০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৯:৩৩ পূর্বাহ্ন


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ব্যাবস্থা
ইমিগ্রেশন নিয়ে বাইডেন প্রশাসনে সংশয় ও অবিশ্বাস
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২২
ইমিগ্রেশন নিয়ে বাইডেন প্রশাসনে সংশয় ও অবিশ্বাস


 সংশয় ও অবিশ্বাস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ইমিগ্রেশন নীতিকে বিপর্যস্ত করেছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন ট্রাম্পের সীমান্ত নীতি দ্রুত পরিবর্তন করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু দক্ষিণ সীমান্তে যে ইমিগ্র্যান্টদের প্রবাহ দিন দিন বৃদ্ধি পায়, তাতে তিনি তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন। বাইডেন ভয় পান যে, বিগত প্রশাসনের নীতিসমূহ দ্রুত পাল্টাতে গেলে তাতে সীমান্তে ২০ লাখ মাইগ্র্যান্ট জড়ো হবে। তিনি বলেন তা ধীরে সুস্থে দেখা হবে, তবে প্রথম দিনে নয়। 

কিন্তু তার প্রশাসনের প্রথম দিনে বাইডেন ১. মুসলমানদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন, ২. ট্রাম্প যে প্রত্যেক বহিষ্কারযোগ্য ইমিগ্র্যান্টকে বহিষ্কার করার ইমিগ্রেশন নীতি প্রয়োগ করেছিলেন, তা প্রত্যাহার করেন। ৩. বহিষ্কারের ওপর ১০০ দিনের স্থগিতাদেশ, ৪. সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ বাতিল এবং ৫. মেক্সিকোতে থাকার (এমপিপি) এনরোলমেন্ট বা তালিকাভুক্তকরণ সাসপেন্ড বা বন্ধ রাখা।

বাইডেন কেন এ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এখন ইমিগ্রেশন পণ্ডিতরা সে প্রশ্ন তুলছেন। বলছেন, গত ২০২১ অর্থবছরে দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত থেকে ১৭ লাখ অবৈধভাবে আসা ইমিগ্র্যান্টকে আটক করা হয়েছে। গত ৬০ বছরে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। ২০২২ অর্থবছরে অর্থাৎ গত মার্চ মাস পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি অবৈধভাবে প্রবেশ করা লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রায় ৩ লাখ লোক সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করলেও ধরা পড়েনি। 

বাইডেনের এমপিপি যেভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে তা অনেকে মনে করে পাগলামির পর্যায় পড়ে। তার প্রথম দিন সাসপেনশনের পর নতুন করে এনপেলমেন্ট বাতিল করে বাইডেন এক স্মারক জারি করেন। এরপর এক ফেডারেল কোর্ট বাইডেনের এই এমপিপি বাতিলকরণকে প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকরণ আইনের পরিপন্থী বলে বর্ণনা করে। কারণ তা ইমিগ্রেশন আইনের বাধ্যতামূলক আটকাদেশের পরিপন্থী। আর কোর্ট থেকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, এমপিপি খাতে সারাদেশে বিশ্বস্ততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়। আর সাতদিন না ফেডারেল কোর্ট সকল আটকদের বন্দি করে রাখার ব্যবস্থা না করতে পারে, ততদিন এই এমপিপি বা মেক্সিকোতে ইমিগ্র্যান্টদর অবসান বলবৎ থাকবে। 

বাইডেন একদিকে এমপিপি বাতিল করতে চায়, অন্যদিকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আটক ক্যাপাসিটি বাড়ায়নি। বরং পরবর্তী অর্থবছরে তিনি বর্তমান ফ্যাসিলিটির ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড কমানোর প্রস্তাব করেছে। 

