২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:৩৫:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


বাংলাদেশে এখন চলছে সুপার পাওয়ারের লড়াই
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
বাংলাদেশে এখন চলছে সুপার পাওয়ারের লড়াই গোলটেবিল বৈঠকে নেতৃবৃন্দ


বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে এখন সুপার পাওয়ারের লড়াই চলছে। এর পরিণতি দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে কেউ বলতে পারে না। এ অবস্থায় রাজনীতিবিদদেরই দেশের রাজনীতি ঠিক করতে হবে। ‘সমঝোতা নাকি সহিংসতা : কোন পথে আমরা?’ শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। 

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহ-সম্পাদক রুমিন ফারহানা, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সুজন-এর প্রধান কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।   

মতিউর রহমান চৌধুরী আরো বলেন, দলগুলো ক্ষমতায় যেতে ব্যস্ত। তারা অন্য কিছু চিন্তা করতে পারে না। দুই পক্ষের কেউই সমঝোতায় যেতে যায় না। তারা চায় কেবল তাদেরটাই হোক। তৃতীয় পক্ষ ছাড়া এদের কখনো আলাপে বসানো যায় না।

এতে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হলো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমরা গত ৫২ বছরে কার্যকর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠিত পারিনি। যদিও আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য একটি কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।  এখন আবার সামনে নির্বাচন আসছে। দুই দলই নির্বাচনী সরকারব্যবস্থা নিয়ে যার যার অবস্থানে অনড়। বিরোধের জায়গা জিরো সাম গেমে পরিণত হয়েছে। এখন চিন্তা করা দরকার সার্বিক সমাধানের। যাতে সবার জন্য উইন উইন পরিস্থিতি তৈরি হয়। 

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমার মনে হয় বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্দেশনা পাঠাতে পারে। দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করুক কোন পদ্ধতিতে তারা নির্বাচন করবে। এরপর তা কমিশনকে জানাক, কমিশন সে অনুযায়ী নির্বাচন করবে। 

জোনায়েদ সাকী বলেন, বিরোধীদলের আন্দোলনে গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হলো একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রণয়ন করা। রাষ্ট্রব্যবস্থার গুণগত সংস্কার করে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে এগোচ্ছে। 

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ক্ষমতার ঝুঁকি হচ্ছে স্বৈরাচারী হওয়া। এজন্য ক্ষমতাকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মধ্যে রাখতে হয়। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হয়। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে কথা হয়। ৭০ অনুচ্ছেদ কোনো লিগ্যাল ব্যাপার নয়। সংসদের বাইরেও কোনো নেতা কি তার দলের সমালোচনা করতে পারে? আমরা কোনোদিন দেখিনি। তাই ৭০ অনুচ্ছেদ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। 

শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সমঝোতা যে চাই প্রথমে এটি নিয়ে সমঝোতা হওয়া দরকার। নির্বাচনীব্যবস্থা একদিনে ভাঙেনি, ধারাবাহিকভাবে ভেঙেছে। ত্রিদলীয় জোটের রূপরেখা তিন দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তাই মূল কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হওয়া। সবাইকে একমত হতে হবে যে আমরা প্রতিষ্ঠানে হাত দেবো না।  

মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, সব সমস্যার সমাধান একদিনে করা যাবে না। সব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে করতে গেলে জগাখিচুড়ি হয়ে যাবে।  আবার একটি দলের পক্ষেও সব সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে একসঙ্গে হয়ে সমাধান করতে হবে। আমরা একটি জায়গা থেকে শুরু করতে পারি, যেমন নির্বাচনী প্রক্রিয়া। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে কী কী করা যেতে পারে তার সুনর্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আলাপ শুরু করা যেতে পারে। কিছু বিষয়ে একমত হওয়া যে আমরা এই বিষয়গুলোতে হাত দেবো না। 

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন আরপিওর ৯১ ধারা সংশোধন করে নিজের ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে দিলো। কেন এটা করলো জানি না। আরেকটা বিষয় দেখা যায়, জাতীয় নির্বাচনের আগে মাশরুমের মতো রাজনৈতিক দল গজানো শুরু করে। জাতীয় সনদের মধ্যে পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট করার বিষয়টি যুক্ত করা যেতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো কী করতে পারবে, কী করতে পারবে না তা এ আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। 

শাহদীন মালিক বলনে, আগে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভালো করার কিছু উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এখন রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজেদের অর্থ বৃদ্ধি করা। বিভিন্ন দল বিভিন্ন দফা দিচ্ছে, কিন্তু জনগণকে ২০ টাকা দিয়ে চাল খাওয়ানোর কথা কেউ বলেনি। কেউ বলেনি বেকারের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করবে।

শেয়ার করুন