০১ মে ২০১২, বুধবার, ০৫:১৪:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আইএমইডি প্রতিবেদনে তোলপাড়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আইএমইডি প্রতিবেদনে তোলপাড়


পরিকল্পনা কমিশনের অধীন বাস্তবায়ন, পরিদর্শন এবং মূল্যায়ন বিভাগ প্রণীত বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত বিষয়ে বর্তমান সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর পর অপসারণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সরকারের ভ্রান্ত পরিকল্পনা, দুর্নীতিগ্রস্ত বাস্তবায়ন কৌশল, দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ অ্যাক্ট (দায়মুক্তি একটি) আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ সংবলিত মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনজনিত সরকারের অলস বিদ্যুৎ প্ল্যান্টকে ডলারে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ক্যাপাসিটি চার্জের বিষয়টি একটি লুটেরা মডেল। এককথায় বলা চলে, এতো দিন ভোক্তা অধিকার সংস্থা বাংলাদেশ এবং জ্বালানি বিশেজ্ঞরা জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত নিয়ে যে ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেছে, সেই একই ভাষা সরকারের একটি মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে। 

স্বাভাবিক কারণেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই প্রিন্ট মিডিয়ায় বিষয়টি উঠে এলে বিষয়টি পরিকল্পনামন্ত্রীর নজরে আসে। প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। সংশোধন করে প্রতিবেদনের বেশকিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়ে তার মন্ত্রণালয় থেকে এই ধরনের অশালীন ভাষা সংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি জানান, যে তার মন্ত্রণালয় প্রণীত প্রতিবেদনে কোনো সরকারি প্রকল্পের এই ধরনের সমালোচনা এবং অশালীন শব্দ ব্যবহার করার অবকাশ নেই। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলক্রমে মন্ত্রণালয়ে থাকা সমালোচকদের কিছু প্রতিবেদনের অংশ সংযোজিত হয়েছে। কেন হয়েছে সেটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। 

আইএমইডি মূল প্রতিবেদন প্রস্তুতিতে সূত্র হিসেবে বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন, বিদ্যুৎ বিভাগের  বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন, অর্থায়ন, বাস্তবায়নসংক্রান্ত তথ্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। দেখা গেছে, গ্রিড সংযুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যখন ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট, তখন সর্বোচ্চ পিক চাহিদা দিনে ১২ হাজার ৯৯ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় ১৩ হাজার ৮৫৯ মেগাওয়াট। অর্থাৎ প্রায় ৪৪ শতাংশ উৎপাদন ক্ষমতা অলস থাকছে। এগুলোর অধিকাংশ প্ল্যান্টের মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ডলারে।  এগুলোর এই হিসাব করে দেখানো হয় যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো প্ল্যান্টের উৎপাদন মূল্য ইউনিটপ্রতি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ সাবসিডি দেওয়ার পরও বিপিডিবির ক্রমপুঞ্জিত ক্ষতি সংস্থাটিকে দেউলিয়ার পর্যায়ে নিয়ে গেছে।  

সবচেয়ে যেই সঠিক তথ্য আইএমইডি প্রতিবেদন তুলে ধরেছে যে, টেকসই জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত না করেই সরকার প্রয়োজনের অনেক বেশি বিদ্যুৎ কারখানা স্থাপন করায় জ্বালানি আমদানির প্রয়োজন পড়েছে। অথচ সরকারের কাছে বিদেশি মুদ্রার সংকট থাকায় কয়লা এবং এলএনজি আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ভ্রান্তনীতির কারণে সরকার নিজেদের কয়লা, গ্যাস উত্তোলন কাজ অবহেলা করে বর্তমান সংকট সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি দায়মুক্তি অ্যাক্টের আশ্রয়ে একশ্রেণির অপেশাদার, অদক্ষ আমলাদের দৌরাত্ম্যে সীমাহীন দুর্নীতি জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতকে অবর্ণনীয় সংকটে ফেলেছে। 

সরকার ১০০ শতাংশ জনগণকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনার মতো শুভ কাজ করেও কিন্তু জাতিকে তীব্র এবং অনিশ্চিত জ্বালানি নিরাপত্তায় ফেলে দিয়েছে। অবিলম্বে দায়মুক্তি অ্যাক্ট বাতিল এবং ক্যাপাসিটি চার্জ মডেল থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি। এ সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত উঠে এসেছে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে। গত ৮ জুলাই সে প্রতিবেদনটি ‘দেশ’-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা গেল- 


