৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৬:৪৮:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


যুক্তরাষ্ট্র ভারতনীতিতেই অবিচল!
স্যাংশন কী আসবে, এলে সেটার অ্যাফেক্ট কী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
স্যাংশন কী আসবে, এলে সেটার অ্যাফেক্ট কী


স্যাংশন কবে, এলেই বা কী হবে? এটা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। আমেরিকা কেন দেবে স্যাংশন, ভোটে তো বাধা ছিল না! নির্ভয়ে ভোট দানের সুযোগ ছিল। ভোট হয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচায়। তাহলে এগুলো মেনে নেওয়া হবে না কোন যুক্তিতে। কেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে বন্ধুপ্রতিম দেশ? অথবা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ভারত নীতিতে অবিচল থাকবে? তাহলে এতো বৈঠক, আহ্বান, শীর্ষ পর্যায়ে বারবার মিটিং, আলোচনা কেন করলো মার্কিনিরা। এমন হাজারো কথা বাংলাদেশিদের মনে। এর উত্তর নেই কারোর কাছে। শুধু হতাশা নিয়ে চেয়ে থাকা। কিছু কী হবে, নাকি পূর্বধারার গতিতে চলবে বাংলাদেশ। 

আওয়ামী লীগবিরোধী যারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তারা আবারও নতুন করে আন্দোলন শুরুর চেষ্টা করছেন। যেমনটা করেছিলেন ২০১৪ ও ২০১৮ সনের পর। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন আর সে বক্তব্য নেই। গণসংযোগ হলেও সে লিফলেট কী হবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী পক্ষে যারা রয়েছেন, তারা কী বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারবেন? বা আন্দোলন জমিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কী ই বা করতে পারবে। ক্ষমতাসীনরা কী এগুলোর থোড়াই কেয়ার করে? দুশ্চিন্তার কালো মেঘ বিরোধী পক্ষের চিন্তার আকাশে। 

সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ 

নির্বাচন যা ই হলো-যথার্থভাবে শেষ করতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘এবার আর দিনের ভোট রাতে হয়েছে এটা বলার সুযোগ নেই।’ ভোট হয়েছে, সেটা কম আর বেশি ওটা মুখ্য নয়। ভোটের পর গেজেট প্রকাশ বিজয়ীদের। শপথ গ্রহণ। মন্ত্রিপরিষদ গঠনসহ সব কাজই শেষ করে এনেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার অপেক্ষা সংসদ অধিবেশনের। সে সময়ও খুব শিগগিরই ঘোষণা হয়ে যাবে। তাহলে আর বাকি থাকলো কী। আগামী ৫ বছরের জন্য ক্ষমতার মসনদে আওয়ামী লীগ, যা টানা চতুর্থ। 

নির্বাচন ভালো হয়েছে, ভালো হয়নি 

নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিশ্বের সর্বত্রই মতো বিরাজমান। বাংলাদেশে তো এটা চিরাচরিত স্বভাব। এবারও একটা পক্ষ বলছে। কিন্তু তাতে কোনো কিছু কী থেমে আছে। যেমনটা ২০১৮ সালে বলা হয়েছিল দিনের ভোট হয়েছে রাতে। তাতে কী ৫ বছর ক্ষমতা পরিচালনা করতে আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা হয়েছিল? মোটেও না। নির্বাচন কমিশন ৪১.৮ শতাংশ ভোটদানের রেশিও দেখিয়েছে ওটাই পারফেক্ট। সিইসি চ্যালেঞ্জও জানিয়েছেন কেউ প্রুফ দেখতে চাইলে এসে দেখতে পারবেন। কিন্তু কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। গোটা দুই আসন বাকি। ওগুলো যথাসময়ে হয়ে যাবে। তাহলে হাবিবুল আউয়াল সফল, ব্যর্থ বলার সুযোগ নেই। 

বিদেশিদের সাপোর্ট 

ভোট অনুষ্ঠানের (৭ জানুয়ারি) পরের দিনই ভোটকে সমার্থন করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানো শুরু করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এরপর এক এক করে চীন, রাশিয়াও ভোটকে সমর্থন দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ভোটকে অগ্রহণযোগ্য বলেছে। এর সঙ্গে ছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া কানাডাও কিছুটা কঠিন ভাষায় বলেছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের হাইকমিশনের বিবৃতি পক্ষপাত ও পূর্বপরিকল্পিত বলে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে এসবে খুব যে কিছু যায় আসবে ক্ষমতায় থাকা সরকারে তা ঠিক নয়। ফলে শুভেচ্ছা জানানোর ভিড়ে হয়তো ওই কয়েক বিরোধী বিবৃতি ফিকে হয়ে গেছে বৈকি!

