০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:১৭:১০ পূর্বাহ্ন


সংকটের সমাধান রাজপথে নয় সংলাপে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৮-২০২৩
সংকটের সমাধান রাজপথে নয় সংলাপে


নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে বিদ্যমান বাস্তবতায় রাজপথের আন্দোলনে রাজনৈতিক সংকট উৎরানো যাবে না। সরকার এবং বিরোধী জোট আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পরস্পর বিরোধী অনড় অবস্থান থেকে রাজপথে মুখোমুখি।  গ্যালারিতে বসে খেলার সূচনা দেখছে আগ্রহী অতি উৎসায়ী কূটনৈতিক মহল। কিন্তু রাজপথের কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে সহিংস হয়ে ওঠায় শঙ্কিত দেশবাসী। এমনিতেই দ্রব্যমূলের অগ্নিমূল্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ সংকটে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। তার পর একের পর রাজধানী ঢাকায় নিষ্ফলা সমাবেশ-মহাসমাবেশ থেকে অর্জনের থেকে সংকট ত্বরান্বিত হচ্ছে। 

হয়তো মার্কিন ভিসানীতির কারণে এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের রক্তপাত  বা সংঘর্ষ হয়নি। কিন্তু ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে বিএনপির অবস্থান যা প্রকারান্তে অবরোধ কার্যক্রম ঘিরে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, আমানউল্লাহ আমান, গয়েশ্বর রায়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে রাজকীয় আপ্যায়ন জাতিকে বিশ্ববাসীর সামনে মর্যাদার আসনে আসীন করেনি। বরং চলতি পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক কার্যক্রমের অসাড়তা প্রমাণ করেছে। বিরোধী দলগুলো রাজপথে সক্রিয় থেকে তাদের নির্বাচন ভাবনার করা জোরে শোরে জানান দিয়েছে। সমাবেশ মহাসমাবেশ শেষে হয়তো বুঝতে পারছে সরকারকে  কোনোভাবে নিজেদের অবস্থান থেকে টলানো যাবে না। সরকার নিজেও এবার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে। আন্তর্জাতিক মহল নানাভাবে সক্রিয় আছে। বর্তমান সরকারের অধীনেই কীভাবে অর্থবহ নির্বাচন করা যায়, সেই চেষ্টায় সব পক্ষ সংলাপে বসাই একমাত্র বিকল্প বলে প্রতীয়মান। বাংলাদেশে বারবার আসা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় কিন্তু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি শুনেছে। কেউ কিন্তু সরকারকে পদত্যাগ করে অসাংবিধানিক সরকারের প্রসঙ্গ তোলেনি। তবুও কেন বিরোধীদল নিষ্ফলা আন্দোলনে শক্তি ক্ষয় করছে? নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে হবে। এখন রাজপথে আন্দোলন করে সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করে কোনো পক্ষই লাভবান হবে না। 

এখন পর্যন্ত বিরোধীদল কিন্তু আগামী নির্বাচনে জিতে কীভাবে বর্তমান উন্নয়ন ধারা বজায় রাখবে, কীভাবে অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি বিদ্যুৎসংকট সামাল দেবে, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে একসঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত রাখবে, সেই ধরনের কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। জনগণ অতীতে বিএনপি, জাতীয় পার্টির শাসন  দেখেছে। যদিও বাংলাদেশিদের মেমোরি অনেকটা জেলি মাছের মতো। তবু ২০০১-২০০৬ জামায়াত-বিএনপি সরকারের বিভীষিকা অনেকের স্মরণ আছে। আর যেসব প্রান্তিক রাজনৈতিক নেতা বাগাড়ম্বর করছে তাদের কোনো জনভিত্তি নেই। 

একইভাবে সরকারি দলের অনেক মন্ত্রী-সাংসদ তৃণমূলে সংযোগবিহীন। অনেকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির অভিযোগ আছে। বিশেষ করে মেধাবী নতুন প্রজন্ম নিশ্চিত পরিবেশে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে বৈপ্লবিক কিছু ঘটে যেতেও পারে নির্বাচনে। 

এ পর্যায়ে মনে হচ্ছে অনেকই তো হলো। এখন রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের টেবিলে বসে অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করুক। কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে লাভ নেই। বিদ্যমান অবস্থায় কোনো বিদেশি শক্তি বা দেশি থাকা কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি কোনো দলকে ক্ষমতায় বসাবে না। নির্বাচনে জয় লাভ  সরকার করতে হবে। মনে রাখতে হবে নানা সমীকরণ বলছে, ২০২৪-২০২৮ দেশ পরিচালনা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

শেয়ার করুন