ভারতীয় ও চীনা সরবরাহকারীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত

বিবিসি বাংলা, ৮ জুলাই ২০২৩

বাংলাদেশের সরকারি একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে অপচুক্তি, ভুল নীতি এবং দুর্নীতির কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার ‘ডলারে’ গচ্চা চলে গেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ভাড়া দেওয়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়াকে ‘লুটেরা মডেল’ বলেও বর্ণনা করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দপ্তরের কারিগরি কারিগরি জ্ঞানহীন, অভিজ্ঞতাহীন একদল দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থাপকদের কারণে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাত অযোগ্য (মূলত ভারতীয় ও চীনা) সরবরাহকারীদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি দপ্তর বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা এটি তৈরি করেছেন, উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা। সরকারি প্রকল্পের পরিবীক্ষণ করা এবং বিভিন্ন খাত নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে এই বিভাগটি। বিদ্যুৎ খাত নিয়ে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি গত জুন মাসে জমা দেওয়া হয়েছে। তার একটি কপি পেয়েছে বিবিসি বাংলা। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এই প্রতিবেদনের সঙ্গে তিনি একমত নন এবং বিভিন্ন সমালোচকদের লেখার অংশ ভুলভাবে এর মধ্যে এসেছে। তারা সেটি সংশোধন করে আসল প্রতিবেদন তৈরি করছেন।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি এবং অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতা এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছে। জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাত শ্বেতহস্তীতে পরিণত হতে চলেছে বলে গত মাসেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি। মার্চ মাসে একটি সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছিল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার কারণে ভর্তুকি বাড়ছে আর সেই বাড়তি ভর্তুকির দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে।

প্রতিবেদনে কী আছে?

এই গবেষণার মুখ্য বিবেচ্য বিষয় হলো বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পসমুহ কতটুকু দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং অধিকতর আউটপুট ও আউটকাম পেতে হলে কী কী উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে, তার সুপারিশ করা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘গত ১৪ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা ‘ডলারে’ গচ্চা গেছে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে। ভর্তুকির চক্র থেকে বিদ্যুৎখাতকে বের করার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিনিয়োগ আসবে না বিদ্যুৎখাতে, এই মিথ্যা থামাতে হবে।’

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে না থাকলেও ভাড়া হিসেবে সরকার যে টাকা দেয়, তাকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়। ডলারে সেই মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থাকে ‘লুটেরা মডেল’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘ক্যাপাসিটি চার্জ লুটেরা মডেল। স্ট্যান্ডার্ড হচ্ছে ওভারহোলিং চার্জ।...মাসের পর মাস উৎপাদনে অক্ষম, অথচ ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া বাজেট ড্রেনিং অপচুক্তি।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে যেসব চুক্তি এবং সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা বাজেটকে শুষ্ক করে ফেলছে। ডলারে পেমেন্ট করা আইপিপি চুক্তি বিদ্যুৎখাতের অন্যতম প্রধানতম সংকটের জায়গা। সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি ব্যাংকঋণের কোলেটার‌্যাল বলে, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ডলার নয় বরং টাকায় পেমেন্ট দিতে হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র্র দেশীয়, তাদেরকে ফরেন কারেন্সি পেমেন্ট দেওয়া অযৌক্তিক। ইউনিট প্রতি উচ্চমূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ, স্বল্পমূল্যে জ্বালানি ও জমি, সহজ ব্যাংকঋণ, শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা ইত্যাদি ‘বাজেট ড্রেনিং’ গ্যারান্টি বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ফান্ড সংকটের সমাধান নেই বলা হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎখাত উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বগতি, শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি এবং নগরায়নে দ্রুত অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশের শতভাগ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে পিডিবি লোকসান গুনেছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমান ও আগামী দুই বছরেই পিডিবি লোকসান গুনবে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ১২ বছরে বিদ্যুৎখাতে সরকার যা লোকসান করেছে, আগামী দুই বছরে তার চেয়ে বেশি লোকসান গুনবে।

বাংলাদেশের সরকার ২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি’ নামে একটি আইন করে, যা জ্বালানি খাতের দায়মুক্তি আইন বলে পরিচিত। এই আইনের ফলে বিদ্যুৎখাতে লোকসান আরও বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। “দায়মুক্তির আইনের ফলে বিদ্যুৎখাতের ইউনিট প্রতি ক্রয়মূল্য ও খরচের মডেল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জসহ হিসেবে দেখা যায়, কিছু আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি বার্ষিক গড় মূল্য ১০০ টাকাও ছাড়িয়েছে। ডরারে পেমেন্ট বলে এতে পিডিবির লোকসান থামানো যাচ্ছে না। এই দুর্বৃত্তায়ন থামানো জরুরি,’’ বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সরকারি এই প্রতিবেদন বলছে, ‘কয়েক ডজন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি দক্ষতা ৩০ শতাংশের কম। এর ফলে তারা জ্বালানি বেশি পোড়ায় কিন্তু কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বড় সমস্যা ক্যাপটিভের কয়েক হাজার বিদ্যুৎকেন্দ্র্র। সার্টিফিকেট ওরিজিন নকল করে মিথ্যা ঘোষণায় বিদেশ থেকে আনা মেয়াদোত্তর্ঢু ও চরম জ্বালানি অদক্ষ এসব প্ল্যান্ট বিদ্যুৎখাতের গলার ফাঁস।’

