২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:৫৯:১৩ অপরাহ্ন


৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলন
বিএনপি ও সমমনা দলসমূহের শোডাউনের পরিকল্পনা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
বিএনপি ও সমমনা দলসমূহের শোডাউনের পরিকল্পনা


ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি ও সমমনা দলসমূহের গণমিছিল কর্মসূচি। এ মিছিল ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিএনপি চায় শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে। যেমনটা ২৪ ডিসেম্বর করেছে। কিন্তু সে কর্মসূচি অনুষ্ঠান করতে যেয়ে পঞ্চগড়ে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নিহত হন আবদুর রশিদ আরেফিন। গত ২৫ ডিসেম্বর আরেফিনের মৃত্যুতে বিএনপির উদ্যোগে দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বাদ আসর কেন্দ্রীয়ভাবে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপিসহ সমমনা দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

জানাজাপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১০ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে আমাদের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল পালিত হয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু পুলিশ অতর্কিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায়। আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করে। অনেক স্থানে আমাদের দলীয় কার্যালয়েও হামলা চালানো হয়। পঞ্চগড়ে গণমিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। অনেককে আটক করা হয়। সেই হামলায় আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে এক নেতা নিহত হন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’

ঢাকার কর্মসূচিও একইদিন ছিল। কিন্তু রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের জন্য ঢাকা ও নির্বাচনের জন্য রংপুরের কর্মসূচি পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়। সে অবশিষ্ট কর্মসূচি অনুষ্ঠান করতে চায় বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো বেশ জাঁকজমক করে শোডাউনের মধ্য দিয়ে। 

তবে ঢাকায় শুধু বিএনপি একাই নামছে না। যুগপৎ আন্দোলনে সাথে থাকছে আরো ১২ দল। মূলত বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির আলোকে ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরির প্রতিবাদে, অনির্বাচিত, দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং গ্রেফতারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে এ গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হবে। 

এর আগে গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ২৪ ডিসেম্বর দলটির জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দেয়, কিন্ত গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা গোলাপবাগের গণসমাবেশ থেকে বিএনপিও একই তারিখে রাজধানীতে গণমিছিলের ঘোষণা দিলে রাজনীতিতে দেখা দেয় উত্তাপ। এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ তারিখটি পরিবর্তন করার অনুরোধ জানালে তাতে সারা দেয় বিএনপি। এবং ‘সংঘাত নয়, শান্তিুপূর্ণ কর্মসূচি করতে চাই’ এমন কথার আলোকে তারা এ কর্মসূচি পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নিয়ে যায়। 

২৪ তারিখ গণমিছিল না করা ও কেন ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার গণমিছিল করার সময় বেছে নেয়া হলো এর জবাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, যেহেতু বিএনপি সংঘাত চায় না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় সংকটের সমাধান চায়। একইসাথে যেহেতু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের দলীয় কাউন্সিলের কারণে গণমিছিল কর্মসূচি পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছেন এবং আহ্বান জানিয়েছেন। সেহেতু আমরাও রাজনৈতিক দল হিসেবে আচরণ করতে চাই।

৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের নতুন তারিখ কেন বেছে নেয়া হলো- এর ব্যাখ্যায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের যে আন্দোলন, যথাযথ নির্বাচন দাবি আদায়ের যে লড়াই, সেজন্য জনগণকে ৩০ ডিসেম্বর স্মরণ করিয়ে দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৮ সালের এই ৩০ ডিসেম্বরের দিনে সরকার দিনের ভোট রাতে অনুষ্ঠিত করে ক্ষমতায় এসেছে।’ তিনি এ সময় আরো বলেন, এই লড়াইয়ে অনেক রাজনৈতিক দল যুক্ত হবেন, তাদের মধ্যে অনেকেই একইদিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, এজন্য ওই সকল দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব হবে।’  

এদিকে বিএনপির ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের কর্মসূচির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীতে ২০ দলীয় জোটভুক্ত ১১টি দল গণমিছিল কর্মসূচি পালন করবে। গত শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে দলগুলো থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

বিবৃতিদাতারা হলেন জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপি চেয়ারম্যান কারি মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ এলডিপি-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মওলানা আব্দুল রকিব, মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির-মহাসচিব, অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক, কমরেড সৈয়দ নুরুল ইসলাম।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির আলোকে ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরির প্রতিবাদে, অনির্বাচিত দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং গ্রেফতারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে এ গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হবে। 

এছাড়াও কর্নেল অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (এলডিপি) বিএনপির ১০ দফার সাথে ঐকমত্য জানিয়ে ৩০ ডিসেম্বর মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। তবে ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন স্থগিত করেছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। ৩০ ডিসেম্বর তারা গণমিছিলে নামবে কি-না সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় পর্যন্ত। তবে জামায়াতের এক সূত্র জানায়, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলের ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল ও যুগপৎ আন্দোলনে তাদের সমর্থন থাকবে। 

সব মিলিয়ে ৩০ ডিসেম্বর একটা বড় শোডাউন করবে। যেহেতু এবার বিএনপি একা নয়। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরো বেশ কিছু দল এবং সেসব দলের ঢাকাতেও রয়েছে অনেক সমর্থন ও  কর্মিবাহিনী। সে মতে একটা বড় ধরনের শো ডাউনের জন্য ইতিমধ্যে ঢাকার বিভিন্নস্থানে তাদের কর্মীরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে গত ১০ ডিসেম্বর যে মহাসমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। সেটা প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের বাধা-বিপত্তির জন্য যখন সাধারণ নেতাকর্মীরা যেতে পারেনি সমাবেশস্থলে। তারা এবার গণমিছিলে অংশ নিয়ে নিজেদের কর্মসূচি ও জনসমর্থনটা জানান দেয়ার সুযোগ নেবেন বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন