২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:১৭:১১ পূর্বাহ্ন


নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলবে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০১-২০২৪
নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলবে গণতন্ত্র মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জোনায়েদ সাকি


গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এই ফোরটোয়েন্টি নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখান করি, জনগণ প্রত্যাখান করেছে। জনগণের দাবি আদায়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে এবং জনগণ বাংলাদেশে যে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি করছে তার ন্যায্যতার যে ভিত্তির স্বত্তা ৭ তারিখে তৈরি হয়েছে তার ওপর দাঁড়িয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে। গত ৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চের সমন্বয়ক গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এই কথা বলেন। সেই সাথে নতুন কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামী ১২ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভের ঘোষণা দেন তিনি। 

 তিনি আরো বলেন, এই আন্দোলন বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম, জনগণের যে নেতৃত্ব ইতিমধ্যে এই আন্দোলনে আছে তাদের ওপর ভরসা রেখে মানুষ ভোটদানে বিরত থেকেছেন এবং এই আন্দোলন থেকে বাংলাদেশের বিজয়ের যে নেতৃত্ব সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে। গণতন্ত্রেরর মঞ্চের বক্তব্য স্পষ্ট-৭ তারিখে যা ঘটেছে সেটা কোনো নির্বাচন নয়, এটা নির্বাচনের নামে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার আরেকটি তৎপরতা এবং ভয়ংকর প্রহসন। ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলেছেন, ট্রেন মিস করেছেন, এই ট্রেন বাংলাদেশ ধবংসের ট্রেন- এই ট্রেন মিস করে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ গৌরববোধ করছে তারা। বাংলাদেশের মানুষ এই নির্বাচন প্রত্যাখান করে নতুন গণপ্রতিরোধের যে সূচনা করেছেন সেই গণপ্রতিরোধ বাংলাদেশকে রক্ষা করবে সেটাই বাংলাদেশের মানুষ এখন অনুভব করছেন।” সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। 

‘আন্দোলনের লাগাতার কর্মসূচি চলবে’ 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি। ২৮ অক্টোবর সরকারের সেই বর্বর আক্রমণের পর থেকে ধারাবাহিতভাবে হরতাল-অবরোধ সমস্ত কর্মসূচি আমরা পালন করেছি। আমরা লাগাতার ভাবে এই আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। একটি কমন দাবি নিয়ে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি। আমরা মনে করি, যুগপৎ যদি কাযর্কর হয়ে পথে নামে যেরকম করে আপনারা চাইছে সবাইকে একসাথেই দেখা যাবে। আমরা যুগপৎ আন্দোলন কনটিনিউ করতে চাই। সেটাকে পারলে আরও সম্প্রসারিত করব। আমরা মনে করছি এখন পর্যন্ত আমরা যে ধারায় আন্দোলন করছি তাতে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। দিস ইজ দ্য ফাস্ট টাইম মানে বাংলাদেশ এই তথাকথিত নির্বাচনে সরকারের সমস্ত অ্যাকটিভি ধিকৃত হয়েছে। আপনি দেখেছেন, আমেরিকাসহ সবাই বেশির ভাগই বলেছে যে, এটা নির্বাচন হয়নি। এটা একটা জাল নির্বাচন হয়েছে, ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। আমেরিকাসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব বলেছে, আমরা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সাথে থাকব। আমরা মনে করি বিশ্ব বিবেক, বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তি, বিশ্বের মৌলিক অধিকার আমাদের সাথে আছে। আমরা করি এটাও শক্তি হবে আগামী দিনে আমাদের বিজয় অর্জনের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, আমরা চাই যে ফর্ম আন্দোলন করেছি, বিশেষ করে সহিংস আন্দোলন বর্জন করতে চাই। আমরা সহিংসতার পথে যায়নি। এখনো যাইনি। শুধু সরকারকে বলি, আমরা সহিংসতার পথে যাইনি মানে যা-ইচ্ছ-তাই করা যাবে এরকম যদি মনে করে তাহলে ভুল করছেন। সেগুলোর জবাব অতীতে হয়েছে, বর্তমানে হচ্ছে, ভবিষ্যতে হবে। আমরা নীতিগতভাবে অহিংসতার রাজনীতিতে আছি। জনগণের যে শক্তি সেই শক্তির কাছে সরকারকে মাথা নতে বাধ্য করতে আমরা লড়াই করছি। 