বিদ্যুৎখাতে দুর্নীতি বান্ধব ক্রয় প্রক্রিয়ায় সংস্কার দরকার জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কারিগরি জ্ঞানহীন, অভিজ্ঞতাহীন একদল দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থাপক (মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, কেন্দ্রীয় ক্রয় কমিটি, সিপিটিইউ) ভুল ও অদূরদর্শী পিপিএ/পিপিআর নামক আইনি প্রক্রিয়ার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতকে অযোগ্য (মূলত চীনা ও ভারতীয়) সরবরাহকারীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র বানিয়ে ফেলছে।’ সবমিলিয়ে বিদ্যুৎখাত বহুবিধ সমস্যার মুখোমুখি। সমাধানে দরকার মেধাবী, দূরদর্শী, ভবিষ্যতমুখী স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের জন্য পৃথক সংস্থা গঠন করা হয়েছে। এই তিন ধরনের সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। প্রাথমিক জ্বালানি উৎস নিশ্চিত না করেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

সেখানে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ সেক্টরে বাংলাদেশের সক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্বে বিদ্যুৎ সেক্টরে দক্ষ জনবলের ঘাটতি থাকলেও বিভিন্ন টার্ন-কি প্রকল্পে বিদেশি জনবলের সঙ্গে কাজ করে বাংলাদেশেও বিপুলসংখ্যক দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি এই পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে পাঠানো হয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তারা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সরকারি এই প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ কর্তৃক প্রকল্প পরিদর্শন করে সমস্যা চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় সময়োপযোগী সুপারিশ করা হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, সুপারিশসমূহ নথি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী যা বললেন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ এই প্রতিবেদন তৈরি করলেও এর সঙ্গে একমত নন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি মনে করেন, সরকারি নথির বাইরের বিভিন্ন প্রতিবেদনের বক্তব্য এর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে আমি দেখেছি, এটা একটা জড়িয়ে যাওয়া রিপোর্ট। কিছুটা আমাদের এখানে তৈরি করা ছিল, কিছুটা অন্যান্য কাগজ ছিল-বিভিন্ন সমালোচকরা, নিবন্ধকরা বিভিন্ন পেপারে যা পাবলিশ করেন, সেগুলো দেখার জন্য আমাদের এখানে রাখা হয়, সেগুলোই কোনো একপর্যায়ে বা মিসটেক, অসাবধানতায় ওদের কিছু কিছু ভাষ্য এখানে ঢুকে গেছে। যে ভাষা আইএমইডির ভাষা নয়, বিবিসি বাংলাকে বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

‘রিপোর্টটা হয়তো আমাদের নামেই গেছে। লম্বা চেইনের কোন একপর্যায়ে কাজটা হয়েছে। আমরা এখন খোঁজখবর করছি, আমরা এটা অস্বীকার করছি। এটা আমাদের রিপোর্টের পুরো অংশ নয়। আমাদের রিপোর্ট রুটিন রিপোর্ট হয়, সেখানে ইমোশন আবেগ, ক্রোধের কোন অবকাশ নেই, কাউকে দায়ী করাও আমাদের দায়িত্ব নয়।’ দুর্বৃত্ত হয়ে গেছে, অপচুক্তি, লুটেরা মডেল এগুলো আমাদের ভাষা নয়, আমাদের কথা নয়। এগুলো কোনো কোনো ক্রিটিকের আর্টিকেল থেকে এখানে ঢুকেছে। কোনো মহল ইচ্ছাকৃতভাবে বা যে কোনোভাবে ঢুকেছে। আমার সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, তিনি বলেন।

আইএমইডির এই প্রতিবেদনটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রথমে প্রকাশ করা হলেও এই বিষয়টি নজরে আসার পরেই প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। পরবর্তীতে মূল প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এমনকি হতে পারে যে, এই প্রতিবেদনে সঠিক তথ্যই বেরিয়ে এসেছে, কিন্তু এখন সরকার সেটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে?

এম এ মান্নান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘না না, এটা আমি অস্বীকার করছি। সত্য-অসত্য মিলিয়ে এখানে অসত্যটা বেশি এসেছে। এখানে ক্ষোভ, অভিমানের সুযোগ নেই। এটা আমাদের ভাষা নয়, আইএমইডির ভাষা নয়। যে রিপোর্ট আমরা তৈরি করেছি, ওখানে এসব শব্দ নেই, এটা ইনসার্ট করেছে কোনো মহল। আমরা সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।’

তবে পরিকল্পনামন্ত্রী সমালোচনামূলক বেসরকারি বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঢুকে পড়ার কথা বললেও এই প্রতিবেদনে যেসব তথ্যসূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, বিআইপিপিএ, পাওয়ার ডিভিশন, সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা, আইএমইডির বিভিন্ন সমীক্ষা প্রতিবেদন ও আইএমইডির পরিদর্শন প্রতিবেদনের উল্লেখ রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ প্রকল্পগুলোর দৈনন্দিন অগ্রগতি এবং সমন্বিত কার্যক্রম সম্পর্কে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের নিয়মিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ প্রকল্প পরিচালকদের সাক্ষাৎকার, সংস্থাভিত্তিক অগ্রগতি ও আর্থিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সেলফোনে কল করে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন