৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৬:৪৭:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


চারিদিকে বাড়ছে হাহাকার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১১-২০২২
চারিদিকে বাড়ছে হাহাকার


মোক্তার হোসেন। বয়স ৫০। রিক্সা চালক। দীর্ঘদিন ধরেই থাকেন ভাড়া, গাজীপুর, চৌরাস্তা বর্ষা সিনেমা হলের পাশের এক বাড়িতে। ওই এলাকাতেই দীর্ঘদিন ধরে রিক্সা চালাতেন। জয়বেদপুর টাউনেও রিক্সা চালিয়েছেন। কিন্তু এখন চলে আসছেন তিনি উত্তরা। ৪ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন স্থান থেকে সেক্টরের মধ্যে যেকোনো স্থানেই নিয়ে যান যাত্রী। অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। ২০ টাকার ভাড়া। কমেও হলেও রাজি। অন্তত: যাত্রী পাওয়া যায় এখানে। কেন কমেও যেতে চান? ‘যাত্রি পাওন যায় তো। কিন্তু জয়দেবপুরে তো রিক্সা চালাই, যাত্রীই পাওন যায় না। মানুষ বাসে যায়। না হয় অটো। যারা আগে রিক্সায় উঠতেন, তারা এখন আর ওঠেন না।’ কেন এমনটা? দেশে সবকিছুর দাম বাড়তি। টাকায় কুলায় না। বাজারে গেলে মাথা খারাপ হয়ে যাবার মত অবস্থা। কী করবো বলেন। মানুষেরও তো একই অবস্থা। যারা রিক্সায় ওঠেন, তারা তো আর বড় লোক না। বাবুরা তো গাড়িতে চলেন।’

গোটা দেশেরই অনেকটাই একই চিত্র। মোক্তার আরো জানালেন, ‘কাম নাই। অনেক গার্মেন্টস বন্ধ করে দিছে। লাভ হয়না বলে। মানুষ বইয়া রইছে। রাজমিস্ত্রিদেরও কাম নাই। রড সিমেন্টের যে বাড়তি দাম। তাতে নাকি পোষায় না। এই জন্য মানুষ কাম করায় না। কিছু কিছু কাম হয়। যাদের আগের কেনা। তারাই কাম করায় টুকটাক। মানুষ কই যাইবো।’ 

একজন সাধারণ শ্রমিকের এমন মন্তব্য। এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যে যে চিত্রটা তিনি তুলে ধরেছেন, সেটা খেটে খাওয়া মানুষদের একটা চিত্র। এ তালিকায় এখন লাখ লাখ মানুষ। বাজারের জিনিষপত্রের দাম আকাশ ছোয়া। উত্তরা, উত্তরখানে একটা বিল্ডিংয়ের ৬ টা ফ্লাটের মালিক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুল ওয়ারা ভূইয়া। বাজারের কথা তুলে জানালেন, ‘কি বলবো। দুই কেজি আটার দাম ১৫০ টাকা। তেলের দাম তো সবার জানা! কোন জিনিষের দাম কম। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিষের দাম এতটা বেড়েছে যে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ সবার মুখেই এক বাক্য। বাজারে গেলে মাথা ঠিক থাকে না। আদা, রসুন, পিয়াজ, ডাল, মসল্লা, থেকে শুরু করে সবকিছুর দামই হু হু করে বাড়ছে। প্রসাধনী এমনকি জীবনরক্ষাকারী মেডিসিনের দামও বলা নেই কওয়া নেই বেড়েই চলছে। এক কথায় জীবন সংসার চালাতে যা যা প্রয়োজন সবকিছুর দাম তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে লাগামহীন। আজ একরকম। কাল আরেক। কই আমাদের আয় ইনকাম তো বাড়ছে না। অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামমুখী। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ, বাসা ভাড়া অন্যান্য খরচ দিয়ে পোষাতে পারছেন না। হিমশিম খাচ্ছেন। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম কমার কোনো লক্ষন নেই। সরকারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আশ্বাস নেই। কোনো আশারবাণী নেই। ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে যেসব পণ্য একটু ব্রান্ডের। যেমনটা স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই, তীর, ফ্রেস এধরনের। এসব পণ্যের মূল্য কোয়ালিটির দোহাই দিয়ে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি। সেটা চাল, আটা, ডাল, চিনি এমন সব রকমভেদে। এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যার মত। কোনো কোম্পানীর সঙ্গে কারোর সংযোগ নেই। ইচ্ছামত। অনেকেই নিজের খুশি মত বাড়াচ্ছেন- এই বলে যে অমুক কোম্পানীর চেয়ে আমাদের পণ্য উন্নতমানের। আমরা এতে এটা ব্যবহার করিনি। ওটা ব্যবহার করিনি। এটা বেশি সাস্থ্যসম্মত। 