‘জনগণের সাথে ইসির প্রতারণা’ 

জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধিক্কার জানাই। এই নির্বাচন মিশন একটা সাংবিধানিক নির্বাচন তার নিজের আরপিও অনুযায়ী। এক. আওয়ামী লীগ তার নিজের দলের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে যেভাবে প্রার্থী দিয়েছে তার জন্য প্রশ্ন পর্যন্ত করেনি। দুই হচ্ছে. যখন মানুষ ভোট দিতে যায়নি, এমনকি স্বতন্ত্ররাও যেসব জায়গায় নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্ররা সেখানেও আমরা খোঁজ নিয়েছি বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে- সেখানেও মানুষের ভোটের উপস্থিতি এরকম বিরান ছিলো যেমনটা আমরা ঢাকা শহরে দেখেছি। সেরকম জায়গাতেও আজকে যে সহিংসতা হয়েছে এবং সেই সহিংসতাগুলোকে আড়াল করে রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তার পরেও ২৮ শতাংশ দেখিয়ে যাচ্ছিল। সেই ২৮ শতাংশ এক লাফে ৪০ শতাংশ চলে গেলো। এখন ৪১-৪২ বলা হচ্ছে। এই যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল তিনি বিশ্রামের ছিলেন তিনি নিজেই বলেছেন-তিনি যখন এসে প্রথমে বলছেন ২৮ শতাংশ... এসময়ে তার পাশে থেকে একজন জানিয়ে দিচ্ছেন যে, এটা ৪০ শতাংশ হবে। তিনি যে সেটাকে প্রশ্ন না করে, খোঁজ না নিয়ে এভাবে বলে দিলেন এবং সেটাই জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছেন। মানুষকে এভাবে ধোকা দেয়া, কিভাবে ব্যালট স্টাইফিং হয়েছে ‘সিল মারো ভাই সিল মারো’ এবং সেটা কিভাবে ব্যালট বাক্সে ভরা হয়েছে তার শত শত ভিডিও ফুটেজ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। ভোট বাড়িয়ে দেখাটা যে একটা প্রহসন- এটাকে ন্যূনতম প্রশ্ন করতে পারলেন-তার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের জনগণের সাথে যে প্রতারণা এবং প্রহসন তার বড় অংশীদারে পরিণত হলো। 

‘ভারত-চীন-রাশিয়ার অবস্থান দুর্ভাগ্যজনক’ 

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, ভারত বাংলাদেশে যে নির্বাচন, নির্বাচন নামে যে তামাশা মঞ্চস্থ হয়েছে, জনগণের ভোটের অধিকার যেখানে আরেকবার হরণ করা হয়েছে...এই সমস্ত বিবেচনা করে ভারত সরকার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তারা বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে তাদের যে রণনীতি বা রণকৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক শর্তে বর্তমান সরকারকে কেন্দ্র করে ভারত তার প্রতিক্রিয়া দিয়েছে আমরা মনে করি। জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এই প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করেছি। ২০১৪ সালে আপনাদের মনে আছে কিভাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে ঢাকাতে নিয়ে এসে জাতীয় পার্টিকে তখন বাধ্য করেছিলো নির্বাচনে যাওয়ার জন্য। ২০১৮ সালে একই রকম দিনের ভোট যখন রাতে সংঘটিত হলো সবার আগে ভারত বিভাবেি এই তামাশার নির্বাচনকে সমর্থন দিয়েছে। আজকে সারা দেশের মানুষ যখন সাক্ষ্য দিচ্ছে, জাতীয় পার্টির জিএম কাদের সাহেব তিনি যখন সাক্ষ্য দিচ্ছেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এমনকি আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী তারা যখন সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, এটা কোনো নির্বাচন হয়নি, এটা নির্বাচনের নামে একধরনের মানুষের অধিকার হরণ করার জায়গাটা হয়েছে-এই কথা বলার পরে ভারত এমনকি রাশিয়া, চীন তারা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বাংলাদেশে তারা তাদের যে জিও পলিটেক্যালি ইন্টারেস্ট সেটা বিবেচনা তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি তাদের যে সমর্থন সেই সমর্থন বিবেচনায় নিয়ে তাদের এই প্রতিক্রিয়াটা যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম যে, ভারত ’১৪ বা ’১৮ সালের মতো একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হবে না। এদেশের মানুষের গণতন্ত্রের আকাংখা, তাদের অধিকার এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন তার পক্ষে ভারতসহ আমাদের যে আন্তর্জাতিক শরিক তারা তাদের অবস্থান গ্রহণ করবেন। দুঃখজনক হলো সেই অবস্থান তারা গ্রহণ করতে পারেনি। এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখতে গিয়ে বাস্তবে তারা আসলে সমগ্র দেশ ও জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ’একদলীয় বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এই নির্বাচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

