২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৩৪:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


নির্বাচন ইস্যুতে শীর্ষ দুই দল বিপরীত মেরুতে
সংলাপে সমস্যার সমাধান হতে পারে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২৩
সংলাপে সমস্যার সমাধান হতে পারে


দেশজুড়ে বাংলাদেশের নির্বাচনঘনিষ্ঠ বিদেশি মহলেও এখন বহু চর্চিত প্রসঙ্গ সংলাপ। অবশ্যই সংলাপ হতে হবে সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে এককভাবে অথবা সম্মিলিতভাবে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় দুই প্রধান রাজনৈতিক দল যখন নির্বাচন বিষয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে এক দফার দাবিতে রাজপথে, তখন কী বিষয়ে এবং কী উদ্দেশ্যে সংলাপ হবে সেটি অনিশ্চিত। বাংলাদেশ ১৯৯১-২০২৩ পর্যন্ত তিন দশক (২০০৬-২০০৮ ব্যতীত) আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সরকারকে দেশশাসন করতে দেখেছে। দেশের পরিস্থিতি, বিশ্ব পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে। সংযোজিত বিশ্বের আধুনিক কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ তরুণ সমাজ এখন অনেক সমৃদ্ধ। এখন আর সহজে জনতাকে সম্পৃক্ত করে সরকার পতনের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা সহজ বা অনায়াসলব্ধ কাজ না। কিন্তু বাংলাদেশের বোদ্ধা সমাজসহ বাংলাদেশ বিষয়ে উৎসাহী সবাই চাইছে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হোক। জনগণ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনতার সরকার গঠন করতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে এখন খেলেছে বিদেশি খেলোয়াড় ও শক্তি। সরকারি দল ও বিরোধী দল, বিদেশি শক্তি এবং সংগঠনের কাছে নালিশ নিয়ে যাচ্ছে অথবা জবাবদিহি করছে। সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সরকারসংশ্লিষ্ট সবাই অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করলেও ২০১৪, ২০১৮ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে অধিকাংশ মহল বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভরসা পাচ্ছে না।

বিরোধী দল সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একদফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। সরকারি দল কনস্টিটিউশনের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত নির্বাচন বিষয়ে অনড়। উভয় পক্ষ ছাড় না দিলে সংলাপ এই মুহূর্তে অনিশ্চিত। দুই পক্ষ অনড় থাকলে রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য। বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে প্রতিবেশী ভারতসহ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যের আগ্রহ আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই চায় না বাংলাদেশ চীন রাশিয়া বলয়ে চলে যাক। যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগর, ইন্দো-চীন অঞ্চলে নিজেদের নিরঙ্কুশ প্রভাব বলয় চায়। অন্যদিকে ভারত বর্তমান সরকারের শাসনকালীন অনেকটা একচেটিয়া সুবিধা পেয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন চায় কি না সন্দেহ আছে। যুক্তরাষ্ট্র বিকল্প হিসেবে জাপানকে বাংলাদেশের অধিকভাবে সম্পৃক্ত দেখতে আগ্রহী। চীন, রাশিয়া বা অন্য দেশের এখানে বাণিজ্যিক স্বার্থ। এই ধরনের জটিল অবস্থায় এবং বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিরা নির্বাচন নিয়ে কোনো অরাজকতা চাইবে না।

ক্রমাগত তিন টার্মস ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা সরকার দেশের খোল নলচে পাল্টে দিয়েছে। অর্থনীতি এখন বিশাল। সারা দেশে বিদ্যুৎ সুবিধা সম্প্রসারিত, যোগাযোগব্যবস্থা অনেক উন্নত। কিন্তু সুশাসনের অভাবে দুর্নীতিও সম্প্রসারিত, সুবিধাবাদী আমলা এবং দুর্নীতিপরায়ণ একশ্রেণির ব্যবসায়ী মহল দেশ থেকে বিদেশে মুদ্রা পাচার করে অর্থনীতিকে বিশাল চাপে ফেলেছে। তাই সীমিত আয়ের মানুষ বাজারে নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে নিদারুণ কষ্টে। সাধারণ মানুষ রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। তবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তবে সরকারি দলের কিছু মন্ত্রী এবং অধিকাংশ সাংসদ বিষয়ে তৃণমূলে অসন্তোষ আছে। যদিও বিরোধী দল বিষয়েও জনগণ সন্দিহান, তবুও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জন রায় কোনদিকে যায় সন্দেহ আছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের এলিট বাহিনী র‌্যাবের কিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেদ্ধাজ্ঞা দেওয়ার পর অতি সম্প্রতি নির্বাচনকে উদ্দেশ্য করে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন প্রতিনিধি এবং ইউরোপিয়ান মিশনের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর নির্বাচন বিষয়ে পরিস্থিতির সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করেছে।

নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হতে হলে সেপ্টেম্বর থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকারের স্বরূপ দেখে আন্দাজ করা যাবে সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বিষয়ে কতটা আন্তরিক। উভয়পক্ষ সম্মত থাকলে বর্তমান কনস্টিটিউশনের অধীনেই নির্বাচনকালীন সরকারকে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ অবয়ব দেওয়া সম্ভব। একইভাবে সম্মতির ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনেও সংস্কার করা যেতে পারে। 

তবে সরকার দল এবং বিরোধী দলের সুবিবেচক নেতা-নেত্রীদের অনুরোধ করবো অচিরে সংলাপের ভিত্তিতে নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের। রাজপথে কোনো কিছুর সম্যান হওয়ার সুযোগ নেই এখন।

শেয়ার করুন