বাইডেন কেন কোর্টের আদেশ মানছেন না, যাতে তিনি এমপিপি বা মেক্সিকোতে ইমিগ্র্যান্টদের অবস্থান করা বাতিল করতে পারে? বাইডেনের আরেক অসামঞ্জস্য সিদ্ধান্ত হচ্ছে টাইটেল ৪২ আদেশ, যা কাস্টমস বর্ডার প্রোটেকশনকে অবৈধভাবে আসা লোকদের বহিষ্কার করার অনুমতি দিয়েছে, তা ইউএস কোডের টাইটেল-৮ মোতাবেক প্রসেস না করে করা হয়েছে।

এই বহিষ্কারাদেশ আগামী ২৩ মে পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। সর্বোচ্চ ডোমেস্টিক নীতি উপদেষ্টা সুসান রাইস ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যুক্ত দেখান যে, কোভিড-১৯ থেকে সীমান্তবাসীদের রক্ষার জন্য টাইটেল ৪২ দরকার, এটা দরকার যতে বয়স্ক মাইগ্র্যান্টদের ছেড়ে দেয়া ও সীমান্তে গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে রাজনৈতিক চাপ কমানোর জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে। টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর জন করনিন বলেন, অন্যান্য পরিবর্তন ছাড়া টাইটেল ৪২ বাদ দেয়া হলে তাতে মাইগ্র্যান্ট ও ড্রাগের সরবরাহের বন্যা বয়ে যাবে। 

হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা এই টাইটেল ৪২ তুলে দেয়ার পর প্রতিদিন ১৮ হাজার লোককে সীমান্ত থেকে গ্রেফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অনেক ডেমোক্রেট ও কংগ্রেসে বলেছেন টাইটেল ৪২ বাতিল স্থগিত রাখা প্রয়োজন। 

মিশিগানের সিনেটর গ্যারি পিটারস বলেছেন, বাইডেন টাইটেল ৪২ বাতিল করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার। অন্তত তা বিলম্বিত করা দরকার। একটা ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ না করা পর্যন্ত হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্ট ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করেছে। তাতে নতুন ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া নিয়ে বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়, অ্যাসাইলাম আবেদন নিষ্পত্তিকরণে বহুসংখ্যক অ্যাসাইলাম অফিসার নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আগামী মে মাসের শেষ দিকে বা জুন মাসের পূর্বে এ প্রক্রিয়া শুরু হবার সম্ভাবনা নেই। 

ইতিমধ্যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসে দুটি পৃথক ক্যাম্প রয়েছে। উভয় ক্যাম্প ইমিগ্রেশনের সুতা টেনে ধরতে চায়। একদিকে রয়েছে চিফ অব স্টাফ রণ ক্লেইন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেফ সুল্লিবান, সিনিয়র অ্যাডভাইজর সিডরিক রিচমন্ড ও অভ্যন্তরীণ পলিসি উপদেষ্টা সুশান রাইস। তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসার বিরুদ্ধে। 

অন্যদিকে রয়েছে প্রেসিডেন্টের ক্যাম্পেইন উপদেষ্টারা। তাদের অনেকেই উচ্চপদস্থ ইমিগ্রেশন পলিসি নিয়ে চাকরিতে রত। অনেকে হায়াইট হাউস, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও স্টেট ডিপার্টমেন্টে চাকরিতে রত। তারা দাবি করেছে  ইমিগ্রেশন কমালে তা কাজ করবে না। তারা ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে চায়। তারা অ্যাসাইলাম ব্যবস্থা দ্রুত করতে চায়। তারা স্বদেশ থেকে অ্যাসাইলামের আবেদন করার সুযোগ নিতে চায়। তারা স্বদেশ থেকে অ্যাসাইলামের আবেদন করার সুযোগ দিতে চায়।

আর অনেকগুলি স্টেট ইমিগ্রেশনের পথ সৃষ্টি করতে চায়। অনেক হোয়াইট হাউস সহকারী হতাশ হয়ে চলে গেছেন। সাম্প্রতিক টাইটেল ৪২ নিয়ে দ্বন্দ্ব শেষ হয়ে গেছে। এতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন দুদিকে ইমিগ্রেশন নিয়ে রশি টানাটানির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। কি করবে, কোন দিকে যাবে তা নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই। 


শেয়ার করুন