‘সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার ছাড়া জনগণের বিজয় হয় না’ 

এই নির্বাচনের জনগণের বিজয় হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এহেনে বক্তব্যের সমালোচনা করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, এই সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে হাঁটেনি। তারা জোর করে একটি একতরফা নির্বাচন করছে, সেখানে জনগণ ভোট দেয়নি। সেই একতরফা নির্বাচনকে প্রধানমন্ত্রী জনগণের বিজয় বলছে যার সাথে বাস্তবতার মিল নেই। এই নির্বাচনে দশ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ করেছে কিনা সেটা নিয়ে আমরা সন্দেহ পোষণ করেছি। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেয়া যায় যে, সেটি ২০ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটি দেশের ৮০ শতাংশ ভোটারের অংশগ্রহণ ছাড়া কিভাবে নির্বাচনের ফলাফলকে জনগণের বিজয় বলা হয় সেটি জনগণ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোন জায়গায় কিভাবে আছে সেটি আমাদের জানা নেই, সেখানে ৮০ শতাংশ ভোটারকে বাইরে রেখে গণতন্ত্রের চর্চা হয় এটি পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই- সেই গণতন্ত্রকে গণতন্ত্র বলা যায় না।

ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, জনগণ আমাদের পক্ষে আছে, তার প্রমাণ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি। ফলে ওবায়দুল কাদের যে ট্রেন মিসের কথা বলে ঢেঁকুর তুলছেন তাতে তিনি আত্মতৃপ্তি পেতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো তাদের সাথে জনগণ নেই। আমরা জনগণের ট্রেন মিস করিনি, আমরা বিজয় লাভ করেছি। বরং একতরফা নির্বাচন করে তাদের (সরকারের) নৈতিক পরাজয় ঘটেছে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রাজনৈতিক সমন্বয়ক ফরিদুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের কোনো পরোয়া করে না। এই যে নির্বাচনটা হলো এটা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। নির্বাচনের ফলাফলটা দেখলে বুঝবেন- আওয়ামী লীগ ২২২, জাতীয় পার্টি ১১, শরিক দল ৩ এবং স্বতন্ত্র ৬২। এই স্বতস্ত্র প্রার্থীরা কার? তারা আওয়ামী লীগের কোনো না কোন পর্যায়ের নেতা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বারকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হারিয়েছেন। সেখানে অন্তত লোক দেখানো হলেও তারা দলের ওই নেতাদেরকে যারা রানিং পোস্ট বা পদে থেকে নির্বাচন করেছেন তাদেরকে তারা বহিষ্কার করেনি। নির্বাচন কমিশন কিভাবে একটি দল একাধিক প্রার্থী দিতে পারে সেই প্রশ্নটাও এখন পর্যন্ত করেনি। অতএব এই নির্বাচন শুধু নৈতিকভাবে নয়, সাংবিধানিক ও আইনিভাবেও অবৈধ। 

সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসপির মো. সিরাজ মিয়া, ভাসানী অনুসারি পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, মনির উদ্দিন পাপ্পু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নি শিখা জামালী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন হাসিব উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন