২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:৩০:২৫ পূর্বাহ্ন


দেশকে কোনাল
সাধারণ মানুষের জীবনে গানের প্রভাব অনেক
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
সাধারণ মানুষের জীবনে গানের প্রভাব অনেক সোমনূর মনির কোনাল


বাংলা গানের টানে কুয়েত ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন সংগীতশিল্পী সোমনূর মনির কোনাল। অংশ নিয়েছিলেন ২০০৯ সালে রিয়েলিটি শো ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ প্রতিযোগিতায়। বিচারক ও দর্শক রায়ে হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। তার পর থেকে নিয়মিত গাইছেন। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রিয়তমা’ সিনেমায় তাঁর গাওয়া ‘প্রিয়তমা’ গানটি শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আলমগীর কবির।  

প্রশ্ন: আপনার শৈশব কেটেছে কুয়েতে। সেখান থেকে দেশে ফেরার বিশেষ কোনো কারণ ছিল?

কোনাল: কুয়েতে ছোটবেলা থেকে গাইতাম। ওখানে এমন কোনো মঞ্চ নেই, যেখানে গাওয়া হয়নি। কিন্তু মনে মনে চাইছিলাম বাংলা গান নিয়ে নিজের দেশ বাংলাদেশে কিছু করতে। আর এ জন্যই কুয়েত ছেড়ে দেশে এসেছিলাম। শুধু দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সব ছেড়ে বাংলাদেশে, বাংলা গান নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। একটা সময় আমার দেশে ফেরার ব্যাপারটা সবাই বুঝতে পেরেছিল। এই দিকটা রিকগনাইজ করায় আমার কাছেও খুব ভালো লেগেছিল। যেদিন সবাই বুঝতে পেরেছিল, সেদিনই মনে হয়েছিল, কুয়েতের সবকিছু ছেড়ে বাংলাদেশে আসাটা স্বার্থক। কুয়েতে আমি লাক্সারি, কমফোর্ট জীবন যাপন করতাম। বাংলাদেশে এসে সব নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। যখন শুনি একজন ভক্ত তাঁর মেয়ের নাম রেখেছেন কোনাল, এক ভক্ত ডায়েরির শত শত পেজে আমার ছবি, কাজের খবর দিয়ে বাঁধাই করে রেখেছেন, অনেকেই জন্মদিনে বাসায় উপহার পাঠান-ভক্তদের এসব ভালোবাসা সব সময়ই মুগ্ধ করে।

প্রশ্ন: আপনার গাওয়া ‘প্রিয়তমা’ গানটি সবার মুখে মুখে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

কোনাল: মাঠঘাট, পাড়া-মহল্লা সব জায়গায় বাজছে গানটি। ভালোই লাগছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এটি নিয়ে কথা হচ্ছে। টিকটকেও মজেছেন প্রচুর মানুষ। হাজারো শ্রোতা এটি কভার করেছেন। শিল্পী জীবনে স্বার্থকতা আসলে এখানেই। গানের শিল্পী হিসেবে এটি আমাকে অন্য রকম ভালো লাগায় ভরিয়ে দিয়েছে। গানটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। নির্মাতা হিমেল আশরাফসহ প্রিয়তমা টিমকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। শাকিব খানের সঙ্গে ইধিকা পালের অসাধারণ রসায়ন গানটির মধ্যে ফুটে উঠেছে। বালাম ভাইও অসাধারণ গেয়েছেন। আমার গাওয়া অংশটি গেছে ইধিকার ঠোঁটে। তাঁর সুন্দর অভিব্যক্তির সঙ্গে ‘প্রিয়তমা’ মানিয়েছে বেশ।

প্রশ্ন: গানটি এত শ্রোতাপ্রিয়তা পাবে বিষয়টি কি ভাবনায় ছিল?

কোনাল: একদমই না। এটি ছিল ভাবনার বাইরে। কোনো গান গাওয়ার সময় বোঝা যায় না কোন গান কতটা দর্শক গ্রহণ করবেন। আমাদের কাছে অনেক গানই মনে হয় ‘ওয়াও’; পরবর্তী সময়ে দেখা যায় আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। এটি অডিও ও সিনেমার ক্ষেত্রে হয়েছে। যেমন ধরুন ‘আগুন লাগাইলো’ গানটি গাওয়ার সময় দ্বিধায় ছিলাম- এটি গাইব কিনা। সাধারণত এ ধরনের গান আমি করিনি কখনও। গানটি প্রকাশের পর অনেক সাড়া পেয়েছি। কোন গানটি শ্রোতা শুনবেন, তা আগে থেকে বলা মুশকিল।

প্রশ্ন: গান বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টাকে প্রাধান্য দেন?