মানুষ নিরূপায়। ঘুরে ফিরে এগুলোই কিনে নিতে হয়। প্রয়োজনের চেয়ে কম কিনছেন ৮০% এর ও বেশি মানুষ। কিন্তু তাতে তো পোষানো যায় না। কতটা কমানো যাবে। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বা পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছা থাকলেও কম ক্রয় সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। কিন্তু ক্রয়কারীর পকেটের অবস্থা খুবই নাজুক। বেতন বাড়ছে না। করোনা মহামারি থেকে চাকরিচ্যুতি বা রিসিডিউল করে সুযোগ- সুবিধা কমিয়ে বেতন কমিয়ে কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা। বা চাকুরে মানুষটি সংসারের খাতিরে চাকরিটা চালিয়ে যাওয়া। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাবসায়ীদেরও অবস্থা দিনদিন খারপের দিকে। বিদ্যুৎ, ঘরভাড়া, কর্মচারিদের বেতন দিয়ে দিন শেষে ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য। শুধু একটাই কথা, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ। এই কারণে সব বাড়ছে। এ যেন এক মুখস্ত কথা এখন সর্বত্র চলছে। বিশেষ করে অসাধুদের মুখে এই এক ধুয়া। শীতের শাকসব্জি। কিন্তু সেগুলোও আকাশ ছোয়া দাম। অন্যসব বারের মত এবার নয়। প্রচুর দাম। নাগালের বাইরে। এখানেও ইউক্রেনের যুদ্ধ। কারণ যে ট্রাকে শব্জি আসে। সেটা তো তেল পুড়িয়ে আসছে। তেলের দাম বেশি। অটোমেটিক সব্জিতেও তার ছোয়া। কাউকে কিছু বলার উপায় নেই।   

দোকানীরা প্রায়ই বলবেন, ‘এটা এই দামে, আগের রেটে দিলাম। কেনা ছিল। এটা সাপ্লাইয়াররা বলে গেছেন, আরো বাড়বে।’ এই যে আগাম হুমকি সেটাও দুশ্চিন্তার কারণ। এবং বাড়েও। বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দোকানীরাও ইচ্ছামত বিক্রি করেন। দিন শেষে সব কিছু গিয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের উপরই। 

বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা একটা কঠিন সময়ে। দরিদ্র বা হতদরিদ্ররা যে সে কাজ করে যা আনতে পারেন, সেটা দিয়ে অল্পসল্প ক্রয় করে দিন পার করে চলছেন। তাদের জন্য সরকারের বিভিন্ন সহায়তাও রয়েছে। কখনও কার্ডে ফ্রী পাচ্ছেন। কখনও কম পয়সায় টিসিবি’র পণ্য লাইন ধরে ক্রয় করে নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু মধ্যবিত্তদের জন্য নেই কার্ড। পারছেন না তারা লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবি পণ্য ক্রয় করতে। লজ্জা বলে তো একটা কথা রয়েছে। 

এরই মধ্যে আবারও বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা প্রায় কুড়ি শতাংশ। যেটা বলা হচ্ছে পাইকারি পর্যায়ে। পাইকারি যারা ক্রয় করেন। তারা তো নিজেরা নিয়ে খান না বা বিদেশে পাচারও করেন না। সেটা আবার সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেন। তাহলে তারাও তো আবার রেট বাড়াবেন। দিন শেষে সেই জনগণের ঘাড়ে যেয়ে ওই বাড়তি। আর এ বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি আবারও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উপর গিয়ে পড়বে। দাম বেড়ে যাবে। কারণ বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো কিছুর উৎপাদন সম্ভব না। মানুষের মধ্যে এখন হাহাকার। অসহায় হয়ে যাচ্ছে দিনান্তর।

শেয়ার করুন