক্তি পথচারী বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় বেশ ক’জন কর্মরত সাংবাদিকদের উপরও আক্রমণ হয়। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানায়।  

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির এক শীর্ষ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, নিউ মার্কেটের চার নম্বর গেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। তাদের কর্মচারিদের মধ্যেও ঝগড়া চলছিল। একটি দোকানের হয়ে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী অপর একটি দোকানের কর্মচারিদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে। ওই দোকানে ঢাকা কলেজের অংশীদারিত্ব রয়েছে কিনা, তা আমরা এখনও নিশ্চিত না। আমরা জানার চেষ্টা করছি।’ ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘নিউ মার্কেটের ফাস্টফুডের দোকানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল, তাদের ওপর আক্রোশ থাকবে, কিš‘ এই এলাকার ২২টি মার্কেট কী ক্ষতি করেছে। সেগুলোতে কেন ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হলো।’

তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতের সংঘর্ষের পর আমরা মার্কেটের কোনও দোকান মঙ্গলবার সকালে খোলা রাখিনি। বন্ধই ছিল। তারপরও অভিযোগ উঠেছে, আমরা নাকি শিক্ষার্থীদের মারধর করেছি। আমরা তো ছিলামই না। আমাদের চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, হকার্স মার্কেটসহ বেশি কয়েকটি মার্কেটে আগুন দেওয়া হয়েছে। দোকান ভেঙে ক্যাশবাক্স নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এসব দেখেছি। আমরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন আল্লাহর ভরসায় আছি। আর কিছু করার নেই। আমাদের সবার এটিচুড ঠিক করা উচিৎ।

মঙ্গলবার দুপুরে অবশ্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা কলেজে যান। তবে তারা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে পারেননি। উল্টো তোপের মুখে পরেছেন।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে অভিযোগ করেন, ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় আজকে এই পরি¯ি’তি হয়েছে। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই শিক্ষার্থীদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, কমিটি থাকলেও আজকে আবার সবাইকে বহিষ্কার করতে হতো।

তবে একটি পক্ষ এ সংঘর্ষ জিইয়ে রাখার চেষ্টা লিপ্ত। তারা বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়া”েছ বলেও সংবাদ মাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে। এবং দুই পক্ষই যার যার অবস্থানে  থেকে অনঢ় সংঘর্ষ¯’ল না ছাড়ার জন্য। 


শেয়ার করুন