স্যাংশন কী আসবে, এলে সেটার অ্যাফেক্ট কী 

চলমান প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী আদৌ স্যাংশন দেবে? দিলেও সেটার পরিমাণ কতটুকু। তার প্রভাব কতটা পড়বে এ সরকারের ওপর এ নিয়ে হাজারো বিশ্লেষণ।

বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় থাকলো বা থাকলো না তা নিয়ে আমেরিকার হয়তো মাথা ব্যাথা কম। আমেরিকার মূল লক্ষ্য তাদের নিজেদের স্বার্থ। ইন্দো-প্যাসিফিক জোনে তাদের স্বার্থ উদ্ধারে জটিলতা তৈরি হলে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তারা, নতুবা না। বাংলাদেশের বিষয়টা যদি ভারত গ্যারান্টার হয়, তাহলে আমেরিকার ঝামেলা পাকাতে কেন আসবে। ভারত তো এ অঞ্চলে আমেরিকার কৌশলগত পার্টনার। 

এরপরও বাইডেনের যে স্লোগান (গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা), যার জন্য ভিসানীতি প্রয়োগ, র‌্যাবের ওপর স্যাংশন। কিন্তু ব্যাক্তি বাইডেনের চেয়ে আমেরিকার সামষ্ঠিগত স্বার্থ বড়। হয়তো আমেরিকা ধীরে চলো নীতিতে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য ওই সময়টুকু পেলেই যথেষ্ট। বাকিটা তারা আস্থা অর্জন হয়তো করে দেখাবেন। 

এরপরও মুখ রক্ষার জন্য আমেরিকা হয়তো কিছু স্যাংশন দিলোই। কিন্তু সেটা কী খুব বড় বড় কিছু। হয়তো না। ছোট খাট দু’একটু স্যাংশন দিলে তা কাভার করে দেওয়ার যোগ্যতা বেশ ভালোই রয়েছে শেখ হাসিনার বা তার মন্ত্রিপরিষদের। ফলে এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে বারবার জানান দিচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

তাছাড়া বর্তমান সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার দুশ্চিন্তা রয়েছে। এর পাশাপাশি ইসরায়েলকে সাপোর্ট ও অস্ত্র সাপ্লাই ও বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে সেখানেও এক টেনশন বাইডেন প্রশাসনের। কারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হামলা মাত্রাতিরিক্ত। যার প্রভাব আমেরিকার পরবর্তী নির্বাচনের ওপর পড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা। ফলে আপনা ঘর সামলানোও তো জরুরি। এছাড়া চীন তাইওয়ান নিয়ে ঝামেলাও তাদের আরেক সমস্যা। এরপর নতুন করে বাংলাদেশ নিয়ে আরেক সমস্যা তৈরি করে ভারত, চীন, রাশিয়ার সঙ্গে শত্রুতা বাড়ানোর আরেকটা উইন্ডো এ মুহূর্তে খুলবেন কি না এ নিয়ে হয়তো মার্কিনিদের চিন্তা ঢুকে গেছে। তাছাড়া সর্বশেষ, ইয়েমেনে হুতিদের ওপর বিমান হামলাসহ মধ্যপ্রাচ্যে আরেক যুদ্ধ ও উত্তেজনা সৃষ্টি। যার সঙ্গে জড়িয়ে যেতে পারে ইরান। ফলে আমেরিকার মাথায় নানা দুশ্চিন্তা হয়তো এসে ভর করেছে। 

আওয়ামী লীগও দক্ষ হাতে চাল দিয়েছে এবার 

টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে কূটনৈতিক চালটা দারুণ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে যেভাবে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামায়াতকে আটকে ফেলে দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে শেখ হাসিনা, তাতে তার বৈশ্বিক রাজনীতির দক্ষতার প্রমাণ মিলেছে। বড় কথা, শেখ হাসিনার বিশ্ব রাজনীতিতে যে অ্যাডভান্স জরিপ সেটা খুবই পারফেক্ট। তিনি খুবই ভাল জানেন, একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে গেলে সেখান থেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যে মেকানিজম প্রয়োজন তা অত্যন্ত কঠিন। রাশিয়া যে বিবৃতি দিয়েছে সেখানে বিষয়টা স্পষ্ট। তারা বলেছে, কতিপয় বিরোধীদলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। শেখ হাসিনার সব নীতিকে তারা স্পষ্ট সাপোর্ট দিয়ে গেছে তার প্রমাণ ওই বিবৃতি। ভারত এ ব্যাপারে কিছু না বললেও ওই টোন একই। 

সর্বশেষ

আমেরিকা কী স্যাংশন দিলো না দিলো এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তাভাবনা এখন আর নেই জনমনে। বিগত সময়ে এমন বহু রটনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, আমেরিকা মুখে যাই বলুক না কেন, ভারতের নির্দেশনার বাইরে যেয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছু করার চিন্তা নেই মার্কিনিদের। কেননা বাংলাদেশ ইস্যুতে কয়েকবারই মার্কিন কর্মকর্তাগন হয় দিল্লিতে অথবা বাংলাদেশে যারা এসেছেন তারা দিল্লি হয়ে ঢাকা আসতে দেখা গেছে। ফলে আগে থেকেই অনুমেয়, ভারতের নীতিটাকে একেবারে উপেক্ষা করছে না মার্কিনিরা। যেহেতু ভারত নিরঙ্কুশ সাপোর্ট দিচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে, তাই এ অঞ্চলে প্রধান্য বিস্তারের স্বার্থেই মার্কিনিরা বড় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে হয়তো যাবে না। আর যদি শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটে তাহলে সে সময়ই দেখা যাবে। আপাতত ভারত নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র অবিচল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

শেয়ার করুন