কোনাল: সাধারণ মানুষের জীবনে গানের প্রভাব রয়েছে অনেক। তাই গান নিয়ে গবেষণা করছি। আমরা কিন্তু আমাদের মন খারাপ অথবা ভালো থাকলেও গান শুনি। আসলে গান মানুষের জীবনের সঙ্গে কতটুকু জড়িয়ে আছে সেটা জানতে চাই।

প্রশ্ন: ‘ভিউ’ কি ভালো গানের মানদ-?

কোনাল: ভিউ বাড়ে কখন? যখন মানুষ গানটি দেখতে থাকেন। একটি গান যখন খারাপ হয়, নির্দিষ্ট সময়ের পর এর ভিউ আর বাড়বে না। একটি গান যখন মানুষের মুখে মুখে ছড়ায়, তখন ভিউ আরও বাড়তে থাকে। প্রিয়তমার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। মুখে মুখে গান ছড়ানোকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি।

প্রশ্ন: শুনেছি বালামের সঙ্গে আরও নতুন গান করছেন?

কোনাল: হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। এই জুটির খুব প্রশংসা করছেন সবাই। অনেকেই চাইছেন বালাম ভাইয়ের সঙ্গে নতুন গান আসুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভক্তরা এরই মধ্যে আবদার করে বসেছেন। আমরাও চাইছি নতুন গান আসুক। দেখা যাক কী হয়।

প্রশ্ন: সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে ‘অন্ধার যাবে না’; কেমন হয়েছে নতুন গানটি? 

কোনাল: এখনও প্রিয়তমার ধুনে আছি। এই ধুন থেকে আমাকে অডিয়েন্স বের হতে দিচ্ছে না। এরপরও যতটুকু জেনেছি, লুৎফর হাসানের লেখা ও মার্সেলের সুর-সংগীতে গানটি শ্রোতারা বেশ শুনছেন। খ্যাপাটে প্রেমিক- প্রেমিকার একে অপরের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার বিষয় নিয়ে অভিনব এ গানটি আমার সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন মার্সেল। তরুণ নির্মাতা তাহসান আহমেদ রাসেল নির্মাণ করেছেন গানের মিউজিক ভিডিও। গাঙচিল ব্যানার থেকে এটি প্রকাশ হয়েছে।

প্রশ্ন: ঈদের অন্যান্য সিনেমার গান নিয়ে আপনার মতামত কী?

কোনাল: সব সিনেমার গানই ভালো হয়েছে। গত পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ‘লাল শাড়ি’ সিনেমার একটি গান প্রকাশ হয়েছিল। তখন থেকেই এটি শ্রেতারা বেশ পছন্দ করেছেন। পাশাপাশি সুড়ঙ্গ, প্রহেলিকা, ক্যাসিনোর গানও ছিল অসাধারণ। গান দিয়ে বাজিমাত করতে পেরেছে বলেই দর্শক ঈদের সিনেমাগুলো দেখেছেন।

প্রশ্ন: কাজের সমালোচনাকে কীভাবে দেখেন?

কোনাল: ঈর্ষান্বিত সমালোচনাকে আমি গ্রহণ করি না। ইগনোর করি। ঈর্ষান্বিত সমালোচনা নিয়ে পড়ে থাকলে সামনে এগিয়ে যাওয়া মুশকিল। যখন কেউ গঠনমূলক সমালোচনা করে বা ভুল ধরিয়ে দেয় তা গ্রহণ করি। সে আমার ভালো চাইছে বলে ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এখানে বেশির ভাগই ঈর্ষা থেকে সমালোচনা হয়। এটি বন্ধ হওয়া উচিত।

প্রশ্ন: গান নিয়ে ভবিষত পরিকল্পনা কি?

কোনাল: গান করে যাব যতদিন শ্রোতারা চাইবে। আমি শুধু গানকে ভালোবেসে কুয়েত থেকে চলে এসেছি। গানের জন্য আমার মধ্যে সবসময় এক ধরনের প্যাশন কাজ করে। আমি আজীবন গান করে যেতে চাই।

শেয়ার করুন