২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:০৬:১৯ পূর্বাহ্ন


ছাত্রলীগ নিয়ে যা বললেন মানিক
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৩
ছাত্রলীগ নিয়ে যা বললেন মানিক বক্তব্য রাখছেন সাবেক বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক


মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, ‘ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী তারা প্রকৃত আওয়ামী লীগার নয়। তারা মূলত বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট। এরা রাজাকার আলবদরের বংশধর। ছাত্রলীগে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা অনুপ্রবেশ করে বঙ্গবন্ধুর দলকে কলুষিত করছে এমনকি প্রশাসনে থাকা অনেক কর্মকর্তাও সাঈদীর পক্ষে কথা বলছেন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নেত্রকোণা পাবলিক হলে নেত্রকোণা জেলার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেত্রকোণা জেলার জেলা সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। 

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আরো বলেন, আওয়ামী লীগে পদ-পদবী দেওয়ার পূর্বে নেতাকর্মীদের পরিচয় আগে থেকে নিশ্চিত করতে হবে। এবং চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিলীন করে এই বিশ্বাসঘাতক রাজাকার, আলবদরের বংশধররা উঠে পড়ে লেগেছে। তাদেরকে যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে নিয়ে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অপ প্রচার চালাচ্ছে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, মির্জা ফখরুল রাজাকারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি অবাক হয়েছি যখন দেখি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলা কিছু মানুষও তার পক্ষে কথা বলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরিষাবাড়ীতে ১৫ আগস্টের শোক সভায় বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া মাহফিল শেষে সেখানকার এক শিক্ষক সাঈদীর জন্য দোয়া করে যা খুবই মর্মান্তিক একটি ঘটনা।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক হওয়ায় আমি সাঈদী সম্পর্কে জানি।

সম্মেলন উদ্বোধন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেত্রকোণা জেলার আহবায়ক  কেশব রঞ্জন সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেত্রকোণা জেলার উপদেষ্টামন্ডলীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর খান পন্নী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেত্রকোণা জেলার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান খান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেত্রকোণা জেলার উপদেষ্টা আবুল মনসুর আহমেদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নেত্রকোণা জেলার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেত্রকোণা জেলা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মতিন খান, নির্মূল কমিটির সহযোগী সংগঠন জাগরণ সংস্কৃতি স্কোয়াডের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসবি বিপ্লব, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেত্রকোণা জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেত্রকোণা জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুজ্জোহা, নির্মূল কমিটির নেত্রকোণা জেলা শাখার সদস্য হুমায়ুন কবির লিটন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নেত্রকোণা জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক মুয়িজ খান মুক্তি, নির্মূল কমিটির নেত্রকোণা জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এসবি শাহীন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেত্রকোণা জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ওমর ফারুক, নির্মূল কমিটির নেত্রকোণা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত ঘোষ এবং নির্মল কমিটির নেত্রকোণা জেলা শাখার সদস্যসচিব শাহিন উদ্দিন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেত্রকোণা জেলার সদস্যসচিব শাহীন উদ্দিন আহমদ।

শাহরিয়ার কবির বলেন, আমরা চাই ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের মূল্যে অর্জিত জাতীয় সংসদে আগামী দিনে যারা আসবেন তারা দেশ ও মানুষের কথা বলবেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়বেন। তরুণ প্রজন্মের কাছে আমাদের প্রত্যাশা- যারা এবার প্রথম অথবা দ্বিতীয়বার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন তারা যেন কোনো ভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দ্বারা বিভ্রান্ত না হন এবং মুক্তিযুদ্ধের অহংকার হৃদয়ে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রার্থীদের জয়যুক্ত করবেন।

কেশব রঞ্জন সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে গারো পাহাড়ের পাদদেশে মগড়া, সুমেশ্বরী, কংস, ধনু, সাইদুলি, আত্রাকালি প্রভৃতি নদী প্রবাহিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপার লীলাভূমি নেত্রকোণা জেলা থেকে আমরা আরম্ভ করছি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা’। 

কাজী মুকুল বলেন, ‘মৌলবাদী ঘাতক দালালরা ’৭১-এ যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল তা ২০২৩-ও চলমান রয়েছে। ’৭৫-এ স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক দালালরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে বারবার হত্যা করতে চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা কোনো নির্দিষ্ট দলের হয়ে বা রাষ্ট্রক্ষমতা যাওয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করি না বরঞ্চ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যারা কাজ করেন তাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা কাজ করি। 

আসিফ মুনীর তন্ময় তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা খেয়াল করে থাকবেন বর্তমানে একাত্তরের ঘাতক দালালদের বংশধরেরা অনলাইনে নানান বিভ্রারিাক ও অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে হবে।’

আলী আজগর খান পন্নী নির্মূল কমিটির নেত্রকোণা জেলা শাখার সম্মেলনকে তাৎপর্যপূর্ণ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে নেত্রকোণায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মিত হলেও মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে স্বাধীনভাবে যাওয়া আসা করার সুযোগ পায় না এবং সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সুসংগঠিত হতে দেওয়া হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন নেত্রকোণায় কোনো জনপ্রতিনিধি নেই তাই আমলাদের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালিত হচ্ছে! আমি এর নিন্দা জানাই।’

শেয়